‘পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করে কয়দিন টিকে থাকবেন’

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০১৮, ২১:১৭
প্রতীকী ছবি

বগুড়ায় ফাঁড়ির গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে একজনকে নির্যাতন করেছে পুলিশ। এঘটনায় নির্যাতনের শিকার মোস্তাফিজার রহমান কিরনের মা পারভীন আক্তার বাদী হয়ে গত ১ জুলাই মামলা করেছেন। মামলায় বগুড়া শহরের বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল ইসলামসহ পুলিশ ফাঁড়ির অন্যান্য সদস্যদের আসামি করা হয়।

এদিকে মামলা দায়েরের পর পরেই পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাদীকে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি পরে ওই মামলা প্রত্যারের জন্য বাদীর পক্ষ থেকে জোর করে আবেদনও করানো হয়েছে।

পুলিশ নির্যাতনের শিকার মোস্তাফিজার রহমান কিরন বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া বটতলার মৃত সাইফুল আলমের ছেলে।

এদিকে গত ১১ জুলাই সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন কিরন। ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল ইসলামের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে কিরন বলেন, ঈদের চারদিন পরে পুলিশ তাকে তার বাড়ি থেকে ধরে আনেন। পরে তাকে বনানী পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কাছ থেকে অস্ত্র চায় পুলিশ।

কিরন জানান, তার কাছে তো কোনো অস্ত্র থাকার কথা নয়। তখন বনানী ফাঁড়ির ইনচার্জ তারিকুল ইসলাম কিরনকে হাতকড়া অবস্থায় দুই পায়ের হাঁটুতে মারধর করেন। এতে তারা ডান হাঁটু মারাত্মকভাবে জখম হয়। এরপর তার পাগুলো ব্রেঞ্চের হাতলে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। তারিকুল আসরের নামাজে যাওয়ার আগে কিরনকে ফাঁড়ির গ্রিলের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেন। এ সময় তারা হতকড়া খুলে পুলিশের সদস্য কিরনকে গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। এরপর তারিকুল আবার এসে কিরনকে তারা শরীরের পেছন দিক থেকে নির্যাতন করেন। এক পর্যায়ে তরিকুলের কাছ থাকা লাঠি ভেঙে যায়।

ওই লাঠির আঘাতে কিরনের শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্ত বের হয়। এ সময় কিরনের মা তাকে জানালার সঙ্গে ঝুলতে দেখেন। কিরনকে নির্যাতনের কারণ জানতে চাইলে তারা মাকেও গালিগালাজ করে পুলিশ। পরে আরও নির্যাতন করা হয় কিরনকে। এরপর তাকে মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

জবানবন্দির এক পর্যায়ে আদালতকে তারা শরীরের আঘাতের চিহ্নগুলো দেখান কিরন। জবানবন্দীতে বিচারক উল্লেখ করেন, জখমির শরীর পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, তারা ডান বাহুতে, কুনইয়ে, কবজিতে, আঙ্গুলের উল্টোপিঠে ও নখে বিভিন্ন মাপের জখমের চিহ্ন রয়েছে। বাম বাহুতে, কনুইয়ে বিভিন্ন মাপের কালশিরা জখমের দাগ রয়েছে। কমরের ডান পাশে পিছনে প্রায় চার ইঞ্চি লম্বা আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বাম পায়ের গোড়ালি থেকে উরুর নিম্নাংশ পর্যন্ত বিভিন্ন মাপের প্রায় আট থেকে ১০টি কালশিরা জখমের দাগ রয়েছে। ডান পায়ের হাঁটুতে ব্যান্ডেজ এবং হাঁটুর নিতে পায়ের পেছনে ৩/৪টি জখমের চিহ্ন রয়েছে। দুই পায়ের পাতায় পানি জমেছে।’

কিরনের মা পারভীন আক্তার জেলা দায়রা ও জজ আদালতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইন -২০১৩ এর ৭ ধারার বিধান অনুসারে পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-০২পি/১৮) আদালত বাদীর অভিযোগ গ্রহণ করেন এবং ৪ জুলাই শুনানি শেষে আদেশে জেলা ও দায়রা জজ উল্লেখ করেন যে, শাস্তিযোগ্য অভিযোগের সত্যতা আছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। তাই অভিযোগের বিষয়ে একটি মামলা রজু করার এবং একজন সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত করার জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী থানায় মামলা রেকর্ড করা হয় এবং সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্তবর্তী অভিযোগ তদন্ত শুরু করেন।

কিরনের মা পারভীন বেগম ও চাচাতো বোন গুলশানারা বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করায় কিরনকে পুলিশ বলেছে তাকে শ্যুট করা হবে। এছাড়াও বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় দুইজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা তাদের বাসায় যান। পুলিশ কর্মকর্তা মামলা প্রত্যাহারের অনুরোধের পাশাপাশি বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করে কয়দিন টিকে থাকবেন। পুলিশের বিপক্ষে সাক্ষী কোথায় পাবেন? একপর্যায় পুলিশের ভাড়া করা সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে তাদেরকে আদালতে বাদীর আইনজীবীর চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে মামলা প্রত্যাহারের আবেদনে স্বাক্ষর করেন।

পুলিশের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তদন্ত করছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী। তিনি মামলা প্রত্যহারের বিষয়ে বলেন, বাদী সইচ্ছায় মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। তাকে কোনো চাপ দেয়া হয়নি।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :