আবার দণ্ডিত খালেদা, এবার কারাদণ্ড সাত বছরের

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৫৬ | প্রকাশিত : ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ১২:১৭

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। সঙ্গে জরিমানা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। টাকা না দিলে আরও ছয় মাস কারাগারে থাকতে হবে তাকে। সেই সঙ্গে কাকরাইলের যে জমি নিয়ে মামলা হয়েছে, সেটি বাজেয়াপ্তের আদেশ এসেছে।

এই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে আসামি থাকা বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, তার সাবেক এপিএস জিয়াউল হক মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সাবেক এপিএস মুনিরুল ইসলাম খানের একই সাজা হয়েছে।

ঢাকার অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আখতারুজ্জামান সোমবার এই আদেশ দেন।

এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি নেত্রীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছিল। তার পুত্র তারেক রহমানসহ অপর আসামিদের কারাদণ্ড হয় ১০ বছরের।

রায় ঘোষণার পর দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জানিয়েছেন, বিচারক বলেছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে খালেদা জিয়া ক্ষমতা অপব্যবহারের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সেটা কখনও কাম্য হতে পারে না। কেউ যেন এমনটা আর না করে সে জন্য আসামিদের কঠোর শাস্তি হওয়া আবশ্যক।

কাজল বলেন, এই মামলাটি পরিচালনায় বারবার বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত রায় এসেছে বলে তারা সন্তুষ্ট।

দ্বিতীয় যে মামলাটিতে খালেদা জিয়া দণ্ডিত হয়েছেন, সেখানে তার আইনজীবীরা আদালতে বক্তব্য দেননি। বিএনপি নেত্রী কারাগারে আসবেন না জানিয়ে দেয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীদের আবেদনের পর খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই বিচার শেষ করে রায়ের আদেশ দেন বিচারক।

অনুপস্থিতিতে রায় দেয়ার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার পক্ষে উচ্চ আদালতেও আবেদন করা হয়। তবে রায় ঘোষণার দিন সকালে আপিল বিভাগে সে আবেদন নাকচ করে দেয়া হয়। এরপর ঘোষণা করা হয় রায়।

রায় ঘোষণার সময়ও আদালতে ছিলেন না খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ফলে আদালতের আদেশ নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়াও আসেনি তাদের পক্ষ থেকে।

আর বিএনপি নেত্রীও রায় ঘোষণার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। গত ৬ অক্টোবর ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে এখানে স্থানান্তর করা হয়।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের এক সপ্তাহ আগে খালেদা জিয়া এই চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আদালতে যান। সেদিন আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন চলছিল। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করা ছিল।

কিন্তু অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপি নেত্রী আর আদালতে যাননি। আর দুদকের আবেদনে ৫ সেপ্টেম্বর কারাগারেই বসে আদালত।

সেদিন খালেদা জিয়া কারাগারের আদালতে হাজির হয়ে বলেন, তিনি অসুস্থ এবং আর আদালতে আসতে পারবেন না। তাকে যা খুশি রায় দেয়া হোক।

এরপর খালেদা জিয়া বা তার আইনজীবীরা আর আদালতে যাননি। আর তাদের অনুপস্থিতিতেই ১৬ অক্টোবর দেয়া হয় রায়ের তারিখ।

রায় ঘোষণার দিন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাকিয়েছিলেন উচ্চ আদালতের দিকে। কারণ, এই রায় ঘোষণা ঠেকাতে সেখানেও একটি আবেদন ছিল। কিন্তু সে আবেদনও নাকচ করে দেয়া হয়।

ওদিকে খালেদা জিয়া আদালতে না থাকলেও সকাল থেকেই ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সাধারণ মানুষের প্রবেশে আরোপ করা হয় নিয়ন্ত্রণ। তল্লাশি ছাড়া কাউকে ওই পথ ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি। পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা অবস্থান নিয়ে থাকেন সেখানে।

চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় যে অভিযোগ

ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। ২০১২ সালে আদালতে দেয়া হয় অভিযোগপত্র। এর দুই বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমানের নামে তাঁর তৎকালীন সেনানিবাসের বাড়ির ঠিকানায় নামসর্বস্ব জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করেন। খালেদা জিয়া, তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান, ওই ট্রাস্টের ট্রাস্টি হয়েও চ্যারিটেবল কাজে কোনো অর্থ ব্যয় করেননি। বরং নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিগত সময়ে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে অবৈধ প্রভাব খাঁটিয়ে অবৈধ অর্থ সংগ্রহ করেন। অর্থ পরিচালনায় দায়িত্বরত থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ব্যয় করেন তাঁর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী।

হারিছের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) জিয়াউল ইসলাম এবং সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস) মনিরুল ইসলাম পরস্পস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারার অপরাধ করেছেন।

২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালের ক্ষমতায় থাকার সময় ৬ শহীদ মইনুল রোডের বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামে গুলশান সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করেন খালেদা জিয়া। চ্যারিটেবল কাজের জন্য ট্রাস্ট করেছেন তা উল্লেখ আছে। কিন্তু চ্যারিটেবল কাজে কোনো টাকা খরচ করেননি।

খালেদা জিয়া ট্রাস্টের কাজে তাঁর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের এপিএস জিয়াউল ও অন্যান্যদের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সোনালী ব্যাংক শাখার হিসাবে (অ্যাকাউন্টে) ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে টাকা সংগ্রহ করে লেনদেন করেন। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে টাকা গ্রহণ ও খরচ সংক্রান্ত প্রতিটি পদক্ষেপে স্বচ্ছতার অভাব দেখা গেছে।

খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে ক্ষমতার অবৈধ প্রভাব খাঁটিয়ে ১ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জমা করেন বলেও অভিযোগপত্র বলা হয়েছে। ওই টাকার বৈধ উৎসের কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ওই হিসাবে লেনদেন হলেও প্রধানমন্ত্রী পদ ছেড়ে যাওয়ার পর ওই হিসাবে আর কোনো লেনদেন হয়নি।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, বিএনপির তহবিল (ফান্ড) থেকে ৬ কোটি ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ টাকা পাওয়ার পরও খালেদা জিয়া জেনেশুনে ৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক দেন। দলের ফান্ডের অতিরিক্ত টাকা অবৈধভাবে সংগৃহীত হিসাবে জমা ছিল তা তিনি জানতেন। ওই টাকার উৎস অবৈধ। সে কারণে মেট্রোমেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপারের ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকাকে বৈধ করার অপচেষ্টা করেছেন।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা আসামিরা অবৈধভাবে সংগ্রহ করেন এবং খরচ করেন।

ঢাকাটাইমস/২৯অক্টোবর/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালনে বাধা নেই: আপিল বিভাগ

নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা: আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন

যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের সাম্রাজ্যের অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট 

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায় আজ

আফতাবনগরে পশুর হাট বসানোয় হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা

তিন মাসের ব্যবধানে আরেক মামলায় খালাস পেলেন গোল্ডেন মনির

আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যামামলা: আপিল শুনানি দ্রুত করতে আসামির আবেদন

পরিবেশ রক্ষায় ঢাকাসহ সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট

এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকাজ বন্ধ ঘোষণা

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী আর নেই

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :