চুয়াডাঙ্গা-১

আ.লীগে রেকর্ড ভাঙার অপেক্ষা, অপ্রস্তুত বিএনপি

আরিফুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা
 | প্রকাশিত : ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৯:০২

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো বাকী আছে প্রায় দেড় বছর। তারপরও সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গায় আগাম নির্বাচনী হাওয়া ক্রমেই জমে উঠতে শুরু করেছে। জেলা শহর তো বটেই, জেলার প্রত্যান্ত গ্রাম-গঞ্জের বাজারে চায়ের দোকানে দোকনে চলছে প্রার্থী নিয়ে সরব আলোচনা। কে কোন দল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন এমন আলোচনার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের পেক্ষাপট, বর্তমান সরকারের অধিনে না কি সহায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন? এমন জনগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও প্রাধন্য পাচ্ছে চায়ের আড্ডাগুলোতে। আর এই আড্ডাকে প্রাণবন্ত করে তুলছে সরকারী দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আগাম মাঠে নেমে পড়া।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে অনেকটা আগে ভাগেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মিদের নিজেদের পক্ষে ভেড়াতে চলছে রীতিমতি প্রতিযোগিতা। বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি জেলা শহর থেকে শুরু করে তূর্ণমূলে কোন্দল উপদলের কারণে তেমন সুবিধা করতে পারছেন না। অনেকে আবার ইচ্ছা থাকা শর্তেও হামলা মামলার কারণে আগাম প্রচারনায় নামছেন না। তবে, সরকার সমর্থিত অনেকে আগে ভাগেই মাঠ দখল করতে টাকার রাজনীতি শুরু করেছেন।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জাতীয় সংসদের হুইপ সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিজ হাতের মুঠোতে রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। বিগত ৫টি সংসদীয় নির্বাচনে তিনি দলের একক প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। মনোনয়নও পেয়েছেন তিনিই।

দীর্ঘ তিন যুগ পর সেই পরিস্থিতিতে ভাটা পড়েছে। দশম জাতীয় সংসদের পর বিএনপির মতো মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের এই দলেও কোন্দল বাসা বেঁেধছে অনেকটা বড় পরিসরে। আর গত প্রায় আট বছরে সেই কোন্দলের ডালপালা ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলা ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়েও। সেই হিসাবে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীর দাবিদার এবার থাকছেন না এমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে তার পক্ষের অনুসারীদের দাবি, চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী লীগের ইতিহাসে সেলুন জোয়ার্দ্দারের কোনো বিকল্প নেই। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে তিনিই পাবেন আগামী সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন।

আওয়ামী লীগের রাজনীতির কোন্দলের সুযোগেই বর্তমান সংসদ সদস্যর পাশাপাশি মাঠে নেমেছেন সরকারি দলের প্রায় আধা ডজন নেতা। তবে, সরকারি দলের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় না নামলেও তার পক্ষে বিগত দিনের নানা উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন তার কর্মী-সমর্থকরা। তবে এই দলের অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠে নেমে পড়েছেন অনেকটা আগেভাগেই।

তারা তূর্ণমূলে উন্নয়নসহ নানা ফিরিস্তি তুলে ধরে সাধারণ ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিজের পক্ষে ভেড়াতে চালিয়ে যাচ্ছেন নানা কার্যক্রম। তাদের উদ্দেশ্য বেশি কর্মী সংগ্রহ করে নিজের অবস্থান সূদৃঢ় ও মনোনয়ন লাভের সহায়ক হতে পারবেন।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন, (চুয়াডাঙ্গা সদর-আলমডাঙ্গা) বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সামসুল আবেদীন খোকন, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র উদীয়মান রাজনৈতিক ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের দফতর সম্পাদক হারদী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম পানু, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ডা. মাহবুব হোসেন মেহেদী ও আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু।

সরকারি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়লেও ভিন্ন চিত্র অন্য প্রধান দল বিএনপির ক্ষেত্রে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনেকটা হ-য-ব-র-ল বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম। নিজেদের মধ্যে কোন্দল, উপদলের কারণে বিপর্যস্ত তারা। দলের কোন্দল মেটানোই তাদের জন্য অনেকটা বড় চ্যালেঞ্জ। বিগত আট বছরে বিএনপির সাংগাঠনিক কোনো কার্যক্রম ঠিকমতো পরিচালিত না হওয়ারও অভিযোগ সাধারণ নেতাকর্মীদের। আর এই নিয়ে সাধারণ নেতাকর্মীদের ক্ষোভেরও অন্ত নেই।

দলীয় সূত্র জানায়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরই চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির রাজনীতি চারটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েক দফা উদ্যোগের পরও আট বছরে এর থেকে উত্তরণ ঘটেনি বৃহৎ এই দলটির। এর পাশাপাশি সরকারি দলের হামলা-মামলা তো আছেই। আর এ কারণে একসময়ের বিএনপির দুর্গ খ্যাত চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থীর মাঠপর্যায়ে তেমন নির্বাচনী তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে তাদের পক্ষে নির্বাচনী ব্যানার-ফেস্টুন নির্বাচনী এলাকায় শোভা পাচ্ছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দলের প্রায় ৭ জন প্রার্থীর নাম আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি শামসুজ্জামান দুদু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, যুগ্ম আহ্বায়ক ও শামসুজ্জামান দুদুর ভাই ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, পিলখানা বিডিআর বিদ্রোহের সময় প্রাণে বেঁচে যাওয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নির্বাহী সদস্য লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামান, আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র মীর মহিউদ্দিন, বিএনপির নেতা শহিদুল কাউনাইন টিলু ও জেলা বিএনপির সদস্য শরিফুজ্জামান শরীফ।

এ ছাড়া মহাজোটের অন্যতম শরিক জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন, সাংগাঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দুলু, জাতীয় পাটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমান্ডার শহিদুর রহমান চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

তবে, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াত ইসলমী নির্বাচনী কর্মকা-কে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে তাদের গ্রাম কমিটিগুলো সক্রিয় করার কাজ শুরু করেছে। এর বাইরে তারা দলের একক প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুল খালেককে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বলে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।

(ঢাকাটাইমস/২সেপ্টেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

উপজেলা নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-আ.লীগে অস্বস্তি, মাঠপর্যায়ে কেন উপেক্ষিত দলীয় সিদ্ধান্ত

প্রয়াত নেতা পিন্টুর কবর জিয়ারতে বিএনপি নেতারা

ট্রেনভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে কমলাপুরে সিপিবির বিক্ষোভ

জনগণের কাছে হেরে যাওয়ার আগে ক্ষমতা ছেড়ে দিন: ফারুক

দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে মীরজাফর হিসেবে চিনবে: রিজভী

শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুর কাছে গণমাধ্যম বারবার আত্মসমর্পন করেছে: বাংলাদেশ ন্যাপ

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শনিবার

কে এই মামুনুল হক? যেভাবে পান ব্যাপক পরিচিতি

হেফাজতের সাবেক নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত

উপজেলা নির্বাচন: বহিষ্কার আমলে নিচ্ছেন না বিএনপি নেতারা, প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে তৃণমূল

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :