মেহেরপুরের দুই আশ্রয়ণে নেই ঈদ আনন্দ

মাহাবুব আলম, মেহেরপুর
 | প্রকাশিত : ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৮:১৪

মুসলিম ধর্মালম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহাকে ঘিরে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মাঝে এখন সাজসাজ রব। তবে মেহেরপুরের তেরঘরিয়া ও রঘুনাথপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের শিশুদের মধ্যে সে উৎসবের কোন আমেজ নেই। আর্থিক দৈন্যতার কারণে শিশুসহ পরিবারের ব্যয়ভার বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রকল্পের অধিবাসীরা। ফলে প্রতি বছরই কমে আসছে তাদের ঈদ উৎসবের আমেজ।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে পাশের গ্রামগুলোতে প্রতিযোগিতা চলছে কারা কত বেশি দামে গরু-ছাগল কিনে কোরবানি করতে পারে। ৫০ হাজার, এক লাখ থেকে শুরু করে দুই লাখ, চার লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনে কোরবানি করার প্রত্যাশা করছেন ধনাঢ্যরা। অথচ আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিবাসীদের শিশুদের অন্য গ্রামের মানুষের কোরবানি করার প্রতি চেয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোন গত্যান্তর নেই। এমন পরিস্থিতিতে উচ্চবিত্তদের সাথে তাল মেলাতে না পেরে এ প্রকল্পের শিশুদের মাঝে চরম দুঃখ বিরাজ করছে।

ভূমিহীন পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সালে মেহেরপুর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বে রঘুনাথপুর ও ৬ কিলোমিটার উত্তরে তেরঘরিয়া খড়ের মাঠের খাস জমির উপর গড়ে তোলা হয় আশ্রয়ন প্রকল্প। রঘুনাথপুরে ১৬০ ও তেরঘরিয়ায় ১শ ভূমিহীন পরিবারের সাথে ঠাঁই হয় ওই পরিবারের শিশুদেরও। বর্তমানে দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিনে ২৬০ পরিবারের সাথে বসবাস করছে অন্তত ২৯০ জন শিশু। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আশ্রয়ণ প্রকল্প দুটি। টিন শেড দিয়ে নির্মিত এক একটি ব্যারাকে বাস করে ১০টি পরিবার। এক একটি পরিবারকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র একটি করে কক্ষ। প্রতিটি পরিবারকে (বাড়ি ও আবাদি) জমি দেয়া হয়েছে ৩০ শতাংশ করে। একটি করে বরাদ্দকৃত কক্ষে চরম মানবেতর অবস্থায় স্বজনদের নিয়ে বসবাস করছে প্রকল্পের অধিবাসীরা। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার কোন সুবিধা না থাকায় শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ছেলে-মেয়েরা। নিরাপত্তার অভাবে দূরের স্কুলে ছেলে-মেয়েদের পাঠাতে চাই না অভিভাবকেরা। অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হচ্ছেন মেয়েদের বাবা-মা। বিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য পোশাক কিনে দেয়ার সাধ্যও নেই অনেকের। ফলে ঈদুল আজহা উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের শিশুদের মাঝে উৎসবের আমেজ নেই।

প্রকল্পের অধিবাসী লাবনি খাতুন জানান, সরকার আমাদের একটা করে ঘর দিয়েছে। ঘর দিয়ে পানি পড়ে, তাতে যেমন আমাদের কষ্ট গুরু বাছুরের কষ্ট। ঈদ এলে ছেলে-মেয়েদের কোন আবদারই পুরণ করতে পারি না।

ইউনুস আলি জানান, ঈদ এলেই ছেলে-মেয়েরা ভাল খাবার ও ভাল পোশাকের জন্য কান্নাকাটি করে। ছয় সদস্যের পরিবারের প্রতিদিনের খাবারই ঠিকমত যোগাড় করতে পারি না। তাদের ঈদ আনন্দর আবদার মিটাব কিভাবে? আমাদের কেউ কোন খোঁজ-খবর নেয় না। কষ্টে দিন যাচ্ছে।

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া সুখিয়ারা খাতুন জানায়, এখন বর্ষার সময়। রাত্রে বৃষ্টি হলে ঘরে ঘুমাতে পারি না, বৃষ্টি পড়ে। অনান্য গ্রামে ঈদের আনন্দ হলেও আমাদের অাশ্রয়ণ প্রকল্পে কোন আনন্দ হয় না। পরিবারে খুব অভাব, তাই আমাদের ঈদের কোন আনন্দ নেই।

শিশু সোহেল রানা জানায়, আমাদের গ্রামে একটি প্রাইমারি স্কুল আছে সেখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। এখন পড়াশুনা বন্ধ। কারণ আশ্রয়ণ থেকে সব চাইতে নিকটের বিদ্যালয়টি চার কিলোমিটার দূরে। নেই সাইকেল, হেঁটে সেখানে গিয়ে পড়াশোনা করা সম্ভব না, তাই বসে আছি। বাবার সাথে মাঠে ঘাটে কাজ করি। আমরা যেমন গরিব মানুষ আমাদের ঈদও গরিব। ঈদের দিন ১৩০ টাকা কেজি দরের একটি ব্রয়লার মুরগি কিনে ঈদ উদযাপন করি। গরু ছাগলের মাংস কতদিন খায়নি, তেমন মনে পড়ে না। আমার মত আশ্রয়নের সকল শিশুরই একই অবস্থা।

তেরঘরিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে একমাত্র কলেজছাত্র ফিরোজ হোসেন জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পে পৌনে দুই শতাধিক ছেলে-মেয়ে আছে। যারা উচ্চ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। সরকারসহ সমাজের সহৃদয়বান ব্যক্তিদের নিকট আবেদন- আশ্রয়ণ প্রকল্পে যেন উচ্চ শিক্ষার সুব্যবস্থা করা হয়।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প দুটিতে বেশকিছু ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে আছে। প্রতি বছরের ঈদের সময়ে জেলা প্রশাসন পক্ষে থেকে তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে। এবার ঈদেও আশ্রয়ণ প্রকল্প দুটিতে দুই টন করে চার টন খাদ্য বরাদ্দ দিয়েছি।

(ঢাকাটাইমস/২০আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :