‘স্বপ্নের জীবনে’ ফরিদা-আকলিমারা

কাজী রফিকুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:১৬

নদী কেড়ে নিয়েছিল জীবনের সব স্বপ্ন। বাড়ি, জমি সব হারিয়ে আশ্রয় জুটেছিল ঢাকায়, ফুটওভার ব্রিজের নিচে। কিন্তু জীবন পাল্টাতে কতক্ষণ লাগে? হঠাৎ যেমন হারিয়েছিল সব, তেমনি সব ফিরেও এসেছে অপ্রত্যাশিতভাবে।

ফরিদা, আনসার আলী, আকলিমা, ফরিদুলদের কথা মনে আছে? হ্যাঁ, রাজধানীর কলাবাগান ফুটওভার ব্রিজের নিচে অস্থায়ী ঘর বেঁধেছিল তারা।

চলতি বছরের ৬ জুলাই সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায় ১১ বছরের আকলিমা অসুস্থ মায়ের মাথায় পানি ঢালছে।

ঘটনাটি ছিল সোবাহানবাগ মসজিদের কিছুটা সামনে। ভিডিওটি ফেসবুকে আসার পর জানা যায় তাদের দুর্দশা। নদী ভাঙা পরিবারটি ঢাকায় এসেছিল সর্বস্ব হারিয়ে। অসুস্থ মা ফরিদার চিকিৎসার উপায় ছিল না। জ্বরে আক্রান্ত মায়ের সেবায় মাথায় পানি ঢালছিল মেয়েটি। আর এই ভিডিও পাল্টে দিল তাদের জীবন।

তাদের বাড়ি ছিল কুড়িগ্রাম। সেই জেলার প্রশাসক সুলতানা পারভীন ছুটে এলেন ঢাকায়, জানালেন ফরিদাদের বাড়ি দেবেন, করে দেবেন, বেঁচে থাকার জীবিকার ব্যবস্থা।

কথা রেখেছেন এই সরকারি কর্মকর্তা। রাজধানীর ফুটওভার ব্রিজের নিচে থাকা ফরিদা-আনসার আলীরা এখন ঘুমায় নিজের ঘরে। আছে পুকুর, চাষ হয় মাছের। দোকানের পণ্য বিক্রি থেকে আয়ের টাকায় চলবে সংসার।

জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ওরা ভিক্ষা করত, এখন স্বাবলম্বী অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের থাকার ঘর করে দেয়া হয়েছে। বাসার সামনের পুকুরে সমিতি করে মাছ চাষ হয়। অসুস্থ আনসার আলীর স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে একটি দোকান করে দেয়া হয়েছে। মনিহারী পণ্য দিয়ে সেটি দ্রুত চালু করা হবে।’

‘বাচ্চা দুটি এখন স্কুলে যায়। তারা এখনও আয়ের উৎস তৈরি করতে পারেনি। তাই তাদের খাবার এবং চিকিৎসাও দিয়ে যাচ্ছি।’

অর্থাৎ ১১ বছরের আকলিমা আর রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় না। সে এখন স্কুলে যায়। বোনের হাতে হাত ধরে স্কুলে যায় চার বছর বয়সী ফরিদুল।

ফরিদা পরিবারের জীবন পাল্টে দেয়ার ঘটনায় অবদান আছে পারবেস হাসান নাম এক পরোপকারী যুবকের। তিনিই এই ভিডিওটি তুলে ফেসবুকে দেন, পাশাপাশি ফরিদাকে নিয়ে যান হাসপাতালে, ব্যবস্থা করেন ওষুধের টাকার।

১৩ জুলাই পরিবারটি পৌঁছে কুড়িগ্রামে। ২০১৬ সালে নদী ভাঙনে সর্বশান্ত হয়ে ঢাকায় পাড়ি জমানো চার সদস্যের পরিবারটি আর কখনও কুড়িগ্রামে ফিরতে পারবে, সেটা তারা ভাবতেও পারেনি এর আগে।

কতটা ভাল আছে তারা? পরিবারটিকে দেখতে বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছেন পারবেস। ঢাকাটাইমসকে সে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। বলেন, ‘আমি তাদের দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম তাদের ভেতর দারুণ একটা পরিবর্তন এসেছে। সুন্দর একটু জীবন উপভোগ করছে। যেখানে দারিদ্র্যের ছাপ নেই, নেই হাহাকার। যেখানে আছে মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’

‘ফরিদুর, আকলিমা সবাই নিয়মিত স্কুলে যায়। তাদের পুকুরে মাছ চাষ হবে, তারা আশেপাশের পরিবারের সাথে দারুণভাবে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে।’

অনলাইন মার্কেটিংয়ে এই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করা পারবেস হাসান সব সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। চেষ্টা করেন কিছু করতে। নিজের সামর্থ্য বেশি নয় বলে এর কাছ থেকে, ওর কাছ থেকে টাকা যোগাড় করেন।

পারবেস বলেন, ‘এর জন্য আমার অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। প্রায় একটা সপ্তাহ ঠিক ভাবে ঘুম হয়নি। মাথায় একটা চিন্তা ছিল। কীভাবে তাদের এই রাস্তা থেকে একেবারে উঠিয়ে জীবিকার ব্যবস্থা করা যায়।’

‘পেছনে অনেকে অনেক কথাও বলেছেন। কান দেইনি। ভালো কাজে পিছুটান দেয়ার লোকের সংখ্যা একেবারে কম না। বাঁধা থাকবেই, তাই বলে যদি থেমে যেতাম, তাহলে আজ হয়ত তারা এই সুন্দর জীবনটা নাও পেতে পারত। হয়ত অন্যের হাত ধরে পেত, হয়ত অনেক সময় পরে পেত।’

তরুণদের উদ্দেশ্যে পারবেস বলেন, ‘জীবনে চাপ সামলে নেয়ার একটা সময় থাকে। তরুণরা সেটা ভালোই পারে। মানুষের জন্য যদি কিছু করতে না পারলাম, তাহলে তারুণ্য বৃথা। আমাদের দেশের তরুণরা চাইলে অনেক কিছু পারে। আমাদের ইতিহাস তার সাক্ষী। আমি আশা করি, আমাদের তরুণ সমাজ সর্বদা মানুষের কল্যাণে কাজ করবে।’

‘আমাদের সমাজের অনেক বিত্তবান আছেন, যারা মানুষের জন্য অনেক কিছু করেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি আমাদের যে দায়বদ্ধতা এটা সবাইকে বুঝতে হবে। তাহলেই এদেশে মানুষ আর রাস্তায় থাকবে না। তাদের একটা ঠিকানা তৈরি হবে।’

ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/কারই/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :