‘লোভাছড়া’ সিলেটের সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট

সুয়েব আহমদ, সিলেট
 | প্রকাশিত : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ২০:১৩

সিলেটের জাফলং, বিছনাকান্দি, লালাখাল রাতারগুলের মতো আরেকটি সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট হয়ে উঠছে কানাইঘাট উপজেলার মূলাগুলের লোভাছড়া। নদী-নালা, খালবিল উঁচু নীচু টিলা বেষ্টিত জনপদটি দেখলে মনে হয় যেন একটি দ্বীপ।

পাথর কোয়ারী বালুমহাল সমৃদ্ধ কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী জনপদটির উত্তর পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে লোভা নদী দক্ষিণ-পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুরমা নদী। এছাড়াও দেছই, কালি জুড়ি নুন নদীসহ অসংখ্য ছোট ছোট নদী-নালা এলাকার বুক চিরে বয়ে গেছে। লোভা নদীর উপর কোনো ব্রিজ না থাকায় উপজেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগও নেই। নদীপথে কাঠের নৌকায় করে যেতে হয় লোভাছড়ায়।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কোল ঘেঁষে বাংলাদেশের সীমানার ভিতরে সবুজে মোড়া উঁচু টিলার একপাশে পাহাড়, অন্যপাশে স্বচ্ছ জলের নদী। উঁচু নীচু টিলার উপর দাঁড়ালেই হাতছানি দেয় মেঘ-পাহাড়। এমন সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান হলো লোভাছড়া।

সম্ভাবনাময়ী পর্যটন স্পটটি দেখতে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ঝুলন্ত ব্রিজ, লোভাছড়া চা-বাগান, বাংলো ঘর ভারত থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলরাশির লোভা নদী হলো পর্যটকদের মূল আকর্ষণ।

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর মূলাগুলে রয়েছে পাথর কোয়ারী, বালুমহাল, জলমহাল, প্রায় তিনশত বছরের পুরোনো জনবসতি, গারো উপজাতিদের টিলা, ছোট-বড় পাহাড়, উঁচু-নিচু টিলা, পাহাড়ি ঝর্ণা, ঝর্ণার উপর ঝুলন্ত সেতু, চা-বাগান, দুই পাহাড়ের মাঝে আঁকাবাঁকা নুড়ি পাথরের রাস্তা, প্রায় দু বছরের পুরোনো বটবৃক্ষ, সামাজিক বনায়নের সারি সারি গাছ পাহাড়ি ছোট ছোট নদীগুলো এলাকাকে পর্যটন শিল্পের উপযোগী করে গড়ে তুলেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই পর্যটকরা এখানে ছুটে আসছেন। পর্যটকদের কাছে লোভাছড়া প্রকৃতিররূপ কন্যাবলে পরিচিত।

উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটক এখানকার অধিবাসীরা শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে বর্ষায় নৌকায় চলাচল করেন বলে জানা গেছে। মূলাগুল অঞ্চলের মূল পর্যটন স্পট কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্ষায় নৌকায় আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে মোটরসাইকেলে যাতায়াত করতে হয়। মূল স্পটে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। সড়কপথে যানবাহন নিয়ে সরাসরি স্পটে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এসব প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও প্রকৃতিপ্রেমী, ভ্রমণ পিপাসু লোকজন প্রকৃতির একটু অনাবিল আনন্দ সুখ পেতে ছুটে আসে মূলাগুল পর্যটন এলাকায়। কিন্তু সেখানে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে আজও গড়ে উঠেনি কোনো হোটেল, মোটেল কিংবা কটেজ।

১নং লক্ষ্মী প্রসাদ ইউপি চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে জানান, 'লোভাছড়া ' পর্যটন স্পটের সঙ্গে উপজেলা সদরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে লোভা নদীর উপর একটি ব্রিজ স্থাপন প্রয়োজন। এই পর্যটন স্পটকে দেশব্যাপী পর্যটকদের কাছে পৌঁছে দিতে সরকারি উদ্যোগে প্রচার-প্রচারণারও প্রয়োজন রয়েছে।

লেখক গবেষক এহসানুল হক জসীম বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধারলোভাছড়াইতোমধ্যে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় এবং নৌপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিক যথেষ্ট না হওয়ায় পর্যটকদের অনেকে এখানে আসতে পারে না। শুধু লোভাছড়া নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিকশিত হলে এবং পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেওয়া হলে কানাইঘাট উপজেলার ১নং লক্ষ্মী প্রসাদ ইউনিয়নে রয়েছে সম্ভাবনার আরো অনেকগুলো পর্যটন স্পট। এই ব্যাপারে প্রশাসন-সহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই লেখক।

কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন ঢাকা টাইমসকে জানান, লোভাছড়া একটি অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট। এর দেশব্যাপী প্রচারে কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করছি আমরা।

(ঢাকাটাইমস/০৪ এপ্রিল/প্রতিনিধি/পিএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :