জামিন নাকচ, ওসি মোয়াজ্জেম কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৭ জুন ২০১৯, ১৪:৫৬| আপডেট : ১৭ জুন ২০১৯, ১৮:৪৯
অ- অ+

ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আগামী ৩০ জুন এ মামলায় চার্জগঠনের শুনানির দিন ঠিক করেন বিচারক।

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির যৌন হয়রানিসংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদের সময় আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার মামলায় ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।

এর আগে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রিজনভ্যানে করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।

পরে বেলা ২টার দিকে সিএমএম কোর্টের হাজতখানা থেকে আবার মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের ছয় তলায় অবস্থিত সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ওঠানো হয় ২টা ২২ মিনিটে। আদালতে ওঠানোর পর মোয়াজ্জেম কাঠগড়ার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন তার চোখে সানগ্লাস, মুখে দাঁড়ি, পরনে প্যান্ট এবং গায়ে পোলো শার্ট ছিল। তাকে কিছুটা বিচলিত দেখাচ্ছিল। ট্রাইব্যুনালের ভেতরেও পুলিশ তাকে ঘিরে ছিল।

বিচারক পূর্ব থেকে এজলাসে ছিলেন। তাই মোয়াজ্জেমকে কাঠগড়ায় ওঠানোর দুই মিনিট পরই এ মামলার শুনানি শুরু হয়। প্রথমে আদালতের পেশকার শামীম আল মামুন আসামিকে কাঠগড়ায় উঠতে বললে তিনি কাঠগড়ায় উঠে দাঁড়ান।

মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন প্রথমে বলেন, বিজ্ঞ আদালত ২০ দিন আগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আসামি একজন আইনের রক্ষক। তিনি যদি নির্দোষ হতেন, তবে আইনের লোক হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, পালিয়ে ছিলেন। বিজ্ঞ আদালত এখন আপনিই সিদ্ধান্ত দেন তার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবেন।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, আসামি পলাতক ছিলেন। আইনের লোক হয়েও আদালতে আসেননি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। জামিন পেলে পলাতক হবেন।

এরপর আসামিপক্ষে আইনজীবী ফারুক আহমেদ জামিনের আবেদন করে বলেন, উনি (আসামি মোয়াজ্জেম) পলাতক ছিলেন না। তিনি আইনের আশ্রয়ের জন্য হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। রবিবার আত্মসমর্পণের জন্যই তিনি হাইকোর্টে আসেন। সেখান থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। যদিও পুলিশ তা স্বীকার করেনি। বলছে, শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে।

মামলার অভিযোগ সম্পর্কে এ আইনজীবী বলেন, মামলায় বলা হয়েছে, তার (আসামি মোয়াজ্জেম) আইডি থেকে ভিডিওটি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার আইডি থেকে ভিডিও ছড়ানো হয়নি। ছড়ানো হয়েছে মো. আতিয়ার হাওলাদার সজল নামে এক সাংবাদিকের আইডি থেকে। অথচ তাকে এ মামলায় আসামি করা হয়নি। যা রহস্যজনক। বরং সজলের আইডি থেকে ভিডিও ছড়ানোর কথা জানতে পেরে তিনি গত ১৪ এপ্রিল থানায় একটি জিডি করেন। তাই মোয়াজ্জেম হোসেন এ মামলায় আসামি হতে পারেন না। তিনি জামিন পেতে পারেন। ওই সময় বিচারক আইনজীবীকে জিজ্ঞাসা করেন যে, মোয়াজ্জেম হোসেন ভিডিওটি করেছিলেন কি না? এ প্রশ্নের বিষয়ে আইনজীবী সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।

একই আদালত গত ২৭ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এ মামলায় দাখিলকতৃ তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে এ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ওইদিনই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাদীর দাখিলকৃত মামলায় দুইজন সাক্ষী এবং ঘটনা সংশ্লিষ্টে ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া সংক্রান্তে বিশেষজ্ঞ মতামত এবং দালিলিক সাক্ষ্যের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়েছে যে, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গত ২৭ মার্চ বেলা ১টা ১৮ ঘটিকার সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল দ্বারা থানায় আগত ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করে, যাতে ভিকটিমের ব্যক্তিগত তথ্য পরিচিতি প্রকাশ পায়। এ অপরাধে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়। এছাড়া ধারণকৃত ভিডিও গত ৮ এপ্রিল শেয়ারইট অ্যাপ্সের মাধ্যমে সজল নামক ডিভাইসে পাঠিয়ে প্রচার করায় একই আইনের ২৯ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়।

অন্যদিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যক্তিগত মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে তা ডিজিটাল বিন্যাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ায় সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির উপক্রম করায় একই আইনের ৩১ ধারায় অপরাধ করেছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভিকটিম নুসরাত অল্প বয়সের একটি মেয়ে এবং মাদ্রাসার ছাত্রী ছিলেন। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওসি মোয়াজ্জেমের আরও কৌশলী হয়ে নারী ও শিশু বান্ধব উপায়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন ছিল। তিনি একজন সু-শৃঙ্খল পুলিশ বাহিনীর সদস্য হয়েও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভিকটিম নুসরাতের শ্লীলতাহানির ঘটনার বক্তব্য ভিডিও ধারণ ও প্রচার করে অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। যার ফলে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

মামলায় যেসব ধারায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন আমলে গ্রহণ করা হয়েছে ওই সকল ধারায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদী সুমান। তিনি বলেন, তিনটি ধারার প্রত্যেকটিতে পাঁচ বছর করে ১৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

এর আগে গত ১৫ এপ্রিল বাদী এ মামলা করলে ট্রাইব্যুনাল পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়।

ওসি মোয়াজ্জেম বর্তমানে ফেনী জেলা পুলিশের অস্ত্র শাখায় কর্মরত। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার পর এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ উঠলে তাকে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

মামলায় অভিযোগ, নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার আগে গত ২৭ মার্চ নুসরাত যৌন হয়রানির অভিযোগ করলে পুলিশ নুসরাত ও আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদ্দৌলাকে এক সঙ্গে থানায় নিয়ে যায়। সেই সময় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। যার ভিডিও ধারণ করা হয়। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি অত্যন্ত অপমানজনক এবং আপত্তিকর ভাষায় নুসরাতকে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে। এমনকি ভিডিওর এক পর্যায়ে দেখা যায়, ওসি রাফিকে বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করেছিল কি না জিজ্ঞেস করেন যা অত্যন্ত মানহানিকর। নুসরাতের মৃত্যুর পরের দিন গত ১১ এপ্রিল বিভিন্ন ফেসবুক ও ইউটিউবসহ সোস্যাল মিডিয়ায় ওই ভিডিও ছেড়িয়ে দেয়া হয়। ওসি সাহেবের রুমে এমন ধরনের ঘটনার উদাহরণ দেশে আর কী হতে পারে। মেয়েটা মরে গিয়ে বেঁচে গিয়েছে। বেঁচে থাকলে, এ ভিডিওর কারণে তার বাঁচা কঠিন হয়ে যেত। একটি মেয়ের অনুমতি ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের নামে যৌন হয়রানিমূলক আপত্তিকর মানহানিকর প্রশ্ন করা এবং তা ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া ডিজিটাল নিরাপত্ত আইনের ২৬ ধারার, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ একই আইনের ২৯ ধারার এবং উপরোক্ত কার্যের মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ওই আইনের ৩১ ধারার অপরাধ।

উল্লেখ্য, অধ্যক্ষ সিরাজ উদদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা তুলে নেয়ার জন্য গত ৬ এপ্রিল রাফিকে মুখোশ পরা ৪/৫ জন চাপ প্রয়োগ করলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। এতে তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুন/আরজেড/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টয়োটার ব্যবসা হারাচ্ছে নাভানা?
সারজিস বনাম নওশাদ: ভোটে কার পাল্লা ভারি?
মনোহরদীতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা গণধোলাইয়ের শিকার
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদও জয় করব: নাহিদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা