ডেঙ্গুতে তিন মাসে ক্ষতি ৩০০ কোটি

নজরুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৯:৩৭
ফাইল ছবি

চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রকোপে অগণিত মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। সম্প্রতি মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্তের সংখ্যা কমে এলেও থামছে না মৃত্যু। ডেঙ্গুর এই ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত আট মাসে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সেটা এখনো পর্যন্ত অজানা। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ না জানালেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিত প্রকাশ করছে এ রোগে হাসপাতালে ভর্তি, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরাসহ মৃতের সংখ্যা।

তবে বেসরকারি একটি হিসাব বলছে, এ বছর ডেঙ্গুর কারণে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আর এই হিসাব দেখিয়েছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের একদল গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে গবেষকদলের নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ।

তিন মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা বলছেন, এই সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরাসরি খরচ হয়েছে অন্তত ২২৬ কোটি। পাশাপাশি রোগীদের সঙ্গে হাসপাতালে অবস্থানকারীদের পেছনে খরচ ও তাদের কর্মঘণ্টার হিসাবে আরও প্রায় ৮১ কোটি টাকার ক্ষতি ধরা হয়েছে এই সমীক্ষায়। যারা মারা গেছেন তাদের (ইয়ার অব লাইফ লস) অর্থনৈতিক ক্ষতি ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।

তাদের হিসাবে, সব মিলিয়ে এবার ডেঙ্গুতে এরইমধ্যে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩৪৬ কোটি টাকা। তবে যারা হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন তাদের খরচ এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

তবে গবেষক দলের প্রধান সৈয়দ আব্দুল হামিদ ঢাকা টাইমসকে জানান, তাদের গবেষণায় প্রাপ্ত আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আদর্শ ধরা ঠিক হবে না। সরকারি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ সমীক্ষা করে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে বলে জানান গবেষক প্রধান।

গবেষক দলের এই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বের করেছেন সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে হাসপাতালে ভর্তি, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরাসহ মৃতের সংখ্যা নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

সমীক্ষা প্রাপ্ত তথ্য বলছে, হাসপাতালে ভর্তি ফি, শয্যা ভাড়া, পরীক্ষার ফি, ডাক্তার ফি, ওষুধ ও খাবার খরচ মিলিয়ে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী প্রতি ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৯৫২ টাকা। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো রোগীর খরচ হয়েছে ২০ হাজার ৪৯৩ টাকা।

গবেষক দল সরকারি-বেসকারি হাসপাতাল আবার বেসরকারি হাসপাতালকে দুটো ভাগে ভাগ করে খরচের পরিমাণ ধরা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে একজন রোগীর পেছনে আর্থিক খরচ ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৯০০ টাকা, বেসকারি হাসপাতালের মধ্যে এ ক্যাটাগরিতে একজন রোগীর খরচ দরা হয়েছে ২ লাখ টাকা আর বি ক্যাটাগরি বেসরকারি হাসপাতালের খরচ ধরা হয়েছে ৪১ হাজার টাকা।

সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমরা খরচের বিষয়টাকে সরকারি আলাদা আর বেসরকারির ক্ষেত্রে দুটো ক্যাটাগরি করে রোগীদের গড় হিসেব করে এ সমীক্ষা করেছি। এখানে আমরা রোগী ছাড়াও তাদের সাথে যারা এসেছে তাদের বিভিন্ন খরচসহ কর্মঘণ্টার একটা হিসেব এনেছি।’

অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ জানান, যারা মারা গেছেন তাদের জীবনের মূল্য তো আর্থিকভাবে হিসাব করা যাবে না। কিন্তু মাথাপিছু আয় বিবেচনা করে তাদের গড় বয়সের হিসাবে আর্থিক ক্ষতিটা তুলে ধরা হয়েছে। তবে হাসপাতালে ভর্তি ছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা খরচের পাশাপাশি এই রোগ থেকে বাঁচতে মশা প্রতিরোধে স্প্রে, কয়েল, মশারিসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম কেনার খরচ গবেষণার বাইরে রাখা হয়েছে।

এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৮০ হাজার ৪০ জন রোগী সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকা শহরের বাইরে ছিল ৩৫ হাজার ৩৭৩ জন। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে এত বেশিসংখ্যক রোগী এর আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। ইতিমধ্যে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছে ৭৬ হাজার ৯৩৭ জন।

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের এই সমীক্ষা একেবারে আদর্শ বলা যাবে না। তাছাড়া এই সমীক্ষা মূলত কাউকে দোষারোপ করার জন্য নয়। এটা বের করা হয়েছে সরকারকে সিগন্যাল দেওয়ার জন্য, যেন পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে সচেতন থেকে আমাদের এই ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়।’

ঢাবির এই শিক্ষক সরকার ও সাধারণ মানুষকে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘এবারের ডেঙ্গু চিত্র প্রমাণ করে দিয়েছে আমরা কতটা অসচেতন। তাই সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে সবাই যেন এ বিষয়ে সচেতন থাকি।’

ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/এনআই/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :