হাহাকার নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে সেই তাজরীন ভবন

ইমতিয়াজ উল ইসলাম, সাভার
  প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:৪০| আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:৫৪
অ- অ+

নিত্য ভোরে সূর্যের আলো ফোটার সাথে হাজারো শ্রমিকের আগমনে কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠতো নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশন ভবনটি। দিনভর কর্মযজ্ঞতায় কোলাহল থাকতো সেখানে। নয় তলা ভবনের প্রতিটি ফ্লোর থাকতো মানুষে পরিপূর্ণ। কিন্তু সাত বছর আগের এক ভয়ানক নৃশংসতা কেড়ে নিয়ে গেছে সব। ভবনের ভেতর আটকে আগুনে পুড়ে মারা গেছে তাজা শতাধিক প্রাণ। এ নৃশংসতার অর্ধযুগ পেরিয়ে মরা মানুষগুলোর হাহাকার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ভবন।

নিশ্চুপ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা এই বহুতল ভবনটিতে একসময় উৎপাদন কাজে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই সরগরম থাকতো। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডের সাত বছর পর এখানে কেবলই বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। জনশূন্যতা আর ভুতুরে পরিবেশে অর্ধযুগ ধরে পরিত্যক্ত আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরিন ফ্যাশন ভবনটি।

আজও ভবনের ভেতর আটকে থাকা মানুষগুলোর আর্তচিৎকার আর সেদিনের আগুনের লেলিহান শিখার রাক্ষুসে চেহারা চোখে ভাসে বলে জানালেন নিশ্চিন্তপুরাবাসী।

তালাবদ্ধ ভবনের পাশে গিয়ে বাইরে থেকে দেখা গেল ভবনটির বিভিন্ন স্থানে পুড়ে যাওয়া ক্ষত যেন আজও বহমান। পুড়ে যাওয়া দেওয়ালের সূক্ষ্ম চিহ্ন যেন শরীরকে শিওরে তোলে। একসময়ের পরিপাটি ভবনের চারপাশের দেয়ালে পোড়া কালচে বরণ যেন ছাপ রেখে গেছে নির্মমতার। প্রচণ্ড তাপে বেঁকে যাওয়া জানালার গ্রিল ও এডজাস্ট ফ্যানের পাখাগুলো দেখে মনে হয়, কত না কষ্টতেই প্রাণ গিয়েছিল মানুষগুলোর! অর্ধযুগ ধরে ভবনটি যেন ঠায় দাঁড়িয়ে এক নির্মম হাহাকার জানান দিচ্ছে।

কথা হয় তাজরীনের সেই ভবনের পাশের বাসিন্দাদের কয়েকজনের সঙ্গে। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিলেন তারা। বললেন, সেদিন সন্ধ্যার দিকে তাজরীন ফ্যাশনস পোশাক কারখানাটির নিচ তলার তুলার গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা পুরো আট তলা কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কারখানাটির সহস্রাধিক শ্রমিক জীবন বাঁচাতে ভবন থেকে নামার চেষ্টা করেন। সেদিন জীবন বাঁচাতে শ্রমিকরা চিৎকার করছিলেন। আজও কানে বাজে শ্রমিকদের 'বাঁচাও বাঁচাও' আর্তনাদ।

তারা আরও বলেন, সকাল হলেই একসময় যে কারখানাটি কর্মব্যস্ততায় মুখরিত থাকতো। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে এখন পর্যন্ত এটি বন্ধ পড়ে আছে। তেমন কেউ না আসায় সব সময় এখানে সুনশান নীরবতা বিরাজ করে। এত বড় ভবনটি এখন ভূতের বাড়ির মতো হয়ে গেছে।

এলাকাবাসীদের অনেকের মতে, ভবনটির বেশ কিছু অংশ আবারো রিপেয়ারিং করা হয়েছে। ভেতরে মালিকের লোকজনও থাকে। মাঝে মধ্যে দুই-একটি বড় কাভার্ডভ্যানও ভেতরে দেখা যায়। এছাড়া তাজরীনের ভবনের দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন বয়স্ক এক ব্যক্তি। কিছুটা উদ্ভট প্রকৃতির এই লোকটি বছর পূর্তি এলেই যেন থাকেন বাড়তি সতর্কতায়। কেন না এই সময় সাংবাদিকরা এসে ভবনের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন বলে ভেতর থেকে প্রধান ফটক আটকে রাখেন তিনি। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতেও বেশ নারাজ তিনি।

এদিকে তাজরীন ফ্যাশন কারখানার স্থানে সরকারিভাবে শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল ও ডরমেটরি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু দাবি জানিয়ে বলেন, অগ্নিকাণ্ডে যখন জীবন বাঁচাতে শ্রমিকরা চিৎকার করছিলেন তখনও মালিক দেলোয়ার হোসেন কারখানা থেকে বের হওয়ার সব গেটে তালা লাগিয়ে রাখেন। প্রাণে বাঁচতে অনেক শ্রমিক ভবনটির বিভিন্ন তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন।

তাই এই ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বর্ণনা করে আইএলও কনভেনশন-১২১ অনুসারে শ্রমিকদের সারাজীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান, পুনর্বাসনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা ও সন্তানদের লেখাপড়া নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

এছাড়া তাজরীন ফ্যাশন কারখানার স্থানে সরকারিভাবে শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল ও ডরমেটরি নির্মাণ করার দাবি জানান এই শ্রমিক নেতা।

(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পাঁচ শতাধিক বাবুই পাখির ছানা হত্যা, গা ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত
সিরাজগঞ্জে নদী ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের বিকল্প নেই: চরমোনাই পীর
টঙ্গীতে ঝুট নিয়ে মহাসড়ক রণক্ষেত্র, ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ১০ 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা