ময়মনসিংহের হায়দার আলী বীরবিক্রম

ব্যুরো প্রধান, ময়মনসিংহ
| আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:১১ | প্রকাশিত : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৪৫

মফস্বল শহর ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা। শহরের উপকণ্ঠে ঘন বাঁশবাগান ঘেরা বসতবাড়ি, সারি সারি পানের বরজ আর ফসলের সবুজে ভরা একটি গ্রামের নাম শ্রীপুর মাইজহাটি। এই গ্রামের সহজ-সরল কৃষক জবেদ আলী আর কৃষানি হাজেরা খাতুন দম্পতির দ্বিতীয় সন্তানের নাম হায়দার আলী। জন্ম ১৯৪২ সালের ৩ মার্চ। সাত ছেলে এক মেয়ে নিয়ে টানাপোড়েনের সংসারে ভরণ-পোষণ শেষে একসময় সন্তানদের পড়ালেখার খরচ জোগানো কৃষক বাবার পক্ষে অসাধ্য হয়ে পড়ে। ৮ম শ্রেণির ছাত্র থাকাবস্থায় ১৯৬৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সৈনিক হিসেবে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ইপিআর-এ যোগ দেন।

১৯৭১ সালে দেশে স্বাধীনতার ডাক এলে অনেকের মতো তিনিও স্থির থাকতে পারেননি। তাই মার্চের ২৮ তারিখ চলে যান ভারতের আগরতলা বিএসএফ ক্যাম্পে। সেখান থেকে ১১ জনসহ ফটিকছড়িতে মেজর মইনুল হক চৌধুরীর কমান্ডিংয়ে উচ্চতর রণকৌশল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেখান থেকে নিয়োগ পান টু-ইন বেঙ্গলে। এমন সময় ২৩ আগস্ট হঠাৎ আক্রমণ করে সিলেটের তেলিয়াপাড়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পটি পাকিস্তানি বাহিনী দখল করে নিলে কিছুটা হতাশা নেমে আসে মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে। ক্যাম্পটি পুনর্দখলের নির্দেশ আসে সেক্টর কমান্ডার মেজর কে এম সফিউল্লাহর কাছ থেকে। ২৪ আগস্ট ভোর ৪টায় ক্যাপ্টেন মতিনের নেতৃত্বে ক্যাম্পটিতে প্রচ- আঘাত হানে মুক্তিসেনার দল।

মুক্তিবাহিনী কিছুতেই ক্যাম্পের নিকটবর্তী হতে পারছিল না। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় সে, যায় যাক নিজের প্রাণ, তবু যে করেই হোক শত্রুর মেশিনগান স্তব্ধ করে ক্যাম্পটির দখল নিতেই হবে। দেশের টানে জীবনের মায়া ত্যাগ করে বজ্রের মতো হুংকার ছেড়ে সহযোদ্ধাদের বলেন, ফলোমি। শত্রুর গুলি উপেক্ষা করে চারজন সহযোদ্ধা সাথে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেন সৈনিক হায়দার আলী। হঠাৎ শত্রুর একটি গুলি এসে আহত করে সহযোদ্ধা একজনকে। তাকে কৌশলে মাটিতে শুইয়ে রেখে এগিয়ে চলেন। একসময় পৌঁছে যান অভীষ্ট লক্ষ্যে। তিনজন পাকসেনা খতম করে শত্রুপক্ষের ভারী একটি মেশিনগান, দুটি স্টেনগান ও একটি পিস্তল হস্তগত করেন।

ক্যাম্পটির পুনর্দখল প্রতিষ্ঠা করেন মুক্তিবাহিনী। যুদ্ধে হায়দার আলীর সহযোদ্ধা সিপাহি মোবারক আলী শহীদ হন এবং বাকি তিনজন আহত হন। বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখা ও অসীম সাহসিকতার জন্য বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত হন সিপাহি হায়দার আলী। পাশাপাশি স্বাধীনতা-উত্তর ময়মনসিংহবাসী তাকে সম্মান দেখিয়ে তার নামে একটি সড়কের নামকরণ করেন। দাম্পত্যজীবনে এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক তিনি। আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে কক্সবাজারের ট্রেলী নামের একটি হ্যাচারীতে বেশ কিছুদিন চাকরি করেন। একাধিকবার হার্ট-অ্যাটাকে আক্রান্তসহ নানা রোগে ভুগে চরম দৈন্যদশায় দিনাতিপাত করছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে স্বাধীন করা এই দেশে শুধুমাত্র অর্থের অভাবে এই বীর যোদ্ধাকে কাটাতে হচ্ছে দুই মেয়ের কাছে। তবু কারো প্রতি এতটুকু ক্ষোভ নেই তার। স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। এটি অব্যাহত থাকুক এই প্রত্যাশা তার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :