‘গ্রন্থাগারগুলোকে আধুনিকায়ন করা হবে’

দেশের গ্রামাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে চায়ের দোকানে নিম্নমানের বাংলা সিনেমা চালানো হয়। যা বর্তমান যুগের ছেলে মেয়েদের বই পড়ার মানসিকতা নষ্ট করছে। একজন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে বই পড়াকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর বই পড়ার জন্য গ্রন্থাগার গড়ে তোলার পাশাপাশি সেগুলোকে আরও আধুনিকভাবে গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
বুধবার সকালে ১০টায় ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ২০২০’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত সভাটি গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রন্থাগার আধুনিক হবে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রন্থাগারগুলোকে আধুনিকায়ন করা হবে। একটি সময় গ্রন্থাগারের প্রতি মানুষের ঝোঁক ছিল। কিন্তু এখন সেটা অনেকাংশেই কম। আমরা সেটিকে বাড়াতে চাই। আমরা বই পড়ব, একজন মানুষ হওয়ার জন্য।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা আলোকিত মানুষ সৃষ্টি করতে চাই। আমরা যদি লাইব্রেরি তৈরি করি, সেখানে যদি প্রচুর বই থাকে। সেই বই থেকে যদি আমরা জ্ঞান অর্জন করি, অর্জিত জ্ঞান যদি আমরা আমাদের কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করি, তাহলেই আলোকিত মানুষ হবে।’
বিশ্বের অর্থনীতিবিদদের ধারণা পাল্টে দিয়েছে বাংলাদেশ। তলাবিহীন ঝুড়িসহ নানা বিশেষণে যারা বাংলাদেশকে অবজ্ঞা করেছে, তারা আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল আখ্যা দিচ্ছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গত ১১ বছর অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। অনেক অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে হবে দারিদ্র্যেতার মডেল। কিন্তু শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশ দারিদ্র্যেতার মডেল নয়, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।'
গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মান্নান ইলিয়াসের সভাপতিত্বে দিবসটি উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এছাড়া মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।
এবার তৃতীয়বারের মতো জাতীয় গ্রন্থ দিবস ২০২০ পালিত হচ্ছে। মুজিববর্ষে সঙ্গে একাগ্রতা প্রকাশ করে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পড়বো বই পড়বো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।
সভায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, 'প্রতি জেলায় কমপক্ষে একটি করে ৬৪ জেলায় মোট ৭৬টি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি রয়েছে। আমরা প্রতিটি উপজেলা পর্যায়েও ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি পৌঁছে দিতে চাই। ৬৪ জেলায় ৭১টি গ্রন্থাগার রয়েছে। সেগুলোকে আধিকায়ন করতে চাই। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের ১ হাজার গ্রন্থাগার স্থাপন ও সেখানে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে গণগ্রন্থাগার স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। চলতি বছর একশো গণগ্রন্থাগার গড়ে তোলা হবে।'
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, 'বুক (বই) ও ফেসবুকের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। বই পড়ে দেশ গড়া যায়। ফেসবুক দিয়ে যায় না। স্মার্ট ফোন মদ, গাঁজা, হেরোইনের চাইতেও ভয়ানক।'
শিশুদের উদ্দেশ্য জাফর ইকবাল বলেন, 'শুধু পাঠ্য পই পড়লে হবে না, অন্যান্য বইও পড়তে হবে। বইয়ের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর বড় বড় মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে পারি। তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়তে পারি। যদিও তারা নেই। শুধু তাদের বই পড়ে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলতে পারি।'
এর আগে দিবসটি উপলক্ষে সুসজ্জিত ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিসহ সকাল নয়টায় শাহবাগস্থ গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র কেন্দ্র (টিএসসি) হয়ে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি জেলা প্রশাসক ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের আওতাধীন বিভাগীয় ও জেলা সরকারি গ্রন্থাগারসমূহের আয়োজনে সকল জেলায় শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন, রচনা, বইপাঠ ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সঙ্গে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গ্রন্থাগার, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি, বাংলাদেশ গ্রন্থাগারিক ও তথ্যায়নবিদ সমিতি, সরকারি গ্রন্থাগার সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, ইনস্টিটিউটের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক-ছাত্রবৃন্দ স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন একাডেমিক লাইব্রেরির পেশাজীবী, ব্রাক, ব্রিটিশ কাউন্সিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একযোগে দিবসটি পালন করছে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এর ফলশ্রুতিতে ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো জাতীয় গ্রন্থ দিবস উদযাপন করা হয়। জনগণকে গ্রন্থগারমুখী করা, পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি, মননশীল সমাজ গঠনের কেন্দ্রবিন্দু ও জনগণের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে লাইব্রেরির ভূমিকাকে দৃঢ় করাই জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের লক্ষ্য বলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ঢাকাটাইমস/৫জানুয়ারি/কারই

মন্তব্য করুন