‘বিপণন অসুবিধায় লাভ হারাচ্ছেন এসএমই উদ্যোক্তারা’

সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসএমই প্রতিষ্ঠান অনেক উন্নত ও মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করছে জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, বিপণন সুবিধার অভাবে উদ্যোক্তারা লাভের অংশ হারাচ্ছেন। এটা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে।

সোমবার রাজধানীর পান্থপথে এসএমই ফাউন্ডেশনের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা ২০২০ সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মেলার বিস্তারিত তুলে ধরে শিল্পমন্ত্রী জানান, বুধবার সকাল ১০টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে (কেআইবি) প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের মেলায় সারাদেশের ২৯৬টি এসএমই উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের ৩০৯টি স্টলে থাকবে। এসব স্টলে উদ্যোক্তাদের নিজেদের তৈরি দেশীয় পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি হবে।

উদ্যোক্তাদের মধ্যে ১৯৫ জন নারী ও ১০১ জন পুরুষ উদ্যোক্তা। এবারের মেলায় উদ্যোক্তাদের ৬৬ শতাংশই নারী।

মেলায় দেশে উৎপাদিত পাটজাত পণ্য, খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়াজাত সামগ্রী, ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, আইটি পণ্য, প্লাস্টিক ও সিনথেটিক পণ্য, হস্তশিল্প, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যারসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প পণ্য প্রদর্শন করা হবে। নয় দিনের এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এবং সবার জন্য তা উন্মুক্ত থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পণ্যের বিক্রির ব্যবস্থা নেই। কাজেই দেশের এসএমইখাতে উৎপাদিত পণ্য বিপণনের সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ বাস্তবতা বিবেচনা করে এসএমই ফাউন্ডেশন শুরু থেকেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে সহায়তা দিয়ে আসছে। বিশেষ করে মেলা আয়োজনসহ বিভিন্ন বাস্তবধর্মী কর্মসূচি পরিচালনা করে যাচ্ছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো আছে। আমাদের রপ্তানি পণ্য বহুমুখিকরণের ব্যপারে প্রধানমন্ত্রী তাগিদ দিয়েছেন। যারা মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি করে তাদের পণ্য রপ্তানিতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুারো চাহিদা অনুয়ায়ী সহায়তা করে। বিদেশে যেখানে মেলা হয় সেখানে আমাদের উদ্যোক্তাদের দূতাবাসের মাধ্যমে সুবিধা দেয়া হয়। এ ব্যাপারে আমাদের প্রবাসী উইং আছে। আগে বাজার পেতে হবে, তারপর সরকার সহায়তা করবে। এ ব্যাপারে আমরা সব সহযোগিতা করবো।’

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘এবারের মেলায় বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের কাছে দেশের এসএমই খাত সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। এজন্য মেলায় ৫ মার্চ সকাল ১০টায় একটি গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। ওইদিন সকাল ১১টা থেকে দুইটা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ শুধু আমন্ত্রিত অতিথিদের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এর মাধ্যমে বিদেশিরা যারা আছে তারা এখানে এসে আমাদের ভালোমানের পণ্যের ব্যাপারে জানতে পারবে। উদ্যোক্তারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে।’

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল হালিম এক প্রশ্নের জবআবে বলেন, মেলায় রপ্তানি বাণিজ্যে এসএমই নারী উদ্যেক্তাদের অংশগ্রহণ: সম্ভাবনা বৃদ্ধি ’ বিষয়ক আমাদের সেমিনার আছে। সেখানে উদ্যোক্তাদের রপ্তানি বাণিজ্য সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত শোনা হবে। তাদের সমস্যা কীভাবে সামাধার করবে সে ব্যপারে দিকনির্দেশনা দেয়া হবে। যারা মেলায় অংশগ্রহণ করবে তারা কীভাবে আরও দক্ষ হবে সে ব্যাপারে তাদের কথ শোনা হবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নয়-ছয় সুদ কার্যকর হলে এসএমই উদ্যোক্তারা যেন এর সুবিধে পায় এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শিল্প সচিব বলেন, এসএমই নীতিমালা-২০১৯ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে। এরপর একটি সভা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। সেখানে ঋণের প্রাপ্তির এবং সুদের বিষয়টিও এসেছে। এটা আমাদের দিক থেকে বিবেচনায় রয়েছে যাতে যেভাবে সুদের হার কমানো হবে সেটা যেন এসএমই উদ্যোক্তারাও পায়।

আবদুল হালিম বলেন, আর একটি বিষয় আছে সেটি হলো মাইক্রো ক্রেডিট যেটা আরও ক্ষুদ্র অংশে দেয়া হয়। সেই ক্ষেত্রে অনেকে বলতে চান এটার তদারকি অন্যরকম লাগে। আমরা সেই কাতারে পড়ছি না। কাজেই ইতিপূর্বেও বাংলাদেশ ব্যাংকের যে সার্কুলার ছিল সেখানে কিন্তু আমাদের এসএমই উদ্যোক্তারা সুদের হারের ব্যপারে সুবিধা পেয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের ভাবনা রয়েছে জেলা পর্যায়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের অফিস স্থাপন করা। অবশ্য সে জন্য আমাদের লোকবল প্রয়োজন। আমরা আস্তে আস্তে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি। উদ্যোক্তাদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া আমাদের লক্ষ্য।

সংবাদ সম্মেলনে এসএমই ফাউন্ডেশন সদস্য ইসমাত জেরিন খান, রাশেদুল করিম মুন্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/০২মার্চ/জেআর/জেবি)