অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা নয়, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন

শায়খ আহমাদুল্লাহ
  প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল ২০২০, ১২:৪০| আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২০, ১৩:৪৮
অ- অ+

গোটা পৃথিবীতে করোনাভাইরাসের কারণে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এতে আমরা অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। অনেকে ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। তবে কোনোভাবেই একজন মুমিনের হতাশাগ্রস্ত হওয়া, বেশি মানসিকভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া তার জন্য শোভনীয় নয়। মুমিনের মনে রাখা উচিত আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন, ‘কোনো জাতি বা কোনো সম্প্রদায় যতক্ষণ না নিজেরা নিজেদের সংশোধন না করেন আল্লাহ তায়ালা তাদের অবস্থার পরিবর্তন করেন না।’

আল্লাহ তায়ালার এই চিরাচরিত সুন্নাহ বা নিয়ম অনুযায়ী বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নিজেদের জায়গা থেকে সংশোধন করতে হবে। আমাদের তওবা করতে হবে এবং আল্লাহ তায়ালার প্রতি সুধারণা পোষণ করা এটা আমাদের ঈমানের দাবি।

আল্লাহ তায়ালা দ্রুতই এই অবস্থার অবসান ঘটাবেন ইনশাল্লাহ। এই অবস্থা নিশ্চয়ই চিরকাল থাকবে না। কিন্তু আমরা যদি এখন আমাদের গোনাহগুলোকে মাফ করিয়ে নিই, তওবা করে নিজেদের সংশোধন করে নিতে পারি সেটাই হবে আমাদের বড় অর্জন।

ভবিষ্যতে আমাদের কী হবে, অনেকের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এগুলো আমরা আদৌ পুষিয়ে উঠতে পারবো কি না- এই অবস্থায় সবাইকে বলবো আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা রাখুন। মানুষ যদি তার ওপর সেভাবে ভরসা রাখতে পারে নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিপদ থেকে মানুষকে পরিত্রাণ দেবেন।

কোরআনে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান ।’ অতএব আপনার দুশ্চিন্তা আপনাকে এক কদমও এগিয়ে দেবে না বরং পেছনে ফেলে রাখবে। আমাদের উচিত হবে আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখা, সুধারণা রাখা।

আল্লাহ তায়ালা হাদিসে কুদসিতে বলেছেন, ‘বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তার প্রতি তেমন আচরণ করি।’ অতএব, আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখুন যিনি আপনাকে আমাকে শূন্য থেকে উপরে উঠিয়েছেন, অনেক কিছু দিয়েছেন। তিনি এই পরিস্থিতিও আমাদের কাটিয়ে ওঠার তাওফিক দেবেন। শুধু তাই নয়, আমরা আগের থেকে ভালো অবস্থায়ও ফিরে যেতে পারি। সাময়িক বিপদ আল্লাহ দিয়ে থাকেন বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য। এই অবস্থায় আমরা কতটা আস্থা রাখতে পারি, সবর করতে পারি সেটাই বিষয়।

এই অবস্থায় হতাশা নয়, পবিত্র কোরআনের সেই আয়াতগুলো তেলাওয়াত করি যাতে পরীক্ষার কথা বলেছেন আবার সেই আয়াতগুলো তেলাওয়াত করি যাতে সবরকারীদের জন্য যেসব সুসংবাদ দিয়েছেন সেগুলো। আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি ভয় দিয়ে, ক্ষুধা দিয়ে, ফল-ফসল, অর্থ সম্পদ, জীবন এগুলো দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করি। যারা এসমস্ত পরীক্ষায় ধৈর্যধারণ করবে তাদের আমি সুসংবাদ দান করবো।’ অতএব আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভরসা রাখি। নিশ্চয়ই মানুষের কঠিন সময়ের পরে ভালো সময় আসে।

মুমিনের হারানোর কিছু নেই। এই রোগের মধ্যে যদি আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি, যদিও সেটা কঠিন। তারপরও ঈমানের জায়গা থেকে যদি সেটা করার চেষ্টা করি ইনশাল্লাহ যদি আমি এই রোগে মৃত্যুবরণও করি তাহলে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবো। আর যদি বেঁচে যাই তাহলে আল্লাহ তায়ালাই আমাকে রক্ষা করবেন। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় শুধু কাফেররা। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘যারা পথভ্রষ্ট, পথহারা তারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যায়।’ আল্লাহ যেন আমাদের কাফেরদের মতো পথভ্রষ্ট না করেন।

মুমিন যদি বিপদে যদি সবর করেন আর কিছু না হলেও আল্লাহ গোনাহ মাফ করে দেন। নিষ্পাপ হয়, পাপ কমতে থাকে। আস্তে আস্তে জান্নাতের দিকে অগ্রসর হয়। হাদিসে এসেছে, রাসুল সা. বলেছেন, ‘পায়ে যদি কারো কাঁটাবিদ্ধ হয়। তার বিনিময়ে আল্লাহ ক্ষমা করে থাকেন।’ ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এটা শয়তান মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে। এতে আল্লাহর কুধারণা তৈরি হয়, মানুষ যাতে নিরাশ হয়ে যায় সেই চেষ্টা করে শয়তান। নিরাশ হওয়া কুফুরি। কোনো অবস্থাতেই নৈরাশ্যকে স্থান দেয়া যাবে না। ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া যাবে না। ভবিষ্যতের মালিক আল্লাহ তায়ালা। তার প্রতি আস্থা রাখি। তিনি অবশ্যই এই অবস্থার সংশোধন করে দেবেন।

(অনুলিখন: বোরহান উদ্দিন, ঢাকা টাইমস)

লেখক: বিশিষ্ট দায়ী ইসলামি আলোচক

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আজ আন্তর্জাতিক নির্যাতন বিরোধী দিবস
সরকারি কর্মচারীদের জন্য শাহজালাল বিমানবন্দরে হচ্ছে ‘কল্যাণ ডেস্ক’
‘সুইসাইড ডিজিজ’-এ আক্রান্ত সালমান খান
১৬ দিনে ৫১ হাজার ৬১৫ হাজি দেশে ফিরেছেন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা