নির্জন পুকুরে স্বাস্থ্যকর্মীকে রাখলেন আ.লীগ নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জ
| আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২০, ১৭:৪৬ | প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল ২০২০, ১৫:১১

ঢাকার একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন এক নারী স্বাস্থ্যকর্মী (২১)। গত মঙ্গলবার তিনি ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার পর স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী একটি নির্জন স্থানে শুকিয়ে যাওয়া পুকুরের মধ্যে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে তার মধ্যে কোয়ারেন্টাইনে রাখেন। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী সেখানে অবস্থান করছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লখন্ডা গ্রামে। এ ঘটনাটি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর উপজেলাব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে।

ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চাকরি করতেন এই নারী স্বাস্থ্য কর্মী। করোনাভাইরাসের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়। ছুটিতে তিনি বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈর নির্দেশে এলাকাবাসী এই নারীকে তার বাড়ির প্রায় ৪০০ মিটার দূরে একটি নির্জন স্থানে পুকুরের ভিতর তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে কোয়ারেন্টাইনে রাখে।

ভুক্তভোগী ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমি এখানে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবনযাপন করছি। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমি অনেক মানুষকে স্বাস্থসেবা দিয়েছি। আজ এখানে থেকে আমার স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ যে এতোটা নিষ্টুর হতে পারে তা জানা ছিলনা।

কান্নাজনিত কন্ঠে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মা বলেন, আমার স্বামী নেই। আমার এই মেয়েটার আয়ে আমার সংসার চলে। আমার মেয়েটির এখনো বিয়ে হয়নি। তাকে এভাবে একটি পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘরে রাখা হয়েছে। আমার মেয়েটির যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে এর দায় কে নিবে? এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈর চাপ সৃষ্টি করে আমার মেয়েটিকে এখানে রেখেছে। আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তে ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে সেখানে রাখা হয়েছিল। অথচ এলাকার কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আমাকে হেনস্থা করার চেষ্টা করছে।

কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুশান্ত বৈদ্য বলেন, ওই স্বাস্থ্যকর্মী বাড়িতে আসার পরে আমাকে তার পরিবার বিষয়টি জানায়। আমি তাকে একটি আলাদা ঘরে রাখতে বলছিলাম। কিন্তু ওই তাকে যে এলাকাবাসী পুকুরের মধ্যে একটি খুপড়ি ঘরে রেখেছে তা আমার জানা ছিল না।

কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান বলেন, তারা ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে দিয়ে এসেছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। এই স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী এভাবে না রেখে আমাদের জানালে তাকে আমরা প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখতে পারতাম। আমরা এই স্বাস্থ্যকর্মীকে ওখান থেকে এনে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করবো। তাকে যারা এভাবে ঝুপড়ি ঘরে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৭এপ্রিল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :