নজির রাখলেন বাড়ির মালিক ফারজানা তাহের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২১ মে ২০২০, ১৭:২৪| আপডেট : ২১ মে ২০২০, ১৮:০৩
অ- অ+

মহামারি করোনায় দিশেহারা সবাই। সবকিছু স্তব্ধ করে দেয়া করোনাদিনে কর্মহীন মানুষের দিন চলছে খেয়ে না খেয়ে। এই বিপদে ঘরবন্দি লোকজন বেশি বিপদে পড়েছেন মাস শেষের বাড়িভাড়া নিয়ে। ভাড়া বকেয়া থাকায় ঘর থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে একাধিক। ভাড়াটিয়াকে মারধর করে বাড়িওয়ালাকে জেলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে এরমধ্যেও দুর্যোগে ভাড়াটিয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেক বাড়ির মালিক। কেউ ভাড়া মওকুফ করেছেন, কেউ আবার সুবিধামত পরিশোধের সুযোগ দিয়েছেন।

এদেরই একজন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ফারজানা তাহের। করোনায় বিপদে পড়ায় দশজন ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে গত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ভাড়া মওকুফ করেছেন। শুধু তাই নয়, সামনে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে ততদিনও তিনি ভাড়া নেবেন না বলে ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ব্যক্তিজীবনে একজন শিক্ষানুরাগী মানুষ ফারজানা তাহেরের বাসা বেগমগঞ্জে উপজেলার কিসমত করিমপুরে। তার বাড়িতে দশজন ভাড়াটিয়ার বসবাস। মফস্বল এলাকা হলেও প্রত্যেকের বাসা ভাড়া আট হাজার টাকা করে। এদের কেউ ব্যবসায়ী, কেউ আবার স্বল্প আয়ের মানুষ। করোনার কারণে মার্কেট বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের আয় বন্ধ। অন্যরা যারা ছোটখাটো কাজ করতেন তাও বন্ধ। তাই মানবিক কারণে ভাড়াটিয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে নজির স্থাপন করলেন তিনি।

কতদিন চলবে এভাবে ভাড়া মওকুফ- এমন প্রশ্নের জবাবে ফারজাহান তাহের ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আপাতত তিন মাস ভাড়া নিচ্ছি না। পরের পরিস্থিতি খারাপ হলে সামনে আরও সময় বাড়বে। এখনই যেহেতু নিচ্ছি না, খারাপ হলে তো নেয়ার প্রশ্নই আসে না। আমার নীতিতেই আমি থাকবো।’

সম্প্রতি নিজের ফেসবুকে একটা পোস্ট দেন চৌমুহনীর লাইফ কেয়ার হাসপাতালের চেয়ারম্যান ফারজানা তাহের। পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় গত মার্চ, এপ্রিল, মে তিন মাসের বাসা ভাড়া মওকুফ করলাম। আমি মহান হওয়ার জন্য এই স্ট্যাটাস নয়। আমার ফ্রেন্ডলিস্টে যদি এমন কেউ থাকেন তাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে ভাড়াটিয়াদের এই সাহায্যটুকু যেন করেন।’

তার এই উদ্যোগকে সবাই স্বাগত জানিয়েছেন। অন্যদেরও বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

ফারজানা তাহের লাইফ কেয়ার হাসপাতাল ছাড়াও চৌমুহনীতে তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত মফিজ উল্লা মেমোরিয়াল একাডেমির অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মার্চের শেষ দিন থেকে সাধারণ ছুটি চললেও তার এই প্রতিষ্ঠানের ২৬ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সবার নিয়মিত বেতন ও বোনাস দেয়া হয়েছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা সবাই বিনামূল্যে পড়াশোনা করার সুযোগ পান।

এছাড়াও তার প্রয়াত বাবার নামে চালু করা ‘মফিজ উল্লা স্মৃতি মেধা বৃত্তি পরীক্ষা’ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ১৯৯২ সাল থেকে। এটি পরিচালনা কমিটির সভাপতিও ফারজানা তাহের। প্রতিবছর সাড়ে তিনশো মেধাবী শিক্ষার্থীদের এখান থেকে বৃত্তি দেয়া হয়।

কারোনার সময় আয় কমে যাওয়ার অজুহাতে অনেক নামিদামি বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসক ও তাদের স্টাফদের বেতন ভাতা দিচ্ছে না বলে জানা গেছে। কিন্তু বিপরীত চিত্র লাইফ কেয়ার হাসপাতালে। এখানে চিকিৎসক, নার্স ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে সংখ্যাটা ১৩০ জনের মতো। সবার শতভাগ বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানালেন এর চেয়ারম্যান।

কেন ভাড়া মওকুফের চিন্তা এলো- এমন প্রশ্নের জবাবে ফারজানা তাহের বলেন, যারা আমার বাসায় ভাড়া থাকছেন তারা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন। তার থেকে কম আয়ের মানুষও আছেন। এই বিপদে মধ্যবিত্ত মানুষ কারো কাছে কিছু চাইতে পারছেন না। আবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কীভাবে তারা বাড়ি ভাড়া দেবেন। তাদের পাশে থাকার জন্য এই উদ্যোগ। কারণ তারা আমার কাছে কিছু চাইতে পারছেন না। তাই ভাড়াটার চিন্তা দূর হলে তারা স্বস্তি পাবেন। আমারও খুব একটা সমস্যাও হবে না ইনশাল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘অন্য যাদের সুযোগ আছে আমি সবার কাছে অনুরোধ করবো যতটুকু সম্ভব আপনার ভাড়াটিয়া হোক আর পাশের মানুষ হোক সহযোগিতা করুন। সামান্য সহযোগিতাও এসব মানুষের অনেক উপকারে আসবে।’

(ঢাকাটাইমস/২১মে/বিইউ/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ের সামনে দুই ককটেল বিস্ফোরণ
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১৬৯০ জন
এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও যোদ্ধাদের স্মরণে ‘বিআরপি’র মশাল মিছিল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা