বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের কারণ ও ভয়াবহতা!

মো. শাহিন রেজা
  প্রকাশিত : ২৮ মে ২০২০, ০৯:১১
অ- অ+

দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশকে বলা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের লীলাভূমি। প্রতি বছর এখানে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ হানা দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে অন্যান্য দুর্যোগের তুলনায় দিনে দিনে ঘূর্ণিঝড়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৭০ সালের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে।

১৯৭০, ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০৭, ২০১৯, ২০২০ সালের ঝড়গুলো ছিল বেশ ভয়ংকর। ঘর-বাড়ি ধ্বংস, ফসলের ক্ষেত নষ্ট, মানুষের জীবনহানি, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, ঘের, প্রাকৃতিক পরিবেশ, রাস্তাঘাট ইত্যাদির উপর উপর তান্ডব চালিয়ে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে জনজীবন। কেন বাংলাদেশকে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে?

বাংলাদেশের দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। যাকে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আদর্শ জায়গা ধরা হয়। এটি আকার অনেকটা ফানেল আকৃতির মত, ফলে দক্ষিনা বাতাস উপকূলে এসে বিভিন্ন দুর্যোগ সৃষ্টির সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে। সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় তৈরিতে সাধারণত ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় যা বঙ্গোপসাগরে বিরাজ করে। 'ওয়েদার আন্ডার গ্রাউন্ড ' নামে একটি ওয়েবসাইটে বিশ্বর সবচাইতে ভয়ঙ্কর ৩৫ টি মৌসুমি ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা রয়েছে, যার ২৬ টি ঝড়ই বঙ্গোপসাগরের।

বাংলাদেশ ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত। ফলে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেও প্রতি বছর ঝড়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্বের উষ্ণায়ন বৃদ্ধিও মূখ্য ভূমিকা পালন করছে। ২০০৯ সালে বিশ্ব ব্যাংক বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে ৫ টি ঝুঁকিপূর্ণ দিক চিহ্নত করে যার ৩ টিতে বাংলাদেশের নাম রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়ের তালিকায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি ও কৃষিক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ।

গত ২০ তারিখে শতাব্দীর ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হানে। ঝড়ের আগের দিন থেকেই ঝড়ো বৃষ্টি শুরু হয় এবং পরদিন সন্ধ্যাবেলা থেকে বতাসের গতিবেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। রাতের গভীরতা বাড়ার সাথে সাথে বাতাসের গতিবেগও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। এই মহা ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ১৬০-১৮০ কি. মি. এবং ১৫ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস প্লাবিত হয় বিভিন্ন গ্রাম।

এটি দেশের উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরায় বেশি তান্ডব চালায়। খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, নড়াইলসহ দেশের ১১ জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল অত্যাধিক। ফলে কাঁচা ঘরবাড়ি, রাস্তা, বাঁধ, গাছপালা, বিদ্যুৎ লাইন,গবাদিপশুর খামার নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১ লক্ষ ৭৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল। প্রাণ হারায় ১৮ জন মানুষ। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১ শত কোটি টাকা। উপকূলে ১৩/১৪ ঘন্টা বিভৎস রূপ নিয়ে অবস্থান করে আম্পান এবং শত বছরের যশোর রোডের গাছ গুলোও রক্ষা পাইনি এর ভয়াল থাবা থেকে।

২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের ভয়াবহতা দেখে ছিল বাংলাদেশ। ঘন্টায় ২১৫ কি. মি. গতিবেগ নিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানলেও ৩০ টিরও বেশি জেলা আক্রান্ত হয়ে ছিল, মৃত্যু বরণ করেছিল সাড়ে তিন হাজারের মত মানুষ। সিপিডির তথ্য মতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা।

ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ে ১৯৭০ সালে প্রায় ৫ লক্ষ, ১৯৮৮ সালে ১ লক্ষ ৮ হাজার এবং ১৯৯১ সালে ৫৭ হাজারেরও বেশি মানুষ মৃত্যু বরণ করে। এ ছড়াও আইলা, ফণী, মহসিন, নার্গিস ইত্যাদি ঘূর্ণিঝড় জন জীবনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এগুলোর ভয়াবহতা ছিল অত্যাধিক। বার বার অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দেশ ও দেশের মানুষ।

সরকারের যথাযথ পদক্ষেপের ফলে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। দুর্যোগের সময় জনজীবন, পরিবেশ, কৃষি সম্পদ, অবকাঠামো ইত্যাদির ক্ষতির পরিমাণ হ্রাসে কিছু পদক্ষেপ হ্রহণ করতে হবেঃ

১। প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী প্রস্তুত রাখতে হবে। যাতে দুর্যোগের পূর্ব থেকে দুর্যোগ পরবর্তি সময়ে কাজে লাগানো যায়।

২। দুর্যোগ মোকাবিলায় সুষ্ঠ পরিকল্পনা ও নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

৩। দুর্যোগের তথ্য সবার কাছে পোঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

৪। জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করতে হবে।

৫। জরুরি ত্রাণ, অর্থের যোগান, ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণে ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬। জলবায়ুকে স্বভাবিক রাখা ও উপকূলীয় বনায়নের পরিমাণ বৃদ্ধি করা।

৭। সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে।

লেখক: শিক্ষক ও নাগরিক সাংবাদিক

ঢাকাটাইমস/২৮মে/এসকেএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতিতে সরকারের সংশ্লিষ্টতা? যা বললেন উপদেষ্টা ফারুকী
ভেষজ ঔষধি ঢেঁড়স ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
গরমে স্বাস্থ্য রক্ষায় কোন পাত্রে কতটুকু পানি পান করা নিরাপদ
ইলন মাস্কের স্টারলিংকের অনুকূলে লাইসেন্স হস্তান্তর করল বিটিআরসি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা