আলফাডাঙ্গায় পল্লী বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল

মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর)
  প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২০, ২২:৫৬
অ- অ+

সরকারের অগ্রাধিকার উদ্যোগ বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান খাত হিসেবে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ খাতের উত্তরণ এখন দৃশ্যত। তারপরেও নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার গ্যাড়াকলে গ্রাহক ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতি এ যেন নিত্য সঙ্গী হয়ে আছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ২০/২৫ হাজার গ্রাহকের।

পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা কয়েক মাসের অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল হাতে পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থেকে মনগড়া ভৌতিক বিলের খড়গ চাপিয়ে নানামুখী ভোগান্তিসহ গ্রাহকের পকেট কেটে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

স্থানীয়রা জানায়, গত কয়েক মাস উপজেলার কোনো বাড়িতেই পল্লী বিদ্যুতের কোনো মিটার রিডার আসেননি রিডিং নিতে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে না আসার সুযোগ নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তাদের মনগড়াভাবে অসংখ্য গ্রাহকের বিল তৈরি করেছেন।

বিগত কয়েক মাসে মিটারে রিডিং কম থাকলেও বিলের কাগজে তা বেশি লিখে গ্রাহকদের হাতে বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে গ্রাহকদের অভিযোগ।

এ যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া, একদিকে করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত লকডাউন বা সাধারণ ছুটিতে কর্মহীন ঘরবন্দি মানুষের আর্থিক ও খাদ্য সংকটে জীবন-জীবিকা নাভিশ্বাস। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিলে বিলম্ব মাসুল মওকুফসহ গ্রাহকদের ভোগান্তি কমাতে সরকারি নির্দেশনাকেও মানছেন না। গড়বিলের কথা বলে দ্বিগুণ বা তিনগুন বেশি ভৌতিক বিলের বোঝা গ্রাহকের ঘাড়ে চাপিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ।

আলমগীর হোসেন নামে একজন গ্রাহক বলেন, আমার আগে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল আসত ৮শ' থেকে ৯শ' টাকা। অথচ এবার তা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে বিল এসেছে ১ হাজার ৫৮৫ টাকা। এটি ভূতুড়ে বিল ছাড়া কিছুই নয়।

উপজেলার চান্দড়া এলাকার বাসিন্দা সৈকত মাহমুদ নামে একজন বলেন, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী আমি মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করিনি। আমাদের জানা ছিল পূর্বের দুই মাসে বিল জুন মাসে গ্রহণ করা হবে এবং এতে কোন অতিরিক্ত চার্জ বা জরিমানা করা হবে না। তবে মে মাসের বিলে পূর্বের দুই মাসে বিল সমন্বয় করা হয়েছে এবং সেখানে দেখা যায় পূর্বের দুই মাসের বিলের উপরে ৫% হারে অতিরিক্ত অর্থ যোগ করা হয়েছে- যা ভ্যাট উল্লেখ করা আছে। এছাড়াও মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিল বা অনান্য সময়ের বিলের দ্বিগুন বিল এসেছে মে মাসে। যদিও আমার ব্যবহারের পরিমাণ একই ছিল।

উপজেলার গোপালপুর বাজারের এক দোকানি মাহফুজ হোসেন বলেন, গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে তার বিদ্যুৎ বিল ছিল পর্যায়ক্রমে ৩২৮ টাকা ও ৪৩২ টাকা, কিন্তু মে মাসে এসেছে ১ হাজার ৪৬৯ টাকা যা পূর্বের যে কোন মাসের প্রায় তিনগুণ। এ যেন এক ভৌতিক কাণ্ড।

সাজ্জাদ হোসেন নামে একজন বলেন, তার মার্চ ও এপ্রিল ২ মাসে বিল আসছে ৫৯৫ টাকা। কিন্তু প্রচণ্ড লোডশেডিং, ঠিকমত বিদ্যুৎ থাকে না তারপরেও শুধু মে মাসে আসছে ৭২৫ টাকা।

নাজমুল হাসান নামে একজন বলেন, লকডাউনের মাঝে আমার পরিবার ঢাকা এসে আটকা পড়ে দীর্ঘ দুই মাস বাড়ি তালা মারা ছিল। এসময় বাড়িতে বিদ্যুতের একটা লাইটও জ্বলেনি, অথচ এপ্রিলে ৫শ ও মে মাসে ৭শ টাকা বিল এসেছে।

জানতে চাইলে বোয়ালমারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ছানোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে এবার এমনটা হয়েছে। আমাদের মিটার রিডারে যারা কাজ করেন তারা বাইরে বের হতে পারেননি। তাই মার্চ বা এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ বিল গত বছরের একই সময়ের বিল বা বর্তমান মাসের বিদ্যুৎ ক্রয়েরভিত্তিতে গড় বিল প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে মে মাসে সব সমন্বয় করা হয়েছে। এরপর থেকে বিল স্বাভাবিক আসবে। এর পরেও যদি কোন অসঙ্গতি থাকে, তাহলে পরবর্তী মাসে তা সমন্বয় করে দেয়া হবে।

মে মাসের বিদ্যুৎ বিলে অতিরিক্ত টাকা আসার ব্যাপারে তিনি জানান, লকডাউনের কারণে ঘরে থাকা ও রমজান মাসে সেহরির সময় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করার জন্য কিছুটা বেশি আসছে।

(ঢাকাটাইমস/১জুন/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মুরাদনগরে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন মামলার মূলহোতা শাহপরানের ৫ দিনের রিমান্ডে
সিরিজ হারের পর ব্যর্থতা স্বীকার করে যা বললেন মিরাজ
আলোচিত দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের চাকরি ফেরত দেয়ার নির্দেশ
বগুড়ায় শ্বশুর ও পুত্রবধূকে হাত-পা বেঁধে গলা কেটে হত্যা  
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা