বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রয়োজনীয়তা

মো. আমিনুর রহমান
 | প্রকাশিত : ১১ জুলাই ২০২০, ১৬:২২

করোনা দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদুল আযহার পশু বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অনলাইন পশুর হাট ওয়েবপেজ তৈরি হয়েছে। কারণ একটাই, করোনা সংক্রমণ হ্রাস, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা।

করোনার কারণে অনেক মানুষ আজ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। করোনা ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশে নিত্য সঙ্গী। ঘূর্ণিঝড়, প্রাকৃতিক বন্যা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতি বছরই সাক্ষাত হয়। করোনা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্য দেশ থেকে তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তারপর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতির মাত্রা মারাত্মকরূপ নেয়নি।

বিশেষ করে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক যে সকল ব্যবসায়ী আছেন, তাদের ব্যবসা আজ অনেক ক্ষেত্রেই মন্দা। কিন্ত আমরা যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও সম্প্রতি ধনী ব্যক্তিদের তালিকা দেখি, সেখানে একটি চিত্র খুব স্পষ্ট; তা হল যারা ই-কমার্স ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদের সম্পদের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। আবার যারা জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ব্যবসা করে তাদের ব্যবসার মূল উপাদান পণ্য (অর্থ ব্যতীত) সরবরাহের সাথে উৎপাদনকারীর সম্পর্ক সরাসরি জড়িত। অর্থাৎ supply chain দেখলে বুঝা যায়, ব্যবসায়ীর ব্যবসা মন্দা হলে অনেক ক্ষেত্রেই উৎপাদনকারী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার, বৈশ্বিক দুর্যোগে অনেক মানুষ আজ বেকার। সেখানে অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ই-কমার্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে, ব্যবসা চালু রাখা গেল supply chain ঠিক থাকবে এবং উৎপাদনকারী তার উৎপাদনশীল পণ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখবে। ফলে সে সকল কাজে জড়িত ব্যক্তিরা বেকার থাকবে না আর বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতিও থাকবে না।

ই-কমার্স জনপ্রিয়তা করার জন্য দরকার সুসংগঠিত প্রচার-প্রচারনা ও নাগরিক সচেতনা। ধরুন, কেউ বলল, ই-কমার্স প্রচার বা এই সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার লেখালেখির কারন বা উদ্দেশ্য কি??? আপনার লাভ কি???

উত্তর একটাই, আমি আর্থিকভাবে কোনোভাবেই লাভবান হব না ও ই-কমার্সের কারণে আমার কোনো পদায়ন হবে না।

করোনায় বিশ্ব আজ অনেক ক্ষেত্রেই স্বার্থপর। অর্থনীতিতে বেশির ভাগ দেশেই ধরাশয়ী অবস্থা। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক রাষ্ট্রই তাদের পণ্য উৎপাদন, সংগ্রহ ও ব্যবসার ধারা চলমান রাখতে সজাগ। কোনো রাষ্ট্রই চায় না, তার দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়, উৎপাদন ধারা বাধাগ্রস্ত হোক। আবার কেউ চায় না, করোনা দুর্যোগ অব্যাহত থাকুক। আবার করোনার ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত, সুতরাং মহামারী হাত থেকে রক্ষা পেতে আমাদের দরকার সামাজিক সুরক্ষা। সামাজিক সুরক্ষা বজায় রেখে হাট-বাজার বা ব্যবসা পরিচালনা করাও দুঃসাধ্য। এক্ষেত্রে ই-কমার্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আমাদের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এমন কিছু উৎপাদন হয়, যা অন্য জেলা ও উপজেলা হতে ভিন্ন বা unique বলা যায়। কিন্ত সাধারণ মানুষ না জানা ও প্রচার-প্রচারণা না থাকার কারণে হয়ত সে পণ্য জনসাধারণের কাছে সহজে পৌঁছে না। ফলে একদিকে উৎপাদনকারী ক্রেতা হারাচ্ছে অপরদিকে ক্রেতা সে পণ্য ক্রয় করতে বঞ্চিত হচ্ছে।

আবার, অনেক জায়গায় দেখা যায়, বিখ্যাত পণ্য উৎপাদনকারীর নামে অনেক ব্যবসায়ী দোকান প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বেশির ভাগ দোকান ভুয়া স্বত্ত্বাধিকারী; যার ফলশ্রুতিতে ক্রেতা চরম মাত্রায় প্রতারিত হচ্ছে। কিন্ত ই-কমার্সের মাধ্যমে হলে, ঐ বিক্রেতার নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ থাকত। তাহলে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হত না এবং শুধু ব্যবসা জেলার মধ্যে সীমিত থাকত না। বরং তা ছড়িয়ে যেত সারা বাংলাদেশে।

মূলত: ৫টি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ই-কমার্স কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে-

১) মানুষ ঘরে থাকবে, করোনা সংক্রমণ কমবে;

২) বেকারদের কর্মসংস্থান হবে;

৩) ব্যবসা বাণিজ্য, দেশের অর্থনীতি ভাল থাকবে;

৪) ওই উপজেলায় কি কি পণ্য রয়েছে এবং কি কি বিখ্যাত তা জানা এবং

৫) যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ই-কর্মাস দেশের সীমা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশাধিকার।

তাই এখন দরকার আগ্রহী উদ্যোক্তর সরাসরি অংশগ্রহন ও প্রচারণা। বাংলাদেশ ভাল থাকলে, আপনি, আমি এবং আমরা ভাল থাকব।

লেখক: সিনিয়র সহকারী সচিব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :