জেকেজির ডা. সাবরিনার খুঁটির জোর কোথায়?

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২০, ০৮:৩৫ | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০২০, ০৭:৫৫

করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণার ঘটনা এখন টক অব দ্যা কান্ট্রি। এই ঘটনায় স্বামী আরিফের পর গ্রেপ্তার হয়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের সদ্য বরখাস্ত চিকিৎসক ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। কিন্তু কোন খুঁটির জোরে তারা ‘ধরাকে সরা জ্ঞানে’ এমন ভয়াবহ প্রতারণা করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন সেই উত্তরটিই এখন সবাই খুঁজছে।

ডা. সাবরিনার স্বামীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ওভাল গ্রুপ জেকেজি কেবল করোনা পরীক্ষার অনুমতিই নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ-এর অনুষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনারও কাজ করত। শুধু তাই নয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে আলাদা প্রভাব নিয়েও চলাফেরা করতে আরিফ দম্পতি।

তাদের সেই প্রভাবের উৎস সন্ধান করতে গিয়ে উঠে এসেছে নানা রকম তথ্য। এমন কথাও উঠেছে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের ইউনিট প্রধান ডা. কামরুল হাসান মিলনের প্রশ্রয়ে সাবরিনারা নানা অনৈতিক সুবিধা ভোগ করতেন। ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী চিকিৎসক হিসেবে ডা. কামরুল হাসান মিলনের অধীনস্ত ছিলেন।

অভিযোগ আছে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের-বিএমএ নেতা ডা. কামরুলের সুনজরে থাকার কারণেই সরকারি চিকিৎসক হয়েও নির্বিঘ্নে জেকেজির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন সাবরিনা। এমনকি হাসপাতালের বিভাগেও অনিয়মিত ছিলেন এই চিকিৎসক।

যদিও সাবরিনাদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে বিএমএর কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. কামরুল বলছেন, ‘একটি পক্ষ’ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছেন।

এছাড়াও সহকর্মী সাবরিনার সঙ্গে ডা. কামরুল হাসান মিলনের ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ রয়েছে বলেও ঘানাঘুষা আছে। তবে এসব অভিযোগকে ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা বলে দাবি করছেন এই সিনিয়র চিকিৎসক।

ডা. কামরুল হাসানের সঙ্গে সাবরিনার সম্পর্কের বিষয়টি নিয়েও মুখোরোচক নানা কথাবার্তা চালু রয়েছে হাসপাতালটির চিকিৎসক ও স্টাফদের মাঝেও। তাদের দুজনের ভার্চুয়াল আলাপনের অনেক স্ক্রিনশটও হাসপাতালটির অনেকের হাতে হাতে ঘুরছে, যা সাবরিনার স্বামী আরিফ সরবারহ করেছেন বলে জানা গেছে।

কামরুল-সাবরিনার এই সম্পর্ককে ঘিরেই গত ২ জুন হাসপাতালে মারামারির ঘটনাটি ঘটে। এই ঘটনায় শেরেবাংলা নগরে থানায় জিডিও করেছেন ডা. কামরুল হাসান।

এসব বিষয়ে ডা. কামরুল হাসান মিলন সোমবার রাতে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ওভাল গ্রুপকে কাজ পাইয়ে দিতে আমি কখনোই কোনো ভূমিকা রাখেনি। এদের (আরিফ-সাবরিনা) চিনি তিন থেকে চারবছর। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা বিএমএর কাজ এরা করে অনেকদিন ধরে।’

তার ভাষ্য, জেকেজিকাণ্ডে বিএমএ’র পক্ষ থেকে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে সেটাই তার বক্তব্য। করোনার রিপোর্ট নিয়ে প্রতারণার মতো জঘন্য ঘটনা থেকে নজর সরাতে এসব অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে বলেও দাবি তার।

যদিও হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কামরুল হাসান বিএমএর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন, সেটাই সাবরিনা-আরিফের বড় শক্তি। ওই ওভাল গ্রুপ মন্ত্রণালয়, বিএমএর সব কাজ করত। দেশে কি আর কোনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রতিষ্ঠান ছিলো না?’

হাসপাতালটির অন্য একজন চিকিৎসক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কামরুল স্যারের তদবিরেই করোনা টেস্টের অনুমোদন পায় জেকেজি। তিনি দীর্ঘদিন সাবরিনাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও জেকেজির ফলস করোনা রিপোর্টের কথা জানতেন। পরোক্ষভাবে তিনিও কিন্তু জড়িত।’

সেদিন কি হয়েছিল হাসপাতালে?

ডা. কামরুলের সঙ্গে নিজের চতুর্থ স্ত্রী সাবরিনার অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি জেনে প্রায় ২ মাস আগে তাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন আরিফ চৌধুরী। গ্রেপ্তারের আগে সাবরিনা তার মায়ের বাসায় থাকতেন।

এক পর্যায়ে ডা. কামরুল হাসানের সঙ্গে সাবরিনার মেসেঞ্জারে ‘আপত্তিকর’ কথাবার্তাও নজরে আসে আরিফের। পরে ২ জুন তিনি সরাসরি হাসপাতালে এসে তাদের দুজনকে এক রুমে দেখতে পেয়ে চটে যান। একপর্যায়ে তাদের তিনজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আরিফ চৌধুরী যাওয়ার সময় আশপাশের অনেককে সেই কথাবার্তার ছবি তুলে তা ফরওয়ার্ড করেন।

যদিও ডা. কামরুল হাসান ঢাকা টাইমসকে বলছেন, ‘এমন কিছু তো এতদিন শুনিনি। এখন একটি পক্ষ পানি ঘোলা করতে এমন মিথ্যা কথা ছড়াচ্ছে। এতবড় একটি প্রতারণার ঘটনা ঘটল সেটা থেকে নজর অন্যদিকে নিতে এসব বলা হচ্ছে।’

তাহলে সেদিন হাসপাতালে কি হয়েছিল জানতে চাইলে ডা. কামরুল বলেন, ‘আমার রুমে সেদিন অনেক সহকর্মী ছিলেন। সেদিন পরীক্ষা ছিল। ডা. সাবরিনা রুমে ঢুকলে তার কাছে পরীক্ষার বিষয় খোঁজ নেওয়ার মুহুর্তে তার স্বামী ঢুকে মারধর করতে শুরু করে। আমরা এর প্রতিবাদ করি। আসলে নেশাগ্রস্ত মানুষের তো সেন্স ঠিক থাকে না। পরে আমরা তাকে বের করে দেই। আমি এই ঘটনায় পরের দিন শেরেবাংলা নগর থানায় জিডিও করেছি।’

গ্রেপ্তারের আগে ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীও এমন সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেছেন, যদি তেমন কোনো সম্পর্ক থাকত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতো।

হাসপাতালের পরিচালক যা বলছেন

এসব বিষয় নিয়ে কতোটা কি জানেন প্রশ্ন রাখা হয়েছিল হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মীর জামাল উদ্দিনের কাছে। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে কেউ কখনো আমাকে কিছু বলেনি। বললে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হত। এখন জানার পর আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে মারধরের ঘটনায়ও তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে।’

তিনি জানান, গত নভেম্বরের ২৫ তারিখ এখানে যোগ দেয়ার পর তিনি বেশিদিন কাজ করার সুযোগ পাননি। এর মধ্যে আবার করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় চিকিৎসক, নার্সদের পিপিই, মাস্ক দেওয়াসহ নানা ধরণের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। এছাড়া তিনি নিজেও করোনা আক্রান্ত হয়ে একমাস ধরে বাসায় আছেন।

প্রতারণার অভিযোগে তার হাসপাতালের দায়িত্বশীল একজন চিকিৎসকের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে লজ্জাজনক হিসেবে দেখছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মীর জামাল উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘ডা. সাবরিনা যে জেকেজির চেয়ারম্যান ছিলেন তা আমি জানতামই না। করোনা প্রতারণার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আইন অনুযায়ী অপরাধীর বিচার হবে বলে আশা করছি।’

(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :