গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করেও শান্তি পাচ্ছে না সরকার: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:৫৯
অ- অ+

গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করেও সরকার শান্তি পাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, বিরোধীদল ও মতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য সরকার এতোদিন যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তা হলো গুম, অদৃশ্য ও বিচারবহির্ভূত হত্যা। এতেও তারা শান্তি পাচ্ছে না।

শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন রিজভী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক একেএম ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে ফিউচার অব বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, শুধু ভিন্নমতের জন্যই এক ব্যক্তির নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক একেএম ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

রিজভী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তারা কি কোন অন্যায় করেছে? দুর্নীতি করেছে? তাদেরকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইন রয়েছে সেই আইনের মধ্যে কী তারা পড়েছে? মোরাল টার্পিটিউড বা নৈতিক স্খলন হলে চাকরিচ্যুত করা যায়।’

অবিলম্বে এই দুই শিক্ষককে স্বপদে ফিরিয়ে নেয়ার দাবি করে রিজভী বলেন, ড. মোর্শেদকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কেন আপনারা জানেন। তিনি জিয়াউর রহমানের বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন সেজন্য। এটাই হচ্ছে অপরাধ। অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ফেসবুকে লিখতেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা করা হলো। আর চাকরিচ্যুত করা হলো ড. মোর্শেদকে। ওয়াহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। তার আগেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হলো। অর্থাৎ বিরোধীদল ও মতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য সরকার এতোদিন যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সেটা হলো গুম, অদৃশ্য ও বিচারবহির্ভূত হত্যা। এতেও তারা শান্তি পাচ্ছে না।

বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, ‘এখন তারা কি করছে ওদেরকে শেষ করে দিতে হবে। ওরা যেন না খেয়ে থাকে। ক্ষুধার্ত আর অনাহারে থাকে। তাই ভিন্নমতের লোকদেরকে তাদের কর্মকাণ্ড থেকে সরিয়ে দিতে হবে। শিক্ষকদের কর্মকাণ্ড কী? ছাত্রদের পড়ানো। শিক্ষকতা করা। ড. মোর্শেদ তাই করতেন। তিনি মেট্টিক থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যন্ত সবগুলোই ফার্স্টক্লাস পাওয়া। মেট্টিক ও ইন্টারমিডিয়েটে স্ট্যান্ড করেছে। তাকে বহিষ্কার করা হলো। ওয়াহিদুজ্জামানও সবগুলোতে প্রথম শ্রেণিপ্রাপ্ত শিক্ষক। না হলে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া যায় না। ড. মোর্শেদের অতুলনীয় মেধা। সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের বৃহত্তম প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি শিক্ষক। তাকে ভিন্নমতের কারণেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’

সরকারের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, ‘আপনি যদি বলে দেন যে, যারা ভিন্ন মতের ও দলে বিশ্বাসী তোমরা না খেয়ে থাকবে। তৃষ্ণায় তোমাদের পানি খাওয়ার অধিকার নাই। তোমরা ক্ষুধায় তৃষ্ণায় মরে যাও। এখন এই ধরনের কর্মসূচি দেন। আপনি তো গুম করেছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছেন। আপনি জনপ্রতিনিধিদের অদৃশ্য করেছেন। ইলিয়াস আলী নেই, চৌধুরী আলম নেই, সাইফুল ইসলাম হীরু নেই। এখন সরকার চাচ্ছে যে তোমরা নিজেরা নিজেরাই মরে যাও। তোমাদের চাকরিও থাকবে না। যে ছেলেটি চারটি ফার্স্টক্লাস পাওয়া, বোর্ড স্ট্যান্ড করা। সে কী করবে এখন?'

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্বশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তার একটি আলাদা স্বাধীনতা আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এতই মোসাহেব হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ভিসি সাহেব এতই পা-চাটা হয়েছে যে, তিনি ড. মোর্শেদকে চাকরিচ্যুত করার ব্যাপারে আইন-কানুনের তোয়াক্কা করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আইনে ড. মোর্শেদ ও ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকরিচ্যুত করা যায় না। চাকরিচ্যুত করা যায় একমাত্র শেখ হাসিনার চোখ রাঙানিতে, শেখ হাসিনার ধমকানিতে, তার হুমকিতে। এজন্যই ড. মোর্শেদ ও ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকরিচ্যুত করেছে ঢাবি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি।

রিজভী বলেন, এখানে আইনের দরকার পড়েনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিধি-নিষেধের দরকার পড়েনি। কোনো ন্যায় ন্যায্যতার দরকার হয়নি। দরকার পড়েছে একজন ব্যক্তির নির্দেশ। সেই হুকুম তামিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। আগে দেখতাম শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অনুমতি ছাড়া ঢুকতে পারতো না। এখন অবলীলায় ঢুকে যায়। এখন ভিসি কোনো আইনের তোয়াক্কা না করেই চাকরিচ্যুত করছে যারা ভিন্ন মতাবলম্বী, বিএনপি করে বা অন্য কোনো মতে বিশ্বাসী। এই হচ্ছে আজকের অবস্থা। অর্থাৎ বিএনপির লোক খেতে পারবে না, আহার করতে পারবে না, তোমাদের খাওয়ার অধিকার নেই, চলাচলের অধিকার নেই, মত প্রকাশের অধিকার নেই, বাঁচার অধিকার নেই।

তিনি আরও বলেন, আমার যদি চাকরি না থাকে খাবো কী করে? সন্তানদের পড়ালেখা করাবো কী করে? সরকারকে বলবো- এই অমানবিকতার অবসান ঘটান। ভাবছেন আপনার অনেক ক্ষমতা ধরে নিয়ে গুম করবেন, জেলে ভরে দেবেন।

সংগঠনের সভাপতি শওকত আজিজের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/বিইউ/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
প্রথম প্রেমের স্পর্শ: পর্ব ১২- স্মৃতির দংশনে হঠাৎ ঢাকায় ফেরা
বাংলাদেশিদের গোল্ডেন ভিসা দেবে দুবাই, দূর থেকে আবেদন করার সুযোগ
ফেনী পরিস্থিতির অবনতি, গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত, অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ বন্ধ
গাজায় মানবিক সংকটে ক্ষুব্ধ যুক্তরাজ্য, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা