ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে পুকুরপাড়ের বাড়িতে ফাটল

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ অক্টোবর ২০২০, ১৫:৪৩

নীলফামারীর সৈয়দপুরের একটি পুকুর থেকে ড্রেজার দিয়ে অনেক গভীর থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ওই পুকুরপাড়ের বাড়ির তিনটি ঘরের দেয়াল ও মেঝেতে বিশাল ফাটল দেখা দিয়েছে। দেয়ালের ফাটল থেকে প্লাস্টার সরে গিয়ে ইটগুলো খুলে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এতে বাড়িটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এ পরিস্থিতিতেই বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন উপজেলার বাঙ্গালিপুর ইউনিয়নের বাড়াইশালপাড়া কদমতলী এলাকার ওই বাড়ির ১০ জন মানুষ। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।

এ বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী পরিবারটি। সেইসঙ্গে পুকুরের মালিকপক্ষের দিক থেকে নানা ধরনের হুমকির সম্মুখীন হয়ে প্রতি মুহুর্তে হয়রানি ও দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুকুরটি অত্যন্ত গভীর। নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় কোন পাড় বাধানো নেই। উত্তর ও পূর্বদিকে একেবারে ফসলী জমিতে মিশে গেছে এবং পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে বাড়ির সীমানা ঘেষেই পুকুরটি বিদ্যমান। ফলে এদিকের পাড়ও বিলীন হয়ে দু’পাশের বাড়ির মাটিই এখন পুকুরে চলে যাওয়ার উপক্রম। পূর্বদিকের বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ সরকার সীমানায় নিজ উদ্যোগে মাটি ভরাট করে গাছ লাগানোয় উপরের মাটি রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু দক্ষিণের বাড়ির মালিক ভ্যান চালক আব্দুল করিম দরিদ্র হওয়ায় মাটি দিতে না পারায় তার বাড়ির অনেকাংশ ক্ষয়ে ক্ষয়ে পুকুরে চলে গেছে। এমনকি তার টয়লেটের সেনেটারি ট্যাংকের আশেপাশের মাটি সরে গিয়ে স্লাবগুলো বেড়িয়ে পড়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে পরিবারটি।

ভুক্তভোগী আব্দুল লতিফ বলেন, ‘পুকুরের পাড় না থাকায় আমার ও প্রতিবেশীর বসত বাড়ির মাটি খসে পড়ছে পুকুরে। প্রায় বর্ষাতেই এ পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারন করে। পুকুর মালিক ইদ্রিস আলীকে বার বার তার পুকুরের পাড় বাধতে বলা সত্বেও তিনি বিন্দু মাত্র কর্ণপাত করেননি। বাধ্য হয়ে কয়েক বছর আগে নিজেই মাটি ভরাট করে গাছ লাগিয়েছি। কিন্তু এ পরিস্থিতিতেও পুকুর থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলায় নিচে অনেক গভীর হয়েছে। ফলে পানির মধ্যেই দিন দিন বালু সরে গিয়ে আশেপাশের উঁচু বসতভিটার মাটি ক্রমেই ক্ষয়ে ক্ষয়ে পুকুরে চলে গেছে। এ কারণে আমার বাড়ির নিচের দিকে হয়তো খনির মত ফাকা অংশ বা গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ২৬ সেপ্টেম্বর সৈয়দপুরসহ রংপুর বিভাগে শতবর্ষের রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়। এতে আমার টিনসেড আধাপাকা বাড়ির ভিতের নিচের মাটি সরে গিয়ে ধসে পড়েছে। পাশে গাছ থাকায় পুকুরের ভেতরে হেলে না গেলেও তিনটি ঘরের দেয়াল ও মেঝে ভেঙে বিশালাকার ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এতে আমি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এবং পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছি। বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও নিরুপায় হয়ে এ অবস্থাতেও ঝুঁকিপূর্ণ ঘরেই থাকতে হচ্ছে।’

তিনি জানান, বিষয়টি পুকুর মালিককে জানালে তিনি উল্টো দোষারোপ করে বলছেন, ‘পুকুরপাড়ের বাড়ি কেনার সময় হুশ ছিলনা। বাড়িটা আমাদের নেয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমাদের না জানিয়েই তলে তলে নিয়েছেন। এখন মজা বোঝেন। আমরা কিছুই করতে পারব না।’ এমনকি প্রতিকার চেয়ে মেম্বার চেয়ারম্যান ও থানায় জানানোয় এখন তারা রাস্তা দিয়ে চলতে দেবেনা বা এখান থেকে উচ্ছেদ করবে বলে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে।

তারা স্থানীয় ও প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে না পারায় দিন দিন সকলের সঙ্গে অনাচার করে যাচ্ছেন। বাড়িটি কেনার পর থেকে বিগত ১১ বছর যাবৎ তারা নানাভাবে হয়রানি করে চলেছে বলে জানান ভুক্তভোগী।

তিনি জানান, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন কোন সুরাহা না করায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং প্রকাশ্যেই মামলায় জড়ানোসহ প্রাণনাশেরও হুমকি দিচ্ছে। এদিকে বাড়ি যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে এখন মেরামত করতে গেলে প্রায় ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ হবে। এ মূহূর্তে এত টাকা ব্যয় করার মত সামর্থ্য তার নেই। তিনি এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন।

এ বিষয়ে বাঙ্গালিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শ্রী প্রণোবেশ চন্দ্র বাগচী বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। পুকুরের কারনে বাড়িটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। দুই একদিনের মধ্যে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে সুরাহা করা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/৬অক্টোবর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :