চলনবিলে শামুক-ঝিনুক নিধন, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

শায়লা পারভীন, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)
 | প্রকাশিত : ১৭ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৫২

পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিলের অধ্যুষিত উপজেলাগুলোতে বর্ষার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বিল অঞ্চলগুলোতে অবাধে চলছে শামুক ও ঝিনুক নিধন। স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীরা প্রতিদিন বিল থেকে শামুক সংগ্রহ করে বিক্রি করছে। উন্মুক্ত জলাশয়ের প্রাকৃতিক ফিলটার হিসেবে পরিচিত এসব জলজ প্রাণী নিধনের ফলে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। জলাশয়ের মাছ, মাটি ও পানিতে বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে বিভিন্ন বিল অঞ্চল থেকে ব্যাপক হারে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করা হয়। জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাস চলে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহের কাজ। তবে এবার বর্ষার পানি দেরিতে নামায় আরো একমাস চলবে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ।

চলনবিলের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, সুজানগর ও আটঘরিয়া উপজেলার বড়বিল, সোনাগাদনের বিল, গাজনার বিলসহ ২০-২৫টি স্থানে প্রায় পাঁচশ নৌকায় স্থানীয় লোকজন প্রতিদিন অবৈধভাবে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করছে।

একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র শামুক সংগ্রহের জন্য স্থানীয় দরিদ্র চাষি এবং মৎস্যজীবীদের ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা দিয়েছে। প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিনটন শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করা হয়। ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি বাজারে শামুক বিক্রির বড় আড়ৎ রয়েছে।

প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একজন ব্যক্তি তিন থেকে চার বস্তা শামুক সংগহ করে থাকে। প্রতি বস্তা শামুক বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।

স্থানীয় বিক্রেতারা এই শামুক কিনে খুলনাসহ দক্ষিণ অঞ্চলের মাছের খামারগুলোতে মাছের খাদ্য হিসেবে বিক্রি করছেন। চলনবিলে প্রতি বছর প্রায় কোটি টাকার শামুক বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

শামুক সংগ্রহকারী রমজান শেখ জানান, বর্ষার সময়ে তাদের কাজ থাকে না, চাষাবাদ বন্ধ থাকে। পেটের দায়ে স্থানীয় শামুক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা নিয়ে তারা শামুক সংগ্রহ করেন। শামুক সংগ্রহ করে প্রতিদিন জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়।

শামুক ও ঝিনুকের ব্যবসায়ী নায়েব আলী জানান, ছোট বড় সব মিলিয়ে ২০ থেকে ২৫ জন ব্যবসায়ী রয়েছে। তারা স্থানীয় সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে শামুক কিনে পাইকারভাবে ঈশ্বরদীর মুলাডুলি বাজারের আড়তে বিক্রি করেন। বর্ষার তিন-চার মাস শামুক কেনা বেচা হয়।

ঝিনুক ব্যবসায়ীরা বলেন, দক্ষিণ অঞ্চলের খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলের চিংড়ির খামারের ব্যবসায়ীদের নিকট শামুক বিক্রি করে থাকি। তবে এ ব্যবসা বৈধ না অবৈধ বিষয়টি আমরা জানি না।

এ ব্যাপারে পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তোজাম্মেল হোসেন বলেন, ২০১২ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে শামুককে জলজ প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হলেও এই আইন অমান্য করে চলছে শামুক নিধন। শামুক সংগ্রহের অপরাধে জেল-জরিমানার বিধান থাকলেও আইন প্রয়োগ না হওয়ার কারণে থামছে না শামুক নিধন।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, উন্মুক্ত জলাশয়ের বিশেষ করে খাল, বিল, হাওয়র, বাওয়ের বংশ বিস্তার করে থাকে শামুক ও ঝিনুক। অন্যদিকে জলাশয়ের নোংরা পানির পোকামাকড় আহার করে পানি বিশুদ্ধকরণের কাজ করে। শামুক এবং ঝিনুক আমাদের নীরব বন্ধু। এই শান্ত ধীরগতি স্বভাবের প্রাণী নীরবে আমাদের উপকার করছে। উন্মুক্ত জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধকরণসহ স্থানীয় মিঠা পানির মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে শামুক।

বর্ষার শেষে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রাণীগুলো বেশিরভাগ মারা যায়। তখন শামুক এবং ঝিনুক কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। নির্বিচারে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ বন্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়াসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

তাড়াশ উপজেলা মৎস্য অফিসার মশগুল আজাদ বলেন, শামুক-ঝিনুক পানি পরিষ্কার রাখে ও জীব বৈচিত্র বাঁচিয়ে রাখে।

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম জানান, শামুক ঝিনুক সংগ্রহের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দিখছি। এ বিষয়ে তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনে শামুক সংগ্রহ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :