পূর্ব-প্রোথিত বিশ্বাস বিচারবুদ্ধি প্রয়োগের ক্ষমতাকে ভোঁতা করে

ডা. আমিনুল ইসলাম
  প্রকাশিত : ২২ নভেম্বর ২০২০, ১৫:৩৭| আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২০, ১৫:৪০
অ- অ+

পূর্ব-প্রোথিত ধারণা বা বিশ্বাস আমাদের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ ক্ষমতা, এমনকি কাণ্ডজ্ঞানকেও ভোঁতা করে দেয়। জন্মের পর দেখা চারপাশের বিশ্বাসধারা শিশু মনে এমনভাবেই প্রোথিত হয়ে যায় যে, সে সুনির্দিষ্ট সীমারখা বা ধারণাবদ্ধতার বাইরে আর যেতে পারে না। ফলে যেসব তত্ত্ব বা তথ্য তার মস্তিষ্কের built-in ভাবনার সঙ্গে মিলে যায় সে শুধু তাতেই খাপ খাইয়ে নেয়, বাকি সব, তা যতই সপ্রমাণ যুক্তিসিদ্ধ হোক না কেন, বর্জন বা ঘৃণা করতে শিখে। এমনকি প্রণালীবদ্ধভাবে চিন্তা করার মানসিক ক্ষমতা অর্জন করতে না পারলে বিদগ্ধ একাডেমিক পণ্ডিতরাও এ বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধকতার গলগ্রহ হয়ে থাকতে পারেন আজীবন।

ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা সম্প্রদায়গত ভাবাদর্শ অনেক ক্ষেত্রে আমাদের স্পষ্ট করে চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা কেড়ে নেয়। মস্তিষ্ককে প্রচ্ছন্ন করে আবেগ আর পূর্বপ্রসূত মনঃকল্পনাগুলোকে প্রকট করে তোলে। ক্রমশ অলক্ষ্যে তার জীবন, তার ভাবনা সংস্কারে বদ্ধ হয়ে থাকে। নির্ঝরের আর স্বপ্নভঙ্গ হয় না।

তবে একই সাথে মানুষের জাগরণ অপূর্ব বিশাল। উপযুক্ত শিক্ষা ও পরিবেশ পেলে এই মানুষই যুক্তিবৃত্তি, পর্যবেক্ষণ আর গাণিতিক অভীক্ষায় সৃষ্টি করে চলে বিজ্ঞানের অত্যাশ্চার্যগুলো, ভেদ করে চলে ধোঁয়াশা আর কুয়াশার সব অবগুণ্ঠন।

কোনো কিছু বিনা প্রশ্নে মেনে না নেয়া ও তার পক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণ হাজির করে তা প্রতিষ্ঠিত অথবা বাতিল ঘোষণা করার তাড়নাটিই গবেষণার সূচনা বিন্দু। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর শুরুটা হয় কোনো অভিজ্ঞতালব্ধ প্রস্তাব বা প্রকল্প তথা হাইপোথিসিস দিয়ে। জগতের কিছুই এমনি এমনি ঘটে না, প্রতিটা ঘটনারই একটা পূর্বঘটনা থাকে। এক বা একাধিক নিয়ামক নতুন কোনো নিয়ামকের জন্ম দেয়। এই যে দুই নিয়ামকের মধ্যে কি আন্তঃসম্পর্ক, কার্য কীভাবে পরিণতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়-তাকে উন্মেচিত করার প্রচেষ্টাই গবেষণা।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চেয়ার-সোফায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাটালে মেদভুঁড়ি হয়, মেদাক্ত পেট ডায়াবেটিস করে, ডায়াবেটিস বা মেদভুঁড়ি নিজেই হার্ট অ্যাটাকের কারণ, হার্ট অ্যাটাক মৃত্যু ঘটায়। এখানে বসে থাকাটা একটা সূচনা নিয়ামক। মেদভুঁড়ি, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক ও মৃত্যু অন্য চারটি পরিণতি নিয়ামক। এ পাঁচটিই আন্তঃসম্পর্কিত। একটি বাড়লে বা কমলে অন্যটি বাড়ে বা কমে। একজন ওজনাধিক্যে ভোগা ব্যক্তির অকাল মৃত্যু হলে- তার হায়াত ছিল না তাই মরে গেছে, আয়ু অরিপরিবর্তনীয়- এ বিশ্বাসের পথে বিজ্ঞান কখনই হাঁটবে না। বরং গবেষণা, নানা প্রকল্প, উপপ্রমেয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন নিয়ামকের যোগসূত্র প্রমাণ করে দেখিয়ে দিবে এই এই করলে তার আরও এত এত বছর বেঁচে থাকা হতো। এই যে সম্পর্কের সাথে সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদ এটাই গবেষণার প্রাথমিক সূত্র। মানবজাতির কল্যাণে এর প্রভাব বলে শেষ করার নয়। বিজ্ঞান বিনা প্রশ্নে নাহি মানে সূচ্যগ্র তথ্য।

লেখক: চিকিৎসক, এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (চেস্ট ডিজিস), বিএসএমএমইউ

ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/এসকেএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টয়োটার ব্যবসা হারাচ্ছে নাভানা?
সারজিস বনাম নওশাদ: ভোটে কার পাল্লা ভারি?
মনোহরদীতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা গণধোলাইয়ের শিকার
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদও জয় করব: নাহিদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা