বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর, কলেজের অধ্যক্ষসহ আটক ৩

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া যতীন ডিগ্রি কলেজে স্থাপিত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের থানায় ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।

আটক তিনজন হলেন- কয়া বাঘা যতীন ডিগ্রি কলেজের সভাপতি আইনজীবী নিজামুল হক চুন্নু, অধ্যক্ষ হারুনর রশিদ ও নৈশ প্রহরী খলিলুর রহমান।

এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানান, শুক্রবার সকালে কলেজ চত্বরে স্থাপিত বাঘা যতীনের আবক্ষ ভাস্কর্যটি ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান তারা। এরপর তারা বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম খান জানান, বিপ্লবী বাঘা যতীনের মুখ ও নাকের একাংশ ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কুষ্টিয়া শহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার পর আমরা প্রশাসনিকভাবে যেভাবে দুর্বৃত্তদের আটক করেছি এ ঘটনাতেও জড়িত দোষীদের খুব দ্রুত খুঁজে বের করা হবে।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান জানান, সকাল ১১টার দিকে স্থানীয়দের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর তদন্ত কাজ শুরু করেছে। যারাই জড়িত থাক তাদের খুব দ্রুত আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।

কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এসএম তানভির আরাফাত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, এ মাসের শুরুর দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের পর সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেখানেই ভাস্কর্য আছে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু এখানে বাঘা যতীনের আবক্ষ ভাস্কর্যটি আছে সেটা আমাদের জানানো হয়নি। সে কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারেন না। তাই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে ভাস্কর্য ভাঙার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন, পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সিরাজুল ইসলাম। জেলা প্রশাসক জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (বাঘা যতীন) ছিলেন একজন ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী নেতা। তিনি ‘বাঘা যতীন’ নামেই সকলের কাছে সমধিক পরিচিত। ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান রেখেছিলেন।

১৮৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার কয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা বাঘা যতীন ৩৫ বছর বয়সে ১৯১৫ সালে মারা যান। ৬ ডিসেম্বর ২০১৬ সালে ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী নেতা বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি তৈরি শেষে উদ্বোধন করা হয়।

ঢাকাটাইমস/১৮ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এমআর