মানুষের কাছে সময় থাকতেই মার্জনা চাইতে হয়

শামীম আজাদ, কবি
 | প্রকাশিত : ০২ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:৫৮

নারী নেত্রী গুণীজন মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়েশা খানম-আমাদের আয়শা আপা চলে গেলেন। চারদিকে কেবল হারাই হারাই। হায় হায়। একা হয়ে যাচ্ছি ক্রমশ! মনে হয় চলে যাচ্ছে আমার সময়ের সব গৌরব। আমার সকল শক্তি ও সাহস। আর কি পাব তাদের, আমার সময়ের এ সোনার মানুষদের!

মনে পড়ে আমাদের রোকেয়া হলের আয়শা আপার কথা। আর আশ্চর্য তাঁর কথা যখনি বলি অদ্ভুতভাবে তিনি একা এসে দাঁড়াননি কখনো। তাঁর সঙ্গে তাঁর পুরো বাহিনীর একজনও কেউ কাউকে ছেড়ে দাঁড়ান না। সাদাসিধা শাড়ি পরা আয়শা আপার কাছে দেখি মালেকা আপা, একটু দূরে আশা আপা, মিনু আপা, আভাদি আর সামনে এগিয়ে আসছেন বুয়াদি, ফোরকান আপা এমনকি আমার বন্ধু রোকেয়াও। এদের সবার পরা দেশি তাঁতের শাড়ি, অবয়ব প্রসাধনবিহীন। তার মধ্যে মুখখানা ফুটে আছে যেন পদ্ম। জল টল টল এমন সতেজ। তাদের টান করে চুল বাঁধা অথবা তা পিঠে ছাড়া।

হয়তো আমি আর শ্রাবণী বা আমি আর পারুল ঊর্শ্বাসে পরীক্ষার হলে ছুটছি- দেখা হয়ে গেল পথে আয়শা আপার সঙ্গে। কি রে তোদের পরীক্ষা! আমরা কথা বলি না। মাথা নাড়ি। মনে মনে আসলে মুখস্থ চরণ আওড়াতে চলেছি। চোখে ভয়ার্ত চাহনি। তিনি হেসে পিঠে ছোঁয়া দিয়ে বলেছেন, যা ভালো হবে পরীক্ষা! দেখিস অবাক হয়ে যাবি।

এ কেমন আশীর্বাদ যে মন থেকে শঙ্কা শুষে নেয়? এমন তো আগে শুনিনি। আমরা তা শুনে গুটি গুটি পায়ে লাইব্রেরির সামনের সরু রাস্তা দিয়ে কলা ভবনে প্রবেশ করে সোজা চারতলায় পরীক্ষার হলে চলে যাই। সন্ধ্যা বেলা কমন রুমে, এবার হয়তো মালেকা আপা, কিংবা আভাদি- কিরে কেমন হলো পরীক্ষা? কিছু লাগবে। অথবা শিগগির যা ডাইনিং হলে খাওয়ার শেষ বেল হচ্ছে!

হয়তো একুশের অনুষ্ঠানে আমার কবিতা আবৃত্তি করার কথা। শ্রাবণীর গান। তার আগে আমি, শ্রাবণী ও পারুল ভোরে প্রভাত ফেরিতে যাব। ঘুম ভাঙতো তাদের নরম ডাকে। আর ঘুম চোখে দরজা খুলতেই বিছানায় ছুঁড়ে দিয়েছেন তাজা বেলী ফুলের মালা। সঙ্গে কণ্ঠে তাড়া- শহীদ মিনার থেকে সোজা চলে আসবি রোকেয়া হলের মঞ্চে।

এই ছিল আয়শা আপা, মালেকা আপা, আভাদি- এদের নারী নেতৃত্ব। ওরে ঠেকাতে হবে, তারে ছিঁড়তে হবে, ঐটাকে আমাদের দলে যোগ দেওয়াতে হবে-এসব একদম ছিল না। রোকেয়া হলে অনেক পরিচর্যার মধ্যে এই নারী নেত্রীর স্নেহ ও প্রশ্রয়ের কথা আজ বড় মনে পড়ছে।

তিন বছর আগে পাঠক সমাবেশে হঠাৎ দেখা। সুন্দর সেই স্থানে তার মুখোমুখি হতেই সেই প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের ঘ্রাণ পাই। বিনয়ের সঙ্গে বলি, তখন তিনি আমার লেখার কিছু দিক ধরে এমন প্রশংসা করেন যে আমি অবাক হয়ে যাই। আদর করে টেনে নেন তিনি, যেখানেই তোর নাম শুনি বড় গর্ব লাগেরে... আমি গলে গিয়েছিলাম ঠিক ৬৯-এ রোকেয়া হলের মতো। আর মৃদু স্বরে বলেছিলাম, আপা তোমাদের ছায়ায়ই তো পা ফেলেছিলাম। তোমাদের অনুসরণ করতাম।

আপা কৃতজ্ঞ তোমার কাছে। সেই সাদাসিধা শাড়ি। চুলে পাক ধরা। ত্বক আর নেই আগের মতো টান টান। আহারে শিক্ষক সমতুল্য, আমার আয়শা আপা। ভাগ্যিস বলেছিলাম। মানুষের কাছে সময় থাকতেই মার্জনা চাইতে হয়। সুযোগ পেলেই কিছু কিছু ঋণের কথা স্বীকার করতে হয়। সুদূর বিলেত থেকে তোমার চরণে অপার শ্রদ্ধা রেখে গেলাম আপা।

লেখক: কবি

ঢাকাটাইমস/২জানুয়ারি/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :