ফেনীতে প্রকৌশলীকে ‘মারধর’, যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ফেনী
| আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৯:১০ | প্রকাশিত : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৯:০৫

ফেনীতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের গভীর নলকূপ স্থাপনে নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করে মারধরের শিকার হয়েছেন প্রকৌশলী সমেশ আলী। এ ঘটনায় ঠিকাদার জেলা যুবলীগের সহসম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূঞা ও তার দুই সহযোগিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও আহত প্রকৌশলী সমেশ আলী জানান, সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয় চত্বরে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমবিডিএস’র সত্ত্বাধিকারী যুবলীগ নেতা হুয়ায়ুন কবীর। কাজ নিম্নমানের হওয়ার খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সরেজমিনে তদন্তে যান সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সমেশ আলী। ঘটনাস্থলে গিয়ে ঠিকাদারকে সঠিকভাবে কাজ করার কথা বললেই তিনি ক্ষিপ্ত হন। কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে ঠিকাদার অকথ্য ভাষায় প্রকৌশলীকে গালমন্দ করেন। এক পর্যায়ে হুমায়ুন ও তার লোকজন প্রকৌশলীকে মারধর করেন। চিৎকার শুনে ভূমি কার্যালয়ের লোকজন ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে এবং হুয়ায়ুন কবির, তার সহযোগী জিলানী ও দেলোয়ারকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। এসময় আইয়ুব নামে একজন পালিয়ে যান। আহত সমেশ আলীকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সমেশ আলী চারজনকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা করা হয়।

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মমকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনকে গতকাল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

প্রকৌশলী সমেশ আলী জানান, ৭০০ ফুট বেশি গভীর নলকূপ স্থাপনের কথা থাকলেও হুমায়ুন কবীর শুধুমাত্র ৫৬০ ফুট পাইপ দিয়ে কাজ শেষ করে। এছাড়া নিম্নমানের পাইপ ব্যবহার করা হয়। এসবের প্রতিবাদ করলে উশৃঙ্খল হুমায়ুন তার উপর হামলা করে।

তিনি আরো জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমবিডিএস এর ৩৭৮টি গভীর নলকূপ প্রকল্প স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ২২৬টি নলকূপের আংশিক বিল উত্তোলণ করে নেয় হুমায়ুন কবীর। এ প্রকল্পের সবগুলো কাজেই নিম্নমানের সামগ্রী ও কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ না করায় টেকসই হচ্ছেনা।

এ বিষয়ে ফেনীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন জানান, ঘটনাটি অধিদপ্তরের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, একই বছর গভীর নলকূপ স্থাপণ প্রকল্পে অনিয়মের কারণে বিল উত্তোলণ করতে না দেয়ায় সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা সমেশ আলী মারধরের শিকার হয়েছিলেন।

জানা গেছে, হুমায়ুন রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত। তার দাপটে তটস্থ সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। মতের অমিল কিংবা তার কাজের অনিয়মের প্রতিবাদ করলে হামলার শিকার হতে হয়। বাদ যাননা কেউই। এমন বেপরোয়া আচরণে ক্ষুদ্ধ হলেও ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করেননা। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের টেন্ডার ভাগিয়ে নেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, শহরের একাডেমি এলাকার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সেখানে প্রকল্পের বড় বড় কাজই একচেটিয়া ভাগিয়ে নেন হুমায়ুন কবীর। এসব কাজের কোন হিসাব তিনি কর্মকর্তাদের দেন না। নিয়ম অনুযায়ী কাজ বুঝে নিতে চাইলে উল্টো তাদের উপর চড়াও হন। গত বছরের শেষ দিকে জেলাব্যাপী গভীর নলকূপ প্রকল্পের প্রতিটি নলকূপে সরকারি খরচ সাত হাজার টাকা করে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়ার কথা। অথচ প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আদায় করেন। বেশিরভাগ গ্রাহককেই দেয়া হয়নি মোটর ও পানির ট্যাংক।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে হুমায়ুন কবিরের হাতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এস্টিমেটর এসএম মাহফুজুর রহমানও লাঞ্ছিত হন। প্রকল্পের কোন তথ্য কাউকে না জানাতেও তাকে শাসিয়ে যান হুমায়ুন।

(ঢাকাটাইমস/১২ফেব্রুয়ারি/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :