লেখার লড়াই করে যাবো যতোদিন বাঁচি

পীর হাবিবুর রহমান
 | প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:২৩

কারো জীবন হঠাৎ নিভে যায়, কারও জীবন হঠাৎ থেমে যায়,কারওবা বদলে যায়। আমার জীবন আকস্মিক থেমে গেছে। টানা দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় পড়েছি। একটা প্রানবন্ত গতিময় মানুষের জীবন থেমে গেলেও আল্লাহর কাছে শোকরিয়া নিভে তো যায়নি! হার্টএটাকেও ফিরে এসেছি।

এবারও যুদ্ধের পথে ওঠে আসার সুযোগ। আমার কোন আফসোস নেই। আল্লাহ কত মহান দয়াময় মেহেরবান। মানুষের শক্তির প্রতি আজন্ম আস্হাশীল আমি কত সহস্রজনের নি:স্বার্থ দোয়া ভালোবাসা। মুম্বাই থেকে ঢাকা,কত ফোন মেসেজ। আহা। এমন মায়া মমতা মুগ্ধ করে।

সেদিন কক্সবাজার থেকে ৮৭বছরের এক প্রবীন ফোন করে বললেন, আমার লেখার ভক্ত। মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব শোনালেন। বললেন, একজন খবর দিয়েছে দেশে এসেছেন। লিখেছেন। আপনার কিছু হলে আমার খুব কষ্ট হবে, কার কি হবে জানিনা। চট্টগ্রাম থেকে ছোটবোন বন্যার ফোনে মুম্বাই থেকে বললাম, যাদের সাথে দেখা হয়নি, যার জন্য কিছু করিনি সেই নামাজে, প্রার্থনায় আমাকে সুস্হ দেখতে চায়! এতটা পাবার কথা নয়। তার স্বামী জাকিরও আমার ছোট ভাই। চবির আইনের ডীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিল। আদর্শিক জীবন। পরহেজগার। বন্যা বললো আপনার পাওনা ছিল। আপনি স্নেহ মমতা ভালোবাসা মন থেকে দিতে পারেন। তাই সবার এতো দোয়া ভালোবাসা। আহারে ভালোবাসার প্রতিদান হয় না।

কতজনের কথা এমন লিখবো? আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার রোজ কল করতেন, তাহাজজুদের নামাজে দোয়া করতেন। আজ সিলেটের দেওয়ান শমসের রাজা চৌধুরী বললেন, সাহস আছে নিজে খবর দিয়ে প্রমান করেছেন। জাকারিয়া চৌধুরী ভাইর মতোন প্রবীন বর্নাঢ্য চরিত্রের মানুষ বলেন,মনটা খারাপ কেবল দোয়া করি।আবেদ খান ভাই কল করে বললেন, তোমার লেখা পড়ে বিষন্ন সকাল আমার! কতজন কতভাবে! কার কথা, কতজনের কথা বলবো? পরিবার, বন্ধু,সহকর্মী, স্বজন, চেনা অচেনা কত মানুষ!

মানুষের ভালোবাসার কাছে আমি এতোটাই অভিভূত যে কত কিছু আজকাল অবলীলায় ঝেড়ে ফেলি। দেখি। মনে কিছু নেই না। মানুষ একজন যোদ্ধাকে এত দিয়েছে ভাবলেই মনে হয়, এতটাতো আশা করিনি! আজ কেমো নিলাম। বুধবার রক্ত পরীক্ষা, বৃহষ্পতিবার কেমো। ঘরে ছেলে মেয়ের আড্ডায় কাটে। অফিস যাই। আর কোথাও না। দর্শন নাই কারও সাথে। আমার জীবন। অনেক স্বপ্ন শেষ। লেখার লড়াই করে যাবো যতোদিন বাঁচি। আল্লাহকে বলেছি, মানুষের জন্য লিখলে তুমি তা কেড়ে নিওনা, ভিন্নমত থাকবে।

শহরের এক ছোট ভাই খুঁজে বের করে কেবিনে হাজির। কেমো তখন শেষ। রোজ দেখতে চাওয়া কতজনকে বারণ করি। করোনা থেকে বাঁচতে হবে। বাঁচার লড়াই। এক মুহুর্তের আনন্দ জীবনের অমূল্য সম্পদ। কারও জন্য কারও কিছুই আটকায় না। নাজিম হিকমত বলেছেন, শোকের আয়ু এক বছর। আমি বলি আরও কত কম! বেঁচে গিয়েও অনেক কিছু পাঠ নেয়া যায়। সন্তানদের বুকে বেদনা বাজে দীর্ঘকাল।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কলামিস্ট ও নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকাটাইমস/১৬ফেব্রুয়ারি/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :