করোনায় থমকে গেছে ধামইরহাটের মৃৎশিল্প

অরিন্দম মাহমুদ, ধামইরহাট (নওগাঁ)
 | প্রকাশিত : ১৪ এপ্রিল ২০২১, ১৬:২৬

করোনার ছাপ পড়েছে কুমার পল্লীতে। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে নেই কোনো দৌড়ঝাপ। অথচ পহেলা বৈশাখ এলেই মৃৎ শিল্পীদের রংয়ের তুলিতে ফুটে উঠতো এক সময়ের হারিয়ে যাওয়া বাঙালির ঐতিহ্য।

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় হাতে গোনা রয়েছে কয়েকটি কুমার পরিবার। বৈশাখ আসার কয়েক মাস আগে থেকে সারাটা দিন তাদেরকে মাটির জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতে হতো। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত লেগেছে বিলুপ্তীর পথে থাকা মৃৎশিল্পের উপর। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এ শিল্পটির ‘মৃত্যু’ হতে পারে, এমনই আশঙ্কা করছেন কুমার পরিবারের সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে কুমার পল্লীতে গিয়ে দেখা গেছে সুনসান নিরবতা। বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে তাদের নেই কোনো প্রস্তুতি। একদিকে মহামারি করোনা। অন্যদিকে লকডাউন। মাটির তৈজসপত্র বিক্রি শূণ্যের কোঠায় নেমে গেছে। এতে কপালে ভাঁজ পরেছে সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া এই পরিবারগুলোর।

বাড়ির উঠুনে খোলা আকাশের নিচে মাটির হাঁড়ি পাতিল নিয়ে ক্রেতাশূণ্য দোকানে বসে থাকতে দেখা গেলো ষাটোর্ধ্ব বয়সী শ্রীমতি রজলী পালকে। দোকানে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা মাটির থালা, প্রদীপ, ভাপা পিঠার খুলিসহ অনেক কিছুর দেখা মিলল সেখানে। এগুলোর অনেক কিছু যান্ত্রিক সময়ের চাপে হারিয়ে গেছে। অথচ এক সময় বাংলার হারিয়ে যাওয়া মাটির এসব জিনিষপত্র ছাড়া গৃহস্থালীর কাজ করা প্রায় অসম্ভব ছিল।

বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা মাটির ব্যাংক মান অনুযায়ী ১০ থেকে ৬০ টাকা, পাতিল ২০ থেকে ৪০ টাকা, গরুর খাবারের জন্য চারি ৩০ থেকে ৬০ টাকা, পানি রাখার কলস ৪০ টাকা, কবুতরের ঘর ১৫ টাকা, পাতিলের ঢাকনা ১০ থেকে ৩০ টাকা, মাটির ফুলদানি ২০ থেকে ৫০০ টাকা, শিশুদের খেলনা প্রতি পিচ ১০ টাকা, মাটির থালা ৪০ থেকে ১৫০ টাকা, মগ ২০ থেকে ৮০ টাকা ফুলের টব ২০ থেকে ১০০ টাকা, বাটনা ৩০ থেকে ৫০ টাকা, সাত পিঠার বাটি ৪০ টাকা, পানের বাটা ৩০ টাকা ও মাটির প্রদীপের দাম ২০ টাকা রাখা হয়েছে।

তবে মাটির দুষ্প্রাপ্যতার সঙ্গে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে মাটির তৈজসপত্র তৈরি ও বিক্রয়ে খুব একটা লাভের মুখ দেখছেন না তারা। তাদের অভিযোগ সরকারের অর্থনৈতিক সাহায্য সহযোগিতা না পেলে এ শিল্প টিকিয়ে রাখা কখনোই সম্ভব হবে না।

মৃৎশিল্পের জাদুকর রামায়ণ প্রসাদ পাল বলেন, ‘বাবু আমি এখন আমার বংশের ১৪তম পুরুষের হাল ধরে আছি। আমার তিন ছেলে, বড় ছেলে মহেশ কুমার পাল এবং ছোট ছেলে সঞ্জয় কুমার পাল। মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য ছেলেদের কাজ করতে বললেই তারা বলে- বাবা, মৃৎশিল্প দিয়ে আমাদের জীবন সংসার চলবে না। প্রয়োজনে মাঠে কাজ করবো, ভ্যান রিকশা চালাবো ইত্যাদি বলে এড়িয়ে যেতো। তবে আমার দ্বিতীয় ছেলে সন্তোষ কুমার পালই আমার বংশের একমাত্র শেষ ভরসা, কেবল মাত্র সেই আমার ১৪ পুরুষের হাল ধরে আছে।

শুধু বৈশাখ নববর্ষ এলেই সাহেব বাবুদের আমাদের কথা মনে পরে। বিশেষ করে পান্তা-ইলিশে আমাদের মাটির থালা দরকার হয়। এখন কেউ মনে রাখে না। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন আমাদের দিকে নজর না দিলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। অক্ষেপ করে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শ্রীমতি রজলী পাল।

(ঢাকাটাইমস/১৪এপ্রিল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :