সমস্যায় ভরা ‘বেগমগঞ্জ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’

উন্নত ও আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার উদ্দেশে ১৯৮১ সালে ৫১ দশমিক ১৯ একর জমি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় নোয়াখালীর ‘বেগমগঞ্জ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’। যন্ত্রপাতি এবং গবেষণার উপকরণের সংকটসহ প্রতিষ্ঠানটি এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। তলানিতে আবাসিক সুবিধাও। নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, বর্ষায় ক্যাম্পাস জুড়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। এছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি।

কিছুটা অবকাঠামো থাকলেও জনবল সংকটে প্রশাসনিক কার্যক্রমে বেগ পেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। যেখানে প্রতিষ্ঠানটিকে কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রাখার কথা, সেখানে ৪০ বছর পরও সংকটে এ বিদ্যাপীঠটি।

জানা গেছে, দেশের টেকসই কৃষি উন্নয়নে দক্ষ জনবল তথা ডিপ্লোমা কৃষিবিদ তৈরির উদ্দেশে মূলত জেলার প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী চৌরাস্তায় সংলগ্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ উইং ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড যৌথভাবে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালিত করে আসছে। ১৯৮১-৮২ শিক্ষাবর্ষের শুরুতে দুই বছর মেয়াদী বিভাগীয় কৃষি ডিপ্লোমা কোর্স কারিকুলাম নিয়ে যাত্রা শুরু করে পর্যায়ক্রমে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে তিন বছর মেয়াদী এবং বর্তমানে চার বছর মেয়াদী কৃষি ডিপ্লোমা নিয়ে চলছে এর শিক্ষা কার্যক্রম।

সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষার্থী ও ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ কৃষি ইনস্টিটিউটে আটটি সেমিস্টারে বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে ৯৮১ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৪০৫ ও ছাত্র রয়েছে ৫৭৬ জন। অথচ সব মিলিয়ে ছাত্রাবাস/ছাত্রীনিবাসে কক্ষ রয়েছে মাত্র ২৮২টি। যার মধ্যে ছাত্রীদের কক্ষ মাত্র ৩৬টি। ফলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বিভিন্ন স্থানে আবাসিকে থাকতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত অর্থ গুণার পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের আক্ষেপ, ৫০টি বিষয়ের বিপরীতে একাডেমিক ভবন রয়েছে মাত্র একটি। আর তাতে শ্রেণিকক্ষ মাত্র পাঁচটি। শিক্ষার্থী অনুপাতে একাডেমিক ভবন ও শ্রেণিকক্ষ অপ্রতুল। একটি লাইব্রেরি থাকলেও তাতে রযেছে বইয়ের স্বল্পতা। এতে বাহ্যিক জ্ঞান আহরনে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। কিছুটা আধুনিকমানের ল্যাবরেটরি থাকলেও গবেষণার জন্য নেই পর্যাপ্ত উপকরণ। এতে মৌলিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। কম্পিউটার ল্যাব থাকলেও সেখানেও নেই পর্যাপ্ত কম্পিউটার।

একাধিক শিক্ষার্থীর জানান, এখানে হাতে কলমে শিক্ষার ওপর জোর দেওয়ার কথা। কিন্তু ল্যাবরেটরিতে পর্যাপ্ত উপকরণ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি কম থাকায় তারা মৌলিক জ্ঞান নিতে পারছেন না। এখানে জরুরি চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে হঠ্যাৎ করে কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবা নিতে পারছে না। বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির জন্য একটি টিউবওয়েল বসালেও তা পর্যাপ্ত নয়। এত বড় ক্যাম্পাসে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রায় সময় শিক্ষার্থীদের আবাসিক কক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খোয়া যাচ্ছে। বহিরাগতরাও নানা সময় ঝামেলা করে। কিছুদিন পূর্বে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ডুকে মারামারি করে, তারা এক কিশোরকে ছুরিকাঘাতও করে। নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।

শিক্ষার্থীদের দাবি, কৃষির মান বাড়াতে হলে ক্যাম্পাস করতে হবে নিরাপদ। পর্যাপ্ত গবেষণা উপকরণ, শিক্ষক, বই এর পাশাপাশি সকল শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

নিরাপত্তার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ১২ জন স্বশস্ত্র আনসারের জন্য তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখেছেন। তবে এখন পর্যন্ত আশা পাননি। আবেদনের চেয়ে নিরাপত্তাকর্মী আরও বেশি প্রয়োজন। এখন অন্তত ১২ জন হলেও চলে। তাহলে তিন সিফটে চারজন করে দায়িত্ব পালন করলেও ক্যাম্পাসে কিছুটা নিরাপত্তা পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সিটিটিউটের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ইন্সিটিটিউটটি মূলত আভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে এটিতে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা চালু হলেও এক অর্থে তা এখনও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। আগে ডিপ্লোমার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে এটিআইকে। এ জন্য তিনি নানাভাবে কাজ করছেন বলেও জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ধরণা দিচ্ছেন বার বার।

এক প্রশ্নে ড. জাহাঙ্গীর বলেন, জেলায় যে পরিমাণ লবাণাক্ত ভূমি রয়েছে, তা নিয়ে গবেষণা দরকার। নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলে কৃষির বেশ সম্ভাবনাও রয়েছে। কৃষিখাতকে উন্নত করার জন্য এ অঞ্চলে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। তবে এজন্য রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখা জরুরি বলে মনে করেন এ কৃষিবিদ।

(ঢাকাটাইমস/২৩মে/পিএল)