মিতু হত্যায় মুছার স্ত্রী পান্নার জবানবন্দি

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২১, ২১:৪৪

চট্টগ্রামের আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় পলাতক আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।

সোমবার চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মো. রেজার কাছে পান্না আক্তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, পান্না আক্তার এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার স্বামী মুছার সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরেছেন। এছাড়া মিতু হত্যায় গ্রেপ্তার তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে মুছা কাজ করতেন সেই কথাও আদালতকে জানান পান্না। তবে জবানবন্দি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

এর আগে মিতু হত্যায় বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তারের পর গত ১৫ মে মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেন। তিনি বলেন, ‘এতদিন সন্তানদের নিরাপত্তার ভয়ে মুখ খুলিনি। পাঁচটি বছর স্বামীর ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন কেটেছে। আমার স্বামী বাবুল আক্তার ও প্রশাসনের সোর্স ছিলেন। আমার স্বামী যদি দোষী হয় তাহলে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। তাকে আদালতে হাজির করা হোক। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই। মামলার স্বার্থে মুছাকে আদালতে হাজির করা হোক।’

পান্না বলেছিলেন, ‘মিতু হত্যার দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যখন মুছা দরজা খুলে বাসায় প্রবেশ করছিলেন, তখন জানতে পারি তিনি সকালে বের হয়েছিলেন। তার পরনে ছিল থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। শরীরে ছিল টি শার্ট। হাতে দোকান থেকে কেনা পরোটা নিয়ে বাসায় ঢোকেন। নাস্তা করার সময় তিনি টিভি দেখছিলেন। টিভিতে দেখে তখন মিতু হত্যার বিষয়টি আমি জানতে পারি। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার পরিচিত লোকের স্ত্রীকে মেরে ফেলছে আপনি দেখতে যাবেন না? তখন তিনি বলেন, তিনি তো ঢাকায়, ওখানে সাধারণ মানুষের কাজ নেই। উনি আসলে দেখা করে আসবো।’

পান্না আক্তার বলেন, এর কিছুদিন পর মোবাইল বাসায় রেখে বাইরে যান মুছা। এসময় একটা টিঅ্যান্ডটি নম্বর থেকে ফোন আসে। ওই প্রান্ত থেকে একজন জানতে চান মুছা কোথায়। তিনি বাইরে গেছেন এটা জানালে কল করা ব্যক্তি বলেন, তাকে সাবধানে থাকতে বলবেন।

তখনও মিতু হত্যায় মুছা জড়িত তা তিনি জানতেন না জানিয়ে পান্না বলেন, ২০১৬ সালের ১৮ বা ১৯ জুন মুছার কাছে একটা ফোন আসে। তখন তিনি আমার কাছ থেকে একটু সরে যান। ওই প্রান্ত থেকে কী বলেছে তা শুনিনি। কিন্তু মুছাকে বলতে শুনেছি- আমার পরিবারের কোনো ক্ষতি হলে আমি মুখ খুলবো স্যার। ফোন রেখে দেয়ার পর মিতু হত্যায় তিনি জড়িত কি না জানতে চাইলে মুছা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি চাই নাই। আমাকে বাধ্য করা হয়েছে। নয়তো আমাকে বাঁচতে দিতো না। আমি সরাসরি ছিলাম না। লোকজন ঠিক করে দিয়েছি।’ ফোন করা ব্যক্তি বাবুল আক্তার ছিলেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে পরবর্তী সময়ে মামলার গতিপথ পাল্টে যায়। এক পর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১১ মে ডেকে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে ১২ মে বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা। স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। রিমান্ড শেষে প্রথমে আদালতে জবানবন্দি দেয়ার কথা থাকলেও পরে জবানবন্দি দেননি বাবুল। তারপর তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তাকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/৩১মে/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বন্দর নগরী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :