যমুনায় বাড়ছে পানি, নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

ফরমান শেখ, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)
  প্রকাশিত : ১৭ জুন ২০২১, ১৭:৪১
অ- অ+

যমুনা নদীতে বাড়ছে পানি। আগাম বর্ষাকে মোকাবেলা ও প্রস্তুতি নিতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ছোট-বড় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। এছাড়াও কারিগরদের পাশাপাশি পুরনো নৌকাগুলোও মেরামতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের নৌকার মাঝিরা। এ মৌসুমে চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের একটুও দম ফেলার ফুসরত নেই। তবে সারাবছর নৌকা তৈরির কোনো কাজ না থাকলেও বর্ষা মৌসুমের জন্য অপেক্ষায় থাকেন কারিগররা।

সরেজমিনে উপজেলার গাবসারা, গোবিন্দাসী, অর্জুনা ও নিকরাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট-বাজার ও এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কারিগররা তাদের নিপূণ ছোঁয়ায় কেউ কেউ ছোট বড় নৌকা বানাচ্ছে। কেউ নৌকাগুলোর রঙ করতে আলকাতরা ও গাবের পানি ব্যবহার করছে। কেউ করাত দিয়ে কাঠ কাটছে কেউ হাতুড়ি দিয়ে নৌকায় পেরেক লাগাতে ব্যস্ত।

এরই মাঝে কথা হয় নৌকা তৈরির কারিগর আজমত আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে বন্যার সময় নৌকা তৈরি করি। বড় নৌকার চেয়ে ছোট ডিঙ্গি নৌকার চাহিদা বেশি। এতে প্রতিটি ১৪ হাতের নৌকা বানাতে সাত হাজার ৫০০ থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। বিক্রি করা যায় নয় থেকে ১০ হাজার টাকায়। এসব নৌকাগুলোতে ব্যবহার হচ্ছে- শিমুল, আম, কাঁঠাল, মেহগনি, ইউকালেক্টর, কড়ই ও কদমসহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ।

গাবাসারা এলাকার কাঠের বেপারী মো. লালচাঁন বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে নৌকা তৈরির কাঠ কেনার জন্য কেউ আসে না। সে সময়টা ব্যবসা মন্দা হয়ে পড়ে। নৌকা তৈরির কারিগররাও খুব কষ্টে সময় পার করে। কিন্তু বর্ষা মৌসুম আসলে নৌকার ব্যবহার বেশি করেন চরাঞ্চলের মানুষ। চরাঞ্চলের মানুষের বর্ষা মৌসুমে একমাত্র যাতায়াতের বাহন হিসেবে নৌকাই ভরসা।

তিনি বলেন, ‘কারিগর অনুযায়ী প্রতিদিন চার থেকে আটটি করে নৌকা তৈরি হচ্ছে। ছোট নৌকা বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা। একটা নৌকা তৈরির জন্য কারিগরদের পারিশ্রমিক দেয়া হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। গোবিন্দাসীতে সপ্তাহে ররিবার ও বৃহস্পতিবার হাট বসে। হাটের দুই দিন আমাদের নৌকা বিক্রি বেশি হয়। তাছাড়াও প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাতটা করে নৌকা বিক্রি হচ্ছে। কিনতে আসেন দূর-দূরান্তের বিভিন্ন এলাকার লোকজন।’

গাবসারা এলাকার কারিগর হারেছ আলী বলেন, ‘সারাবছর বিভিন্ন এলাকায় ঘর বাড়ি মেরামত করি। কিন্তু বন্যার সময় এলে নৌকা তৈরির কাজ করি। এই সময় নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। আমরাও অতিরিক্ত কিছু আয় করতে পারি। একটি ছোট নৌকা তৈরি করতে (কড়ি কাঠের) চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকার কাঠ ও ৫০০ টাকার বাঁশ লাগে।

তারা আরও জানান, একটি নৌকা বানাতে দুজনের দুদিন সময় লাগে। তাদের মজুরি দিতে হয় দুই হাজার টাকা। তবে কাঠের দাম ও হেলপারদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় লাভ তুলনামূলকভাবে কম হয়। বাণিজ্যিকভাবে বড় আকারের একটি নৌকা তৈরি করতে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়।

গাবসারা থেকে নৌকা কিনতে আসা জেলে মো. ছাত্তার হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন যমুনা নদীতে বর্ষার পানি যমুনা নদীতে বাড়ছে। তার জন্য আমরা স্থানীয় বাজারের নৌকা তৈরির কারিগরদের কাছে গিয়ে নতুন নৌকা ক্রয় করছি। যাদের কাছে গত বছরের পুরাতন নৌকা আছে তারা এখন সেগুলো মেরামত করতে ব্যস্ত।’

সবুর আলী জানান, বর্ষা মৌসুম এলেই নিচু এলাকাতে নৌকার প্রয়োজন দেখা দেয়। নিচু এলাকায় হওয়ায় বন্যার পানিতে রাস্তা তলিয়ে যায়। তখন নৌকা ছাড়া চলাচলের কোনো উপায় থাকে না। গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান বলেন, বর্ষা মৌসুমে পুরো গাবসারা ইউনিয়নটি পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে নৌকা ছাড়া কেউ চলাচল করতে পারে না। নৌকাই যাতায়াতের একমাত্র ভরসা

উপজেলার গোবিন্দাসী হাটে নৌকা কিনতে আসা মো. কাদের মন্ডল বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে আমরা গোবিন্দাসী হাটে নৌকা কিনতে আসি। এখান থেকে নৌকা কিনে নিয়ে যাই। বর্ষা মৌসুমে আমরা এই নৌকা ব্যবহার করে মাছ ধরি। আবার অনেক সময় অন্যদের পারাপার করে থাকি। এখানকার নৌকাগুলো অনেক ভালো এবং মজবুত।’

(ঢাকাটাইমস/১৭জুন/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
যুবদল কর্মী আরিফ হত্যা: ৭ দিনের রিমান্ডে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন
বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ধস, ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা
রাজস্থানের চুরুতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর জাগুয়ার যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত
গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে আ.লীগেরও বিচার হওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা