একটি সেতুর আশায় বিরামপুরের ১০ গ্রামবাসী

নূরে আলম সিদ্দিকী নূর, বিরামপুর (দিনাজপুর)
  প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:৩২| আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:৪৬
অ- অ+

দিনাজপুরের বিরামপুর ও হাকিমপুর উপজেলার বুকচিরে বয়ে যাওয়া চৌঘুরিয়া ঘাটে ছোট যমুনা নদী। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই এলাকাবাসীর দাবি, একটি স্বপ্নের সেতুর। সেই দাবি আজও পূরণ হয়নি। দুই উপজেলার চৌঘুরিয়া ও ঘাসুরিয়া গ্রামের মধ্যবর্তী অংশ দিয়ে চলাচল করা ১০ গ্রামের ২ হাজার পানচাষিসহ প্রায় ২০ হাজার মানুষ একটি সেতুর অভাবে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী চৌঘুরিয়া গ্রামের সাথে ছোট যমুনা নদীর পূর্বপাশে হাকিমপুর উপজেলার নয়ানগর গ্রামের দূরত্ব মাত্র ৫০০ মিটার। কিন্তু এ নদীতে কোনো সেতু না থাকায় নদীর পশ্চিম পাশের চৌঘুরিয়া, রামচন্দ্রপুর, রণগাঁও, দামোদরপুর ও দাউদপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে কাটলাবাজার ও খট্টামাধবপাড়া গ্রাম হয়ে মোটরসাইকেল বা রিকশা-ভ্যানে করে নয়ানগর যেতে সড়কপথে প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরতে হয়।

এলাকাবাসীর দাবি, ছোট নদীর উপর একটি পাকা সেতু হলে দূরত্ব কমে যাবে। এতে করে দুই উপজেলার মানুষের চলাচল আরও সহজ ও সাশ্রয়ী হবে।

নদীর পশ্চিম পাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে অনেক স্কুল শিক্ষার্থী ও শতাধিক পানচাষি নৌকায় করে পূর্বপাশে নিয়মিত চলাচল করেন। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ নয়ানগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও হাকিমপুর ডিগ্রি কলেজে লেখাপড়া করে। এসব শিক্ষার্থীরা বর্ষা মৌসুমে নদীর ঘাটে সময় মতো নৌকা না পাওয়ায় ও ঘাটে অনেক সময় মাঝি না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ে। শুধু তাই নয়, অনেকসময় মাঝি না থাকায় শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নৌকার বৈঠা ধরে বা দড়ি টেনে নদী পার হয়। অন্যদিকে, অল্প পানির মৌসুমে নদীতে বাঁশের সাঁকো চলাচলের উপযোগী না থাকায় শিক্ষার্থীদের নদীতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকে। এতে করে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে যেতে দেন না।

চৌঘুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও নয়ানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুদ রানা জানায়, ‘বর্ষাকালে নৌকায় করে নদী পার হতে প্রচণ্ড ভয় লাগে। নদীর পাড়ে ঘাটলা না থাকায় নৌকায় উঠতে বা নামতে অনেকে নদীর পানিতে পড়ে যায়। আবার অনেক সময় ঘাটে মাঝি না থাকায় স্কুলে যেতে অনেক দেরি হয়, ক্লাস মিস হয়। এখানে একটি সেতু হলে আমাদের অনেক উপকার হবে।’

নদীতে কম পানি থাকলে ঘাটের ইজারাদার প্রতিবছর ওই নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাত্রী পারাপার করেন। কিন্তু জনসাধারণের অতিরিক্ত চলাচলে অল্পদিনেই সেটি ভেঙে চলাচলের অনুপোযুক্ত হয়ে পড়ে। আর এ বাঁশের তৈরি নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে রিকশা-ভ্যান বা পান বহনকারী যান চলাচল করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়। বিরামপুর উপজেলার চৌঘুরিয়া, দামোদরপুর, রামচন্দ্রপুর, রণগাঁ ও দাউদপুর গ্রামে প্রায় ৫ হাজার পানের বরজ রয়েছে। এসব বরজে প্রায় ২ হাজার পানচাষি রয়েছেন। পানচাষিরা পান বিক্রি করতে এ এলাকার পানের সবচেয়ে বড় বাজার হাকিমপুরের হিলিহাটে যান। আর এ হাটে যেতে হলে ৫০০ মিটার রাস্তার বদলে প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়।

অপরদিকে, হাকিমপুর উপজেলার মোংলা, নয়ানগর, খট্টামাধবপাড়া ও ঘাসুড়িয়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে মোটরসাইকেল ও রিকশা-ভ্যান যোগে একইভাবে ঘুরে আসতে হয়। বিশেষ করে নদীর পশ্চিম পাশের পানচাষি ও রোগীরা এ পথে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন।

চৌঘুরিয়া গ্রামের পানচাষি ও বীরমুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম পাশে কয়েক গ্রামে প্রায় ৫ হাজার পানের বরজ রয়েছে। নদীতে ব্রিজ না থাকায় এ এলাকার প্রায় ২ হাজার খেতাল (পানচাষি) কয়েক কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে হিলিহাটে যান। পান নিয়ে অনেক সময় দেরিতে হাটে পৌঁছার কারণে পানচাষিরা পানের দাম কম পান।’

বীরমুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকেই শুনতেছি এখানে একটি পাকা ব্রিজ হবে। এজন্য অনেকবার মাপজোখ হয়েছে। কিন্তু আজও এখানে একটি ব্রিজ হলো না। মানুষের ভোগান্তি থেকেই গেল। এখানে একটি ব্রিজ হলে এলাকার কয়েক হাজার মানুষের উপকৃত হবেন।

২নং কাটলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইউনুস আলী মন্ডল বলেন, ‘উপজেলা থেকে ইঞ্জিনিয়াররা এসে কয়েকবার মাপজোখ করে গেছেন। তারা বলে গেছেন, নদীতে সেতু হবে। কিন্তু সেই সেতু এখনও হয়নি। যখন মাপজোখ হয় তখন এলাকার মানুষের আশা জাগে, এবার হয়তো স্বপ্নের সেতু হবে। কিন্তু সেই সেতু আর হয় না। পরে ইঞ্জিনিয়ার অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদীর দুইপাড়ের রাস্তার কোনো সরকারি নম্বর না থাকায় ওই নদীর উপর সেতু তৈরির পরিকল্পনায় দাপ্তরিকভাবে কোনো মাপজোখ হয়নি। তবে সম্প্রতি শুনেছি, ওই রাস্তার জন্য নাকি একটি নতুন নম্বর দেয়া হয়েছে।’

দিনাজপুর-৬ আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক বলেন, ‘কাটলা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর সাধারণ মানুষ ও পানচাষিদের কষ্টের কথা চিন্তা করে চৌঘুরিয়া-ঘাসুড়িয়া ঘাটে ছোট যমুনা নদীর উপর একটি পাকা সেতু তৈরিসহ উপজেলায় ছোট-বড় আরও ১০টি ব্রিজের জন্য একটি প্রস্তাবনা ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি পাস হলে ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গাজীপুরে হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলা, আটক ২ 
পল্লবীতে বিশেষ অভিযানে পেশাদার ছিনতাইকারীসহ ২৬ জন গ্রেপ্তার
হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার প্রতিবাদে বাংলামোটরে এনসিপির বিক্ষোভ
দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকট অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে পারে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা