কোভিড হাসপাতালে ৯০ শতাংশ শয্যাই ফাঁকা
দেশে মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মৃত্যু ও শনাক্ত নিম্নমুখী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী এই অবস্থায় আর এক-দুই সপ্তাহ গেলে করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরিই নিয়ন্ত্রণে বলা যাবে। এই অবস্থায় ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির চাপ কার্যত নেই বললেই চলে। হাসপাতালগুলোতে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শয্যাই ফাঁকা পড়ে আছে।
রবিবার রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসে (বিসিপিএস) করোনার টিকা বিষয়ক ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। করোনা হাসপাতালগুলোর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শয্যা এখন খালি। রোগীর চাপ কমে আসায় আমরা স্বস্তিতে আছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে এই মুহূর্তে ১১ হাজারের মতো করোনা রোগী রয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন মাত্র দুই হাজার রোগী। বাকি নয় হাজার রোগীই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সারাদেশে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালে মোট ১৪ হাজার ৯৪৫টি সাধারণ শয্যার মধ্যে শনিবার পর্যন্ত খালি ছিল ১৩ হাজার ১৭৪টি শয্যা। অর্থাৎ রোগী ভর্তি ছিল এক হাজার ৭৭১টি শয্যায়। আর গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসায় সারাদেশের মোট এক হাজার ২৫২টি ‘আইসিইউ’ শয্যার মধ্যে শনিবার পর্যন্ত খালি ছিল ৯৪৮টি শয্যা। এ হিসাবে ৩০৪টি আইসিইউ শয্যাই ফাঁকা।
তবে পরিস্থিতি স্তস্তিদায়ক হলেও সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কোভিড-১৯ বিষয়ক ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘এখন বলা যায়, দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে এর স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ নির্ভর করছে মানুষের আচরণের ওপর, টিকা কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ওপর। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যেকোনো সময় পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। সংক্রমণ হার শূন্যে নামাতে হলে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।’
স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও। তিনি বলেন, আমরা স্বস্তির সাথে থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব ভুলে গেলে চলবে না। নতুন কোনো করোনার ঢেউ যেন না আসে, সে জন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
এদিকে রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত এক দিনে আরও ১৪ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃত্যু ২৭ হাজার ৬৮৮ জনের। গত এক দিনে ৪৮১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৯ জন। শনাক্তের হার ২.৩৬ শতাংশ। এছাড়া গত এক দিনে দেশে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৬৯৯ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ ১৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৩ জন।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আর এর ১০ দিন পর প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। এরপর কয়েক মাস মৃত্যু ও শনাক্ত ঊর্ধ্বগতিতে থাকার পর গত বছরের শেষ দিকে এসে তা অনেকটা কমে যায়। চলতি বছরের প্রথম তিন মাস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল করোনা পরিস্থিতি। তবে মার্চের শেষ দিক থেকে দেশে বাড়তে থাকে করোনার প্রকোপ। এটাকে বিশেষজ্ঞরা করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা বলে জানান।
গত এপ্রিল মাস থেকে বাড়তে থাকা করোনার প্রকোপ চরম আকার ধারণ করে জুলাইয়ে। এই মাসে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জন মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া দিনে শনাক্তের সংখ্যাও ১৫ হাজার ছাড়ায়। তবে আগস্টের শেষ দিক থেকে করোনার প্রকোপ কমতে থাকে। সেপ্টেম্বর মাস পুরোটা জুড়েই করোনার প্রকোপ নিম্নমুখী ছিল। অক্টোবরের প্রথম ১০ দিনও সেই প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে করোনা শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, টানা কয়েক সপ্তাহ শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে থাকলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলা যাবে। সে হিসেবে আশা করা যাচ্ছে, আগামী এক দুই সপ্তাহের মধ্যেই করোনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলা যাবে।
(ঢাকাটাইমস/১০অক্টোবর/জেবি)