৮ মাসে ধর্ষণের শিকার ৮১৩ কন্যাশিশু, অপহরণ ও পাচার ১৪৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:৪১| আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:৪৬
অ- অ+

চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে বাল্যবিবাহ বেড়েছে ১০ শতাংশ। সেই সঙ্গে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮১৩ কন্যাশিশু এবং ১৪৭ কন্যাশিশু অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে। শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সমাজের প্রতিটি স্তরে নানা ধরনের সহিংসতা ও ঝুঁকির সম্মুখীনও হচ্ছে কন্যাশিশুরা।

মঙ্গলবার জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম আয়োজিত এক অনলাইন গোলটেবিল আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানান বক্তারা।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোমা দে বলেন, টেকসই উন্নয়নের মানে হচ্ছে সবার জন্য উন্নয়ন। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর জন্য ১৭টি অভীষ্ট ও ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেশগুলোকে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার তাগিদ দিয়েছে। যাতে সব পর্যায়ে নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য বিলোপ হয় এবং সর্বস্তরে নারীর নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয়। এই লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে পারলে বাংলাদেশে সক্রিয় ও আত্মনির্ভরশীল তরুণ প্রজন্ম গড়ে উঠবে। তারা ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমতার এক সমাজ গড়ে তুলবে।

তিনি আরও বলেন, সমাজে নারীর প্রতি চরম বিদ্বেষ রয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্য দিয়ে সেসব বিদ্বেষ এখন কমিউনিটি পর্যায়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার বলেন, জীবিকা, সম্পদ, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে মেয়েদের অগ্রগতি হলেও পুরুষের তুলনায় এখনো তাঁরা পিছিয়ে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব পর্যায়ে নারীর সম অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

বাল্যবিবাহ রোধে সবাইকে সর্বশক্তি প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বাল্যবিবাহের মাধ্যমে কন্যাশিশুর অধিকার হরণ করা হচ্ছে। করোনাকালে ১০ শতাংশ বাল্যবিবাহ বেড়েছে। এদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন, কন্যাশিশুকে সমান সুযোগ দিলে সে–ও সফল হতে পারে। কন্যাশিশুরা আজ সব জায়গায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। করেনাকালে কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা আরও বেড়েছে। সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করেও ধর্ষণ কমানো যায়নি। তিনি বলেন, আগামীর কন্যাশিশুকে সুসংহতভাবে বেড়ে উঠতে দেওয়ার লক্ষ্যে দল–মতনির্বিশেষে সবাইকে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে এগিয়ে আসতে হবে।

দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, নারীদের এখন অনেক নেতিবাচক বিষয়ের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। এই নেতিবাচক বিষয়গুলো নারীকে পেছনের দিকে টেনে ধরছে। তিন-চার বছর ধরে দেশে নারীর প্রতি অবমাননা বেড়েই চলেছে। নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে নারীদের পক্ষ থেকে আরও অনেক কাজ করতে হবে।

লেখক ও সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দুটো বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সহিংসতা ও কর্মসংস্থান। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে স্থানীয় রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার এবং স্থানীয় বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল; তা হয়নি। বরং একজন ভুক্তভোগী যেন ন্যায়বিচার না পান, সে বিষয়ে বাধা এসেছে।

দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার পরিস্থিতি পাল্টাতে রাষ্ট্রের সচেতন অংশের যে দায়িত্ব পালন করার কথা, তা করা যায়নি । নারীর প্রতি সহিংসতা এখন সর্বব্যাপী ও সর্বগ্রাসী হয়ে পড়ছে। যেসব কারণে নারী নিগৃহীত হন, সেসব এখনো দূর করা যায়নি।

বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদক উদিসা ইসলাম বলেন, সবাই মিলে ভুক্তভোগী নারীর পাশে থাকলে, তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য শক্তি ফিরে পাবেন।

‘টেকসই উন্নয়নে কন্যাশিশুর নিরাপত্তা ও জেন্ডার সমতা’ শিরোনামের আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপির জেন্ডারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ বিথিকা হাসান, এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ ভিডিও এডিটর বানু, নাগরিক উদ্যোগের নাদিরা পারভীন প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১৪নভেম্বর/কেআর/ইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নির্বাচনের আগেই ফ্যাসিস্টদের বিচার হবে : আইন উপদেষ্টা
ফিরে দেখা ৮ জুলাই: ‘বাংলা ব্লকেড’ শেষে সরকারকে আল্টিমেটাম, সমন্বয়ক কমিটি গঠন
নির্বাচিত হলে স্থানীয় সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস আমিনুল হকের
মিলন-জাদুর ঝলক কি দেখা যাবে আবার?
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা