স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে গুলির অভিযোগে এলডিপি মহাসচিব গ্রেপ্তার

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ দুজনকে গুলি করার অভিযোগে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদকে কুমিল্লার চান্দিনায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুর আড়াইটায় চান্দিনা পৌর ভবন-সংলগ্ন চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস-২ এর সামনে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ রয়েছে, রেদোয়ান নিজ গাড়িতে বসে নিজের পিস্তল দিয়ে গুলি করেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে রেদোয়ান আহমেদ সাংবাদিকদেরকে জানান, কলেজে এলডিপির পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠানে তাকে প্রধান অতিথি করে পৌর এলডিপি। এরই মধ্যে কলেজের প্রধান ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি দুপুরে ক্যাম্পাস-২ এর সামনে গেলে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের লোকজন তার গাড়িতে হামলা করে।
রেদোয়ান আহমেদ জানান, লাইসেন্স করা শটগান থেকে গুলি চালান আত্মরক্ষার জন্য, এর পরপরই থানায় এসে আশ্রয় নেন।
গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিরা হলেন চান্দিনা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সদস্য রূপনগর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে মাহমুদুল হাসান ওরফে জনি সরকার (২২)। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য ছিলেন।
অন্যজন হলেন চান্দিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হোসেন (২৮)। তিনি উপজেলার বরকইট ইউনিয়নের কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, সোমবার বেলা ২টার দিকে রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি নিয়ে চান্দিনা পৌরসভা সড়কের লাগোয়া পৌর ভবনের পাশে রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস-২ এর সামন আসার পর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কলেজ ফটকে ছাত্রলীগের নেতারা রেদোয়ান আহমেদের গাড়ি থামিয়ে কথা বলেন। তবে কিছু সময় পর রেদোয়ান আহমেদের গাড়ি ঘুরে চলে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা ওই গাড়িতে তরমুজ ছুড়ে মারেন। এর পরপর গাড়ি থেকে দুটি গুলি ছোড়েন রেদোয়ান আহমেদ। এসময় নাজমুলের পায়ে এবং মাহমুদুলের হাতে গুলি লাগে। এরপর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে ধাওয়া করেন। এরপর চান্দিনা থানায় গিয়ে অবস্থান নেন তিনি।
ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা থানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। একই সঙ্গে রেদোয়ানকে গুলি ছোড়ার বিচার ও গ্রেপ্তারের দাবি করেন। এরপর রেদোয়ানের বিরুদ্ধে মামলা নেয় পুলিশ এবং গ্রেপ্তার দেখায়।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সামিরুল খন্দকার অভিযোগ করেন, চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ছাত্রলীগ ঈদের আগে থেকে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কথা ছিল সোমবারে অনুষ্ঠান করার। এরই মধ্যে পৌর এলডিপি একই দিন একই স্থানে ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করে। দুপুর থেকে ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা মমতাজ আহমদ ক্যাম্পাসে থাকা অবস্থায় প্রায় আড়াইটার দিকে গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসের সামনে এসে দুটি গুলি ছুড়ে দ্রত চলে যান থানায় আশ্রয় নেওয়ার জন্য।
তখন নাজমুল ও জনি গুলিবদ্ধ হন। প্রথমেই তাদেরকে চন্দিমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার বেশি সমস্যা হওয়ার পর চিকিত্সার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ বলেন, রেদোয়ান আহমেদ স্বপ্রণোদিত হয়ে গুলি করেন। তার গাড়িতে হামলার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। গাড়িটি অক্ষত ছিল। কী কারণে তিনি গুলি করলেন, তা বুঝতে পারছেন না। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। রেদোয়ানের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিকালে তাকে কুমিল্লার আদালতে নেওয়া হয়।
মাহমুদুল বলেন, আমার কী অপরাধ ছিল। আমরা সবাই অনুষ্ঠানের জন্য কলেজের সামনে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ আমার হাতে এসে গুলি লাগলো। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
নাজমুল হাসান বলেন, আমরা কলেজ ক্যাম্পাসে দাঁড়ানো অবস্থায় আমাকে গুলি করা হয়েছে। আমার ডান পায়ে গুলি করেছেন তিনি। বুঝলাম না কিছু। এই ঘটনার বিচার চাই দ্রুত।
অলি আহমদের নিন্দা ও প্রতিবাদ:
এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদের গাড়িতে হামলা ও আত্মরক্ষার্থে থানায় আশ্রয় নেওয়ার পর গ্রেপ্তার দেখানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির সভাপতি অলি আহমদ। গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতি কর্নেল অলি বলেন, কুমিল্লার চান্দিনায় এলডিপি আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদের গাড়িতে যেভাবে ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে, তা বর্তমান গণবিচ্ছিন্ন সরকারের আমলে চলমান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আরও একটি ঘৃণ্য বহিঃপ্রকাশ। আত্মরক্ষার্থে থানায় আশ্রয় নেওয়ার পর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর ঘটনায় পুলিশ রক্ষক হয়ে ভক্ষকের পরিচয় দিয়েছে। এলডিপির মহাসচিবের গাড়িতে হামলার ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও রেদোয়ান আহমদের মুক্তি দাবি করেন অলি আহমদ।
(ঢাকাটাইমস/০৯মে/পিআর/কেএম)

মন্তব্য করুন