গণজাগরণ মঞ্চের সেই ডা. ইমরান কোথায় হারালেন?

ইমরান এইচ সরকার। সাধারণ একজন নাগরিক। ২০১৩ সাল। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে উঠলে সেটির মুখপাত্র হন পেশায় চিকিৎসক ইমরান। এরপর পার হয়ে গেছে প্রায় এক দশক।
গণজাগরণ মঞ্চ এখন অনেকটাই স্মৃতি। বিস্মৃত প্রায় ইমরান এইচ সরকারও।
‘এত আশা দেখিয়ে কোথায় হারালো গণজাগরণ মঞ্চ, কোথায় হারালেন ইমরান এইচ সরকার’-এই প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষসহ সংস্কৃতিকর্মীদের মনে। ‘গণজাগরণ মঞ্চ কী আর কখনও জাগরণ ঘটাবে? মানুষের পাশে দাঁড়াবে?’ এমন প্রশ্ন গণজাগরণ মঞ্চ সংশ্লিষ্ট কর্মীদেরও।
গণজাগরণ মঞ্চ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ঢাকাতেই আছেন। ধানমন্ডির বাসায়ই বেশিরভাগ সময় কাটান। হাতেগোণা কয়েকজনের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। তাই কারও ফোনও তেমন একটা রিসিভ করেন না। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে বাসার বাইরে বের হন না। তবে অনলাইনে অ্যাকটিভ থাকলেও কারো কোনো বার্তার জবাব দেন না।’
তাদের ভাষ্য, গণজাগরণ মঞ্চ একটি গণ আন্দোলন ছিল। একটি আবেগ ছিল। গড়ে উঠেছিলো সময়ের প্রয়োজনে। সেই মঞ্চের বাস্তবতা এখন আর নেই। আবার কখনও এই নামেই কোন বড় ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে উঠবে কী না- তাও নিশ্চিত নয়। তবে গণজাগরন মঞ্চের ব্যানারে নতুন কোনো আন্দোলনের কথা ভাবা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন সংগঠক।
তারা বলছেন, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা ইস্যুতে তৈরি হয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চ। সেই ইস্যু এখন নেই। তাই মঞ্চেরও কার্যক্রম নেই। এছাড়া অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসের ঘাটতি, সংগঠকদের নিজনিজ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মঞ্চের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টাসহ বেশ কয়েকটি কারণে বেশকিছুদিন আগেই দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় মঞ্চ। সেই থেকেই স্থবির মঞ্চের কার্যক্রম। আবার এর একটি অংশ ‘নিপীড়ণের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ নামের সংগঠন গড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।
এ বিষয়ে গণজাগরণ মঞ্চের সেই ‘স্লোগানকন্যা’ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লাকি আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মঞ্চে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও অধকিারকর্মীরা যুক্ত ছিলো- এখন তারা নেই। আমরাও কোনো কর্মসূচি দেই না। তাই যে যার কাজের ধারার মধ্যে আছে।’
ইমরান এইচ সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয় জানিয়ে লাকি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মঞ্চের মুল সংগঠকদের অনেকের সাথেই অনেকের যোগাযোগ আছে। তবে মঞ্চের ব্যানারে নতুন কোনো আন্দোলন নিয়ে ভাবা হচ্ছে না।মঞ্চের কার্যক্রম নেই তাই যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এই ধরুন, আমি রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত আছি। ঢাকাতেই আছি। রাজনীতি করছি।’ গণজাগরণ মঞ্চে যারা ছিলেন তাদের একটি অংশ নীপিড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ আন্দোলন গড়ে তুলেছে- তাতে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও জানান লাকি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে লাকি বলেন, ‘স্থবিরতার কিছু নেই। আমরা যে যার অঙ্গনে যে যার মতো মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’ ভবিষ্যত আন্দোলন সম্পর্কে লাকি বলেন, ‘তা গণজাগরণ মঞ্চ নামে হবে না। নতুন নামে হবে হয়তো।’ মঞ্চের আরেক সংগঠক বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্লাটফরমটা কাজ করছে না। সীমিত অবস্থায় আছে। এর বড় একটি অংশ ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ আন্দোলন গড়ে তুলেছে।’ তিনি বলেন, নানান মতপার্থক্যের কারণে গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম সীমীত। বলতে পারেন- গণজাগরণ মঞ্চই এখন ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
করোনা ও বন্যা পরিস্থিতিতে ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে মঞ্চ কাজ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সুসংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। তবে এই মুহুর্তে কোােন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হচ্ছে না।’
মঞ্চের সংগঠক ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পাদিত্য বসু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গণজাগরণ মঞ্চ একটি গণআন্দোলন ছিলো। নির্দিষ্ট প্লাটফর্ম ছিলো না। সেই বাস্তবতা নেই। আর মঞ্চের কার্যক্রমও নেই।’ নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ কেউ কেউ তাতে যুক্ত আছেন, কেউ কেউ নেই।’
গণজাগরণ নামে আর কোনো আন্দোলন গড়ে উঠবে কী না-সে বিষয়ে বাপ্পাদিত্য বলেন, ‘সেটা সময় নির্ধারণ করবে। সে রকম যদি কোনো বাস্তবতা আসে বা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তা সেসময়কার মানুষেরা নির্ধারণ করবে।’ ইমরান এইচ সরকারের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ হয় বলেও জানান তিনি।ডা. ইমরানের সাথে যোগাযোগ নেই জানিয়ে মঞ্চের সংগঠক বাংলাদেশ চারু শিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী বলেন, ‘সময়ের প্রয়োজনে মঞ্চ তৈরি হয়েছিলো, সেটা এখন আর নেই।’