মোরা একঘাটেতে রান্ধি বাড়ি, আর এক ঘাটে খাই

জয়পুরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:২৬

মোরা একঘাটেতে রান্ধি বাড়ি, আর এক ঘাটে খাই। পথে ঘাটে ঘুরে মোরা সাপ খেলা দেখাই, মোদের সুখের সীমা নাই। এটি বেদে সম্প্রদায়ের কাছে অতি পরিচিত একটি গান । নাটক ও সিনেমাতেও বেদে সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকার চিত্র ফুটে উঠেছে। ফুটে উঠেছে তাদের বিচিত্র সংগ্রাম। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সিনেমার কথা আজো মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে। সমাজের মূলস্রোতধারা থেকে পিছিয়ে পড়া ওই জনগোষ্ঠীর কষ্টের জীবন চিত্র নিয়ে অতীতে বহু নাটক ও সিনেমা তৈরি হয়েছে।

এছাড়া বর্তমানে ‘সিঙ্গা লাগাই, দাঁতের পোক ফালাই’ বেদেনীর জোরালো এই আবেদন এখন আর কারও মনে সাড়া দেয় না। তাই অসহায় হয়ে পড়েছেন এই সম্প্রদায়ের লোকজন। বেদেরা স্থলে আর নদীর জলে সংসার হলেও দুঃখ যেন তাদের পিছু ছাড়ছে না। তাই এই যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে আগের মতো তারা এখন আর ভাল নেই। নিজ ভূ-খণ্ডে বাস করেও তারা যেন পরবাসী। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা এলাকায় ছোটো নদীর তীরঘেঁষে প্রায় অর্ধশতাধিক বেদে পরিবার অস্থায় সংসার বেঁধেছে।

সরেজমিনে কথা বলে জানা যায়, বিষধর সাপ নিয়ে খেলা, বিষাক্ত জীব সঙ্গে নিয়েই তাদের বসবাস। এক সময় নৌকা নিয়ে নৌ-পথে চলাচল করত বেদে সম্প্রদায়। শীত শুরু হলে এসব অঞ্চলে ধান কাঁটার ধুম লেগে যায়। কৃষিনির্ভর পরিবারগুলোয় আসে সচ্ছলতা। কর্মব্যস্ত সময়ে কৃষক-কৃষাণীর শীর্ণ দেহের কোমর-পায়ের গোড়ালিতে বাত নামক ব্যথা শুরু হয়। আর্থিক সচ্ছলতা, রোগ-বালাই তাড়ানোসহ বিভিন্ন সুবিধার সমাহার নিয়ে বেদেরাও চলে আসে পথ থেকে প্রান্তরের জনগুরুত্বপুর্ণ হাট-বাজারের সংলগ্নে। ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘর তুলে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে। সাপ খেলার পাশাপাশি বেদেনীরা তাবিজ-কবজ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় গাঁয়ের মেঠো পথে। তবে দিন দিন এ বেদে সম্প্রদায় সাপ ধরার নেশা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। নানা পণ্য এখন তাদের হাতে উঠেছে। বেঁচে থাকার সংগ্রামেই আজ তাদের ভিন্ন পথে চলা। তার পরও যারা এ পেশাকে আগলে রেখেছে তাদের জীবন চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। জীবন-জীবিকার তাগিদে বেদেরা ছুটে বেড়ায় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়। পেশাগত কারণে বেদেরা যেমন এক এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে না। ছুটে বেড়ায় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় তাই শিশুদের পড়ালেখার সুযোগ হয় কম। তাই তারা (শিশুরা) বাবা-মায়ের কাছ থেকে সাপ খেলা দেখানো, তাবিজ কবজ বিক্রি করা শিখছে।

বেদে পল্লীর সাপুরে তাহাজুল রহমান বলেন, ‘আজ এখানে, কাল ওখানে, এভাবেই চলতে হয় আমাদের। আমরা যাযাবর, সরকার আসে সরকার যায়, আমাদের মিলছে না কোন ঠিকানা! প্রতিটি বেদেবহরকে এক একটি রাজ্যের মতো কল্পনা করে এরা। সর্দার এদের রাজা। তার নিয়ন্ত্রণে চলতে হয় বহরের সবাইকে। বেদে বহরের মেয়েরাই আয় রোজগার করে। মেয়েরাই সকালে জীবিকার জন্য দল বেঁধে বের হয়।’

বেদে পল্লীর মো. মফিজ বলেন, পুরুষেরা সারাদিন বাচ্চাদের দেখাশোনা করে। সর্দাররা বংশক্রমেই সরদার হয়। সাপ খেলায় এখন আর পেট বাঁচে না। মেয়েদের পাশাপাশি পুরুষেরাও ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে এই অভাব অনটনের সংসারে। কেউ কেউ পুকুর-ডোবায় তলিয়ে যাওয়া সোনারুপার গহনা তুলে দেয়ার কাজ করে। কেউ দিচ্ছে বিভিন্ন রোগের ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবচ। বিক্রি করছে শাড়ি, চুড়ি। কেউ কেউ জাদুমন্ত্র নিয়ে হাজির হচ্ছে।’

(ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :