হত্যার পর সিঙ্গাপুর পালালো চাচাতো ভাই, সৌদি আরবে পালানোর সময় গ্রেপ্তার শ্যালক
নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা সিঙ্গাপুর প্রবাসী নুরুল আমিনকে হত্যায় বরিশাল আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে চাচাতো ভাইয়ের শ্যালক। পাওনা টাকা ফেরত না দিতে চাচাতো ভাইকে হত্যা করে আগেই সিঙ্গাপুরে পালিয়েছে অপর হত্যাকারি।
শুক্রবার সৌদি আরবে পালানোর সময় গ্রেপ্তার হয়েছে হত্যাকারী চাচাতো ভাইয়ের শ্যালক।
গ্রেপ্তারকৃত ওই আসামী তানিম মিয়া (২০) মুলাদী উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের খোরশেদ মীরের ছেলে। পলাতক অপর আসামি হলো নুরুলের চাচা হানিফ ফকিরের ছেলে সিঙ্গাপুর প্রবাসী কামরুল ইসলাম।
গত ১১ অক্টোবর সন্ধ্যায় মুলাদী উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদী থেকে হাত-পায়ে ইট বাঁধা অর্ধগলিত অবস্থায় নুরুল আমিনের লাশ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। নুরুল নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার চরবক্তাবলী ইউনিয়নের লক্ষ্মীনগর গ্রামের পিয়ার আলী ফকিরের ছেলে।
মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর নৌ পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক প্রদীপ কুমার মিত্র বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় হত্যার কথা স্বীকার করে তানিম মিয়া বরিশাল জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। বিচারক নুরুল আমিন জবানবন্দি গ্রহন করেছেন।
পরিদর্শক প্রদীপ জানান, হত্যায় ব্যবহৃত ট্রলারও উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার তানিম ও তার ভগ্নিপতি বর্তমানে সিঙ্গাপুর প্রবাসী কামরুল ইসলাম এই হত্যাকান্ড করেছে।
তিনি আরো জানান, হত্যার শিকার নুরুল আমিন ও কামরুল ইসলাম চাচাতো ভাই। এ দুজন সিঙ্গাপুরে থাকতো। সেখান থেকে নুরুল দেশে ফিরে আসে। কামরুল গ্রুপ ভিসায় সিঙ্গাপুরে লোক নেয়ার প্রলোভন দিয়ে নুরুল আমিনের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা নেয়। কিন্তু কাউকে সিঙ্গাপুর নেয়নি। এমনকি টাকাও ফেরত দেয়নি।
পরিদর্শক প্রদীপ জানান, লোকজনের ভয়ে গত ৭ অক্টোবর গোপনে বাংলাদেশে আসেন কামরুল। কামরুল দেশে ফিরে এসে মুলাদী উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে তার শ্বশুর বাড়িতে আত্মগোপন করে। পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে নুরুলকে মুলাদী উপজেলায় নিয়ে আসে। গত ১০ অক্টোবর নুরুল, শ্যালক তানিম ও কামরুল ট্রলারে চরে আড়িয়াল খা নদীতে ঘুরতে বের হয়।
পরিদর্শক প্রদীপ বলেন, ট্রলারে নুরুল মোবাইল ফোনে কথা বলতে ছিল। এ সময় পিছন থেকে নাইলনের রশি গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে কামরুল। পরে হাত-পায়ে ইট বেঁধে নুরুলের লাশ আড়িয়াল খাঁ নদীতে ফেলে দেয়। তাকে হত্যার পর ১৩ অক্টোবর কামরুল সিঙ্গাপুর ফিরে যায়।
তিনি আরো জানান, মুলাদীর নাজিরপুর ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদীর সাহেবের চর এলাকায় মরদেহ ভেসে ওঠার পর উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরদিন নৌ পুলিশ বাদী হয়ে মুলাদী থানায় মামলা করে। বিভিন্ন থানায় সংবাদ পাঠিয়ে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে বরিশালেই নুরুল আমিনকে দাফন করা হয়।
গত ১৪ অক্টোবর নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থানায় নুরুল আমিনের বোন সোনিয়া আক্তারের জিডির সূত্র ধরে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। কামরুলের শ্বশুর খোরশেদ আলম মীরকে আটক করার পর হত্যা কান্ডের বিষয়টি উঠে আসে। দুই হত্যাকারীর একজন সিঙ্গাপুর ও অপর জন শ্যালক তানিম পালিয়ে ছিলো। আত্মগোপনে থেকে সৌদি আরবে যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পালানোর চেষ্টা করেছিলো বলে পরিদর্শক প্রদীপ জানিয়েছেন।
(ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/এআর)