হুমকি দিয়ে বালু উত্তোলনের চেষ্টা প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নে হুমকি-ধামকি দিয়ে সরকারি খাল থেকে বালু উত্তোলনচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে অন্য এলাকার একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ গ্রামবাসীর বাধা উপেক্ষা তারা বালু উত্তোলনের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। অথচ বালু উত্তোলন করা হলে খালের পাশের ফসলি জমি যেমন নষ্ট হবে তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হবে একটি সেতু ও পার্শ্ববর্তী বাজার। নিরুপায় হয়ে গ্রামবাসী গণস্বাক্ষর নিয়ে বালু কাটা বন্ধ করার জন্য রবিবার (২৯ জানুয়ারি) বিকালে জেলাপ্রশাসক ও আজ সোমবার উপজেলা নির্বাহী কমকর্তার কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এ পরিস্থিতিতে এই সিন্ডেকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের (গোবিন্দুপর গ্রামের পাশের ওয়ার্ড) ইউপি সদস্য সোহেল মিয়ার নেতৃত্বে শেখ ফরিদ ও শাহীনসহ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ড্রেজার বসিয়েছে সরকারি খালে। গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ৫নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন গ্রামটি ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে বালু উত্তোলন না করার জন্য বলেন। কিন্ত ‘বালু দস্যুরা’ তাদের বাধা উপেক্ষা করে বালু তোলার সব তৎপরতা অব্যাহত রাখে। এ নিয়ে গ্রামবাসী ও বালু উত্তোলনকারীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গোবিন্দপুর গ্রামের সরকারি খালের দুই তীরের ফসলি জমির ক্ষতি করে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের চেষ্টা করছে ওই এলাকার রতন মিয়ার ছেলে ফরিদ হোসেন, আব্দুল করিমের ছেলে সোহেল রানা ও শাহিন মিয়া, আম্বর আলীর ছেলে কামাল মাস্টার, আব্দুর রশিদের ছেলে জয়নাল মিয়াসহ একটি সিন্ডিকেট। এলাকার নিরীহ কৃষকেরা তাদের ফসলি জমি রক্ষায় প্রতিবাদ করলে তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয় ওই সিন্ডিকেট। এতে কৃষকরা আতঙ্কিত। অবৈধভাবে মাটি কাটলে গোবিন্দপুর ও ঝাউকান্দিসহ এলাকার কয়েক শ বাড়ি-ঘর হুমকির মুখে পড়বে। সেই সঙ্গে একটি সেতু এবং বাজারও ভাঙনের কবলে পড়বে।
গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা আমির আলী নামের এক কৃষক বলেন, আমাদের এলাকার খাল থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার চেষ্টা করছে। এতে ফসলি জমির মারাত্মক ক্ষতি হবে। আমরা বাধা দিলে ড্রেজারওয়ালারা আমাদেরকে হুমকি দেয়।’
ফজলুল হক নামের আরেক কৃষক জানান, মাটি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এখন যত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ততই এলাকাবাসীর জন্য ভালো হবে। মাটি খেকোরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা তাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারি না।’
বাসেদ মিয়া নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা কৃষি কাজ করে সংসার চালাই। অবৈধভাবে মাটি কেটে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এতে কৃষি জমি নাই হয়ে যাবে। পরে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’
শাহ আলম নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, মাটি সন্ত্রাসীদের বারবার বাধা দিয়েও লাভ হচ্ছে না। এ বিষয়ে আপনাদের করার থাকলে কিছু করেন।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সরকারি এই খালের বালু উত্তোলন করলে গোবিন্দপুর গ্রামের খালের দুই পাশের কয়েক শ বাড়ি ভাঙনের কবলে পড়বে।
বালু উত্তোলনের ব্যাপারে অভিযুক্ত ৬নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সোহেল মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। তার বক্তব্য, সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় নিজ উদ্যোগে খালের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার জন্য খাল খনন করছি। এতে গ্রামবাসীর ক্ষতির চেয়ে সুবিধাই বেশি হবে।’
এ বিষয়ে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক ডালিম বলেন, অবৈধভাবে মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই।’
আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। মাটি উত্তোলনে জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/৩০জানুয়ারি/এআর)