বিবার্তা-জাগরণ আইপি টিভি অফিসে হামলা-চুরির ঘটনায় অবশেষে মামলা

সরকার নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিবার্তা২৪ডটনেট ও জাগরণ আইপি টিভির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও চুরির ঘটনায় অবশেষে মামলা রুজু করেছে রাজধানীর রমনা থানা পুলিশ।
শনিবার রমনা মডেল থানায় মামলাটি রুজু করা হয় বাদী জাগরণ আইপি টিভির প্রধান সম্পাদক এফ এম শাহীন জানিয়েছেন। মামলায় প্রধান অভিযুক্ত পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামসহ অভিযুক্তদের নাম বাদ দিতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাদী।
এর আগে হামলা, ভাঙচুর-চুরির ঘটনায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি গভীর রাত পর্যন্ত রমনা থানায় অপেক্ষা করেও মামলা করতে পারেননি ভুক্তভোগীরা।
এরমধ্যে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদসহ (ইনু) নানা সংগঠনের প্রতিবাদ নিন্দার বিবৃতি এলে ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর ভুক্তভোগীদের থানায় ডাকে রমনা থানা পুলিশ।
জানা গেছে, থানায় ভুক্তভোগীদের মামলার অভিযোগপত্রেও নানা কাটছাঁট করার জন্য লম্বা সময় বসিয়ে রাখা হয়। ভুক্তভোগীদের বলা হয়, ডিসিকে না দেখিয়ে এই মামলা নেয়া যাবে না। রাত দেড়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ভুক্তভোগীরা চলে যান। পরে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় মামলা নেয় পুলিশ।
ঘটনার দুইদিন পর পুলিশ মামলা রুজু করলেও বাদীর অভিযোগ, মামলায় বিবার্তা২৪ডটনেট ও জাগরণ টিভির অফিসে হামলা, ভাঙচুর-চুরির ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামসহ অভিযুক্তদের নাম বাদ দিতে হয়েছে। মামলায় আসামিদের নামের স্থানে লিখতে হয়েছে- অজ্ঞাতনামা, চোর (চোরেরা)।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, ‘অভিযোগ তো উনি দিয়েছে, আমি দিইনি। আপনি মামলার অভিযোগটা দেখেন। তাহলে বুঝতে পারবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহকে কল করা হলে তিনি ডিএমপির প্রোগ্রামে থাকার কথা জানিয়ে ফোনকল কেটে দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১০টা থেকে পরদিন ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার মধ্যে যেকোনো সময় বাংলামোটর পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ভবনের ১১ তলায় বিবার্তা২৪ডটনেট ও জাগরণ আইপি টিভির অফিসে অজ্ঞাতনামা চোর বা চোরেরা মালামাল ও নগদ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। যার সর্বমোট মূল্য এক কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
মামলার বাদী এফ এম শাহীন বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠন গৌরব '৭১ এর সাধারণ সম্পাদক ও গণজাগরণ মঞ্চের একজন সংগঠক। পদ্মা লাইফের ইন্সুরেন্সের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতের সাবেক নেতা ও পৃষ্ঠপোষক। যেহেতু আমার প্রতিষ্ঠান জাগরণ টিভি ও বিবার্তা২৪.নেট সত্য, ন্যায় ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান, সেহেতু পদ্মা লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম, পদ্মা লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডের এসিস্ট্যান্ট ভাইস চেয়ারম্যান আসগর আলী গং আমাকে পদ্মা ইসলামী লাইফ টাওয়ার থেকে উৎখাত করতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’
এজাহারে বাদী লিখেন, তিনি ভবনের ১১তলা ফ্লোরের একাংশ অফিস হিসেবে ভাড়া নিয়ে ২০২১ সালের ৩ মে থেকে গণমাধ্যম কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। ২০২২ সালে তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় হতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় কাচের ফ্রেমে বাঁধানো একটি ছবি উপহার হিসাবে পান।
তিনি লিখেছেন, ‘আমি ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদানপ্রাপ্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে কেন্দ্র করে পূর্ণদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র মাইক নির্মাণ করি। বর্তমান এডিটিং পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় সোয়া কোটি টাকা। চলচ্চিত্রটি আগামী ৭ মার্চের পূর্বেই মুক্তি দেয়ার কথা। ছবিটি আমি আমার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় পরীক্ষামূলকভাবে দেখার সময়ে আমাদের অফিস কক্ষের উত্তরে অবস্থিত পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডের তাকাফুল প্রকল্প অফিস হতে অজ্ঞাতনামা ৬/৭ আসামি বের হয়ে বলে এটা ইসলামী ইন্সুরেন্স টাওয়ার। এখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি, ভাস্কর্য ও চলচ্চিত্র কার্যক্রম ইত্যাদি করা যাবে না। যদি এগুলো করেন, তবে আপনাদের জানমাল সবই হারাতে হবে বলে হুমকি প্রদান করে বলেন-ইহা আমাদের চেয়ারম্যান ফখরুল সাহেবের হুকুম।’
তিনি লিখেন, তাদের মধ্যে আরেকজন বলেন আপনাদের ইতিপূর্বে এগুলো নিষেধ করা হয়েছে। আমাদের কথা না শোনায় আপনাদেরকে (জাগরণ টিভির প্রধান সম্পাদককে) ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর লিফটে ১০/১৫ মিনিট আটকে রাখি। এছাড়া ১৮ অক্টোবর রাত আনুমানিক ১১টার ৪৮ মিনিটের সময় লিফটে ওঠার পর বিবার্তার হেড অব নিউজসহ ৩ জন সাব-এডিটরকে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রায় ২০ মিনিট লিফট বন্ধ রাখা হয়েছিল। লিফটে আটকে রাখার পরও আপনারা জীবনে বেঁচে রয়েছেন। পরে উক্ত বিষয়ে বিবার্তার হেড অব নিউজ রমনা মডেল থানায় একটি জিডি করেন, যার নম্বর-১০৬৪, তারিখ ১৮.১০.২০২২।
এজাহারে লেখা হয়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি পদ্মা লাইফ টাওয়ারের ইলেকট্রিশিয়ান মাহে আলম বিকাল ৫টায় এসে বলে যে, ভবনের বিদ্যুতের লাইন মেরামত করতে হবে বিধায় এক ঘন্টার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে হইবে। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় অতিবাহিত হলে মাহে আলমকে জিজ্ঞাসা করলে জানান যে, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম স্যারের নির্দেশ ও এসিস্ট্যান্ট ভাইস চেয়ারম্যান আসগর আলী স্যারের হুকুমে আপনাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/এআর)

মন্তব্য করুন