পঞ্চগড়ে সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক পরিবার, মামলা হলেও তদন্ত কমিটি হয়নি

পঞ্চগড় প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ মার্চ ২০২৩, ২৩:০৭

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধদের দেওয়া আগুন ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক পরিবার। এ ঘটনায় দুই জনের মৃত্যু হলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। এ অবস্থার মধ্যে গত শনিবার রাতে 'আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন গলা কেটে দুইজনকে হত্যা করেছে'- এমন গুজব সামাজিক মাধ্যম ও মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ার পর পঞ্চগড় শহরে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গুজবে কান দিয়ে কিছু যুবক লাঠিশোটা নিয়ে সড়কে নামেন। বিক্ষোভকারীরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়কে যানচলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় তারা শহরের কদমতলা এলাকার কয়েকটি দোকানের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে মালামাল লুট করতে থাকে হামলাকারীরা। পরে পুলিশ হামলাকারীদের ধাওয়া দিলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে প্রশাসন, অতিরিক্ত পুলিশ ও আওয়ামী নেতারদের তৎপরতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। এসব ঘটনায় থাকার অভিযোগে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ওয়াকার সু হাউসের ব্যবস্থাপক সুমন কুমার বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যায় আমরা দোকান বন্ধ করে চলে যাই। পরে শুনতে পাই কারা যেন আমাদের দোকানে হামলা করেছে। এসে দেখি আমাদের সুন্দর সাজানো সু হাউস একেবারে এলোমেলো। ভেঙে ফেলা হয়েছে হাউসের কাচের সেল। দোকানে ২০০-এর বেশি জুতা ও শতাধিক ব্যাগসহ নানা মালামাল নিয়ে গেছে। তারা আমাদের শেষ করে দিয়েছে। এতে আমাদের ৭০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় মৌখিকভাবে জানিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে আমরা মামলা করব।’

জেলা পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা জানিয়েছেন এ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। আরও মামলা প্রক্রিয়াধীন। এখন পর্যন্ত ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে এটা প্রক্রিয়াধীন।

পুলিশ ও মুসল্লিদের সংঘর্ষের ঘটনায় শহরে এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও গতকাল সকাল থেকে জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ পুলিশ ও বিজিবির টহল দেখা গেছে। আহমদ নগরেও অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে। শহরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। দোকানপাটও খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে আহমদিয়া সম্প্রদায়সহ সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গুজবের ঘটনায় সুযোগ সন্ধানীরা বাজারের ওয়াকার জুতার শোরুমসহ তিনটি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। ধাক্কারা এলাকার ট্রাক টার্মিনালে একটি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। কয়েকশ' যুবক রাজনগর ও তুলারডাংগা হয়ে করতোয়া নদী পাড়ি দিয়ে আহমদ নগরে যাওয়া চেষ্টা করলেও পুলিশ ও বিজিবি তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গভীর রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটের নেতৃত্বে শহরে শান্তি মিছিল বের করা হয়।

গুজব ছড়ানো এবং ভাঙচুর ও লুটপাটে জড়িত অভিযোগে রাতেই পুলিশ পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলে রাব্বিসহ ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের অভিযোগ, ফজলে রাব্বি আরও একজনকে মোটরসাইকেলে নিয়ে পঞ্চগড় শহরের বিভিন্নস্থানে গুজব ছড়াচ্ছিলেন যে 'আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন গলা কেটে দুইজনকে হত্যা করেছে', যা ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি- বিএনপি-জামায়াত চক্র এই ঘটনার ইন্ধনদাতা। তারা গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এই সুযোগে চক্রটি শহরে লুটপাটেরও চেষ্টা করে। রাতেই আমরা ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘কোথাও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। একটি ফেসবুক আইডি এবং পেজ থেকে ভয়াবহ গুজব ছড়ানো হয়েছে। আমরা তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় বিভিন্ন মসজিদের ঈমামদের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :