আন্দোলনের চূড়ান্ত ফল পেতে দলকে গতিশীল করার উদ্যোগ বিএনপির

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ মে ২০২৩, ১১:৩৯ | প্রকাশিত : ১৫ মে ২০২৩, ০৮:৪১

চলমান যুগপৎ আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপের সুফল পেতে দলকে গতিশীল করতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও বিভেদ মিটিয়ে ফেলতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব জেলা-উপজেলায় বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের কমিটি নেই সেখানে দ্রুত কমিটি পুনর্গঠন করতে বলা হয়েছে। আর যেখানে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক নেই সেখানে সাংগঠনিক নিয়মে অধস্তনদের দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে।

গত ৪ মে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কয়েকটি অঙ্গ-সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করে আবারও সেই নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

আওয়ামী লীগ সরকারের দ্রুত পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিএনপি ও সমমনা দল এবং জোটগুলো। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে বেশকিছু সমস্যাও দেখা দিয়েছে।

বিশেষ করে বছরের পর বছর কমিটি হালানাগাদ না হওয়া এবং কমিটিতে পদ পেয়ে নেতারা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে শৈথিল্য দেখানোর কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দল দেখা দিয়েছে। এতে করে দলীয় কর্মসূচি পালনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ফলে সংগঠনকে আরও বেগবান করে চলমান আন্দোলনের চূড়ান্ত সফলতা পেতে চায় বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

বিএনপি নেতারা ঢাকা টাইমসকে জানান, প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি বর্তমান সরকারের আমলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করতে পারছে না। যে কারণে অনেক জায়গায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটিও পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি। যারা দীর্ঘদিন ধরে দলের স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের সঙ্গে কারও কারও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এখন চলমান যুগপৎ আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতা পেতে হলে সেই দূরত্ব মিটিয়ে সংগঠনকে আরও গতিশীল করার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির ৫৮ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি করে ৯০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি লৌহজং উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এমনকি সব ইউনিয়ন কমিটির খসড়াসহ লৌহজং থানা কমিটি জমা দেওয়া হলেও এখনো কার্যকর হয়নি। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল হাই অসুস্থ থাকায় জেলা কাউন্সিল দ্রুত সম্পন্ন করতে চলতি বছরের ২১ মার্চ আহ্বায়ক কমিটিতে আরও ৫ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু হয়নি সম্মেলন সম্পন্ন, পূর্ণাঙ্গ হয়নি কোনো কমিটি।

জানা গেছে, লৌহজং উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার দুর্নীতির মামলায় প্রায় দেড় মাস ধরে কারাবন্দি রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে পণ্য আমদানি করে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মামলার তদন্তে জানা যায়, আসামি অপু চাকলাদার একটি কন্টেইনারে ‘ক্যাপিটাল মেশিনারি ফর সু মেকিং মেশিন’ উল্লেখ করে বিদেশ থেকে মালামাল আমদানি করেন। ২১টি মামলার মধ্যে হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার ১১টি মামলার এজাহারনামীয় আসামি এবং তিনি সম্পূর্ণ মালামাল অবৈধ উপায়ে খালাসের নেতৃত্ব দেন। গত ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিদেশে পালানোর চেষ্টাকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশের সহায়তায় তাকে আটক করা হয়। মামলার অপর আসামি গ্রেপ্তার নিশ্চিত করা, মামলাটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের লক্ষ্যে এবং মামলার তদন্ত সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করলে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

লৌহজং থানা বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী ঢাকা টাইমসকে জানান, অপু চাকলাদার আওয়ামী লীগ থেকে সরাসরি লৌহজং উপজেলা যুবদলের সভাপতি এবং কিছুদিন পরই থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। তিনি কখনো ধানের শিষে ভোট দেননি অথচ থানা বিএনপির সদস্য সচিব হয়ে বসে আছেন। তার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছে। শুধু তাই নয়, অপু চাকলাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ তাতে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিব্রত ও ক্ষুব্ধ। অবিলম্বে তাকে বাদ দিয়ে নতুনভাবে ত্যাগী কাউকে ভারপ্রাপ্ত বা পূর্ণাঙ্গ সদস্য সচিব করার দাবি জানান তারা। না হলে তিনি জেলখানায় থাকায় সংগঠন আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

জানা গেছে, কয়েকটি জেলার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় দপ্তরে অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। দুজনেরই দুটি পৃথক গ্রুপ রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিএনপির তিনজন সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের সঙ্গেও বর্তমান কমিটির কোনো সম্পর্ক নেই। বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্রম অনেকটা স্থবির। সাবেক সভাপতি এমএ সালামের সঙ্গেও দূরত্ব বর্তমানদের। ফলে ইউনিট কমিটি শেষ হয়নি।

বান্দরবান জেলা কমিটির সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে গত সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী ও সাবেক সভাপতি সাচিং প্রু’র। সেখানে দুটি গ্রুপ আলাদা কর্মসূচিও পালন করে। কুষ্টিয়া জেলা সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। মাদারীপুর জেলা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত থাকায় সাংগঠনিকভাবে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

এভাবে জয়পুরহাট, টাঙ্গাইল, চাঁদপুর, পাবনা, ফরিদপুর, ভোলা, পিরোজপুর, রাজশাহী জেলা ও মহানগরে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি নেই। প্রকাশ্যে গ্রুপিং চলছে। সব ইউনিটেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরমে।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আসলে নেতৃত্ব নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, প্রতিযোগিতা আছে। প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়েও ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণ হয়। আর যারা হেরে যান, তাদেরও সম্মানিত স্থানে আনা হয়। যার কারণে কর্মসূচি পালনে কোনো ব্যত্যয় ঘটে না।’

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় নির্ধারিত সময়ে কমিটি করা যায় না। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসন বাধা দেয়। তারপরও শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের নেতাকর্মীরা প্রতিটি প্রোগ্রাম ঐক্যবদ্ধভাবে সফল করছে।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন অতি সন্নিকটে। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। এখানে পদ নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকবেই। তবে, আন্দোলনে গতিশীলতা আনতে আমরা ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে কাজ করছি। পদ-পদবি নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকলেও আন্দোলনের প্রশ্নে কোনো বিভেদ নেই।’

(ঢাকাটাইমস/১৫মে/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :