এক সময় হাজারো মানুষ চিকিৎসা পেত, এখন প্রাণহীন স্বাস্থ্যকেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ
| আপডেট : ২২ মে ২০২৩, ১১:১৬ | প্রকাশিত : ২২ মে ২০২৩, ১১:০২

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে এক সময় হাজারো মানুষ চিকিৎসা সেবা পেত। পাকিস্তান আমলেও ব্যস্ততা ছিল কর্মরত চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের। ছিল স্থানীয় বাসিন্দা ও আশপাশের গ্রামের মানুষের চিকিৎসা সেবা নেওয়ার আনাগোনা।

কিন্তু সময়ের ব্যবধামে সাধারণ মানুষের রোগমুক্তিতে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বর্তমানে নিজেই রোগাক্রান্ত হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে রয়েছে। নেই চিকিৎসা সেবার কোনো চিহ্ন। পড়ে আছে টিনসেটের তৈরি ঘরটি, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায়। এদিকে একটি চক্র হাসপাতালের জায়গাটি দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। ফলে স্থানীয় এলাকাবাসী ও সচেতন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এমনি চিত্র দেখা গেছে প্রাচীনতার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজারের পরিত্যক্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি।

নদী বন্দর হিসেবে পরিচিত সাচনা বাজার শহীদ মিনার এলাকায় দখলে, দূষণে শতবর্ষি এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির অবস্থান।

পশ্চিম পাড়ে জামালগঞ্জ আর পূর্ব পাড়ে সাচনা বাজারের মধ্যে সুরমা নদী পৃথক করেছে। আর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেক সাচনা বাজার অংশে। এই অংশে জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে পুরোনো জরাজীর্ণ এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সংস্কার করে চিকিৎসা সেবা চালু রাখার পাশাপাশি ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল করার দাবি জানিয়েছেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।

সেবা আর ঐতিহ্যে গর্বিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে দেখা যায়, টিনসেড পুরনো ছালের টিন ভেঙে পড়ছে। আর ভেতরে বাসা বেঁধেছে পাখি আর কীটপতঙ্গ। ময়লা আবর্জনায় ভরপুর চারপাশ।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কামলাবাজ মৌজার জেএল নং-১৮,৭৪৮৬নং দাগে ৪৬ শতক ভূমির ওপর ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়লেও সর্বশেষ অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় অবৈধ দখলমুক্ত করে সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়। তারপরও দখল, দূষণমুক্ত হতে পারছে না শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই হাসপাতালটি। পাকিস্তান আমলে উপজেলার সাচনা বাজারে সরকারি হাসপাতাল বলতে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিই ছিল একমাত্র ভরসা।

এখানেই এসেই চিকিৎসা সেবা নিতেন সাচনা, জামালগঞ্জ, বেহেলী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষজন। জ্বর, আমাশয়, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগীদের চিকিৎসা দিতেন ডাক্তার, কম্পাউন্ডারসহ কর্মচারীরা ছিল তাদের ব্যস্ততা।

তবে তখনকার সময়ে ওষুধ বলতে বোতলে মিকচার পানি দিয়ে কাগজে দাগ দিয়ে বোতলে লাগিয়ে দেয়া হত। সেই দাগ অনুযায়ী খেতেন রোগীরা। ৮০ দশকে সাচনা বাজারে হাসপাতাল স্থাপনের জন্য উপযুক্ত জায়গা না থাকায় জামালগঞ্জে ৩০ শয্যার হাসপাতাল কমপ্লেক্সের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৫ সালে। এরপর এখানে স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু থাকলেও একপর্যায়ে চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর থেকে সাচনা, জামালগঞ্জ, বেহেলী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষজন চিকিৎসা সংকটে পড়ে যায়। জরুরি ভিত্তিত্বে গর্ভবতী মায়ের ডেলিভারিতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন তিনটি ইউনিয়ন লক্ষাধিক মানুষ। শুধু তাই নয় সুরমা নদীর পাড় হতে গিয়ে নৌকায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু হলে এই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার বলার পরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না অভিযোগ রয়েছে।

এলাকার স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ শফিক মিয়া, আব্দুল লতিফসহ অনেকেই জানান, সাচনা বাজারের পুরোনো এই হাসপাতালটি ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুরূহ থাকায় মানুষের রোগমুক্তির অন্যতম ভরসাস্থল ছিল সেটি। সেখানে একজন এলএমএফ ডাক্তার ও দুজন কম্পাউন্ডারসহ ৩ জন ডাক্তার কর্মচারী চিকিৎসা সেবা পরিচালনা করতেন। জামালগঞ্জ উপজেলার তিন ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে নিশ্চয়ই আন্তরিক হবেন সরকারের দায়িত্বশীলরা।

জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ জানান, জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আমার বাবা ইউসুফ আল আজাদ মন্ত্রী, এমপিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য লিখিতভাবে বলেছেন। এই লিখিত আবেদন স্বাক্ষর করে সুপারিশও করেছেন বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য কিন্তু কোনো কাজ হয়নি আজও। সাচনা বাজার ইউনিয়ন, বেহেলী ইউনিয়ন ও উত্তর ইউনিয়নসহ ৩টি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ এই হাসপাতালটি চালু হলে যেন স্বাস্থ্য সেবা ও ভালো চিকিৎসা পান এ ব্যাপারে আমিও চেষ্টায় আছি। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করছি, আবেদন দিয়েছি উনারা শুধু আশ্বস্ত করেছেন।

জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন আলমগীর বলেন, উপজেলার পরিতাক্ত উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি অবকাঠামো মেরামত করে ডাক্তার, সেবিকা, স্টাফ নিয়োগ দিলেই এখানে ডেলিভারি সার্ভিসসহ বর্হিঃবিভাগ চালু করা যায়। এতে উপকৃত হবে এলাকাবাসী। আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত আছে।

সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. আহমেদ হোসেন বলেন, ছোট পরিসরে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র চালু করার জন্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নিয়ে বসে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

(ঢাকাটাইমস/২২মে/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :