আশুলিয়ায় ক্লুলেস বিমল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের কথা জানাল পিবিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৫ জুন ২০২৩, ১৫:৩৭ | প্রকাশিত : ২৫ জুন ২০২৩, ১৫:৩৩

সিগারেটের সূত্র ধরে ঢাকার আশুলিয়ায় চাঞ্চল্যকর বিমলচন্দ্র হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করার তথ্য জানাল পুলিশ ব্যুরো ইনভেটিগেশন—পিবিআই। সংস্থাটি বলছে, বিদেশে যাওয়ার টাকা জোগাড় করতে বিমল চন্দ্রকে নৃসংসভাবে হত্যা করেন মো. হাফেজ।

হত্যার পর বিমলের বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া হাফেজকে গত বৃহস্পতিবার বিকালে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

পিবিআই ঢাকা জেলার বিশেষ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। ঢাকার ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে এ সংবাদ সম্মেলন করে।

পিবিআই জানায়, পরিবারের সাথে আশুলিয়ার জামগড়া মনির মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন হত্যাকাণ্ডের শিকার বিমল চন্দ্র মন্ডল। শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় তিনি সব সময় বাসায় থাকতেন। তার স্ত্রী পারুল আর মেয়ে পূর্ণিমা রানী মন্ডল জীবিকার তাগিদে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল প্রতিদিনের মতো বিমলের স্ত্রী এবং মেয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে চলে যায়। তখন বিমল চন্দ্র বাসায় একাই ছিলেন। ওইদিন ডিউটি শেষে বিকাল সাড়ে চারটার দিকে মেয়ে পূর্ণিমা রানী মন্ডল বাসায় গিয়ে বাবা বিমল চন্দ্রের মুখে কাপড় কাটার কেচি ঢুকানো অবস্থায় দেখতে পান। পরে তার চিৎকার চেঁচামেতিতে আশ-পাশের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে বিমল চন্দ্রকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। তখন বিষয়টি মোবাইল ফোনে মাকে জানান পূর্ণিমা। এ ঘটনায় নিহত বিমলের স্ত্রী পারুল ১৭ এপ্রিল বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। আশুলিয়া থানার মামলা নম্বর-৪৪। আশুলিয়া থানা পুলিশ ১৭ এপ্রিল থেকে ৪ জুন পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করে। পরে ৪ জুন পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার নেয়। এরপর মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।

পিবিআইয়ের ভাষ্য, তদন্তভার নেওয়ার ২০ দিনের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে পিবিআই ঢাকার একটি চৌকষ টিম হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করেন।

ভুক্তভোগীর পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, এ হত্যাকান্ড ঘটনার অনুমান ছয় মাস আগে বিমল চন্দ্র মন্ডল স্ট্রোক করেন। তখন থেকে তিনি ধুমপান ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু হত্যাকান্ড ঘটনার দিন বাসায় ডার্বি সিগারেটের দুটির অবশিষ্ট অংশ পাওয়া যায়। আর এ সিগারেটের শেষাংশের সূত্র ধরেই তদন্ত অগ্রসর হতে থাকে। বেশ কয়েকজনকে সন্দেহের তালিকায় আনা হয়। তার মধ্যে মো. হাফেজকে সন্দেহের তালিকায় ১ নম্বরে রেখে তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া শুরু হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে তদন্ত টিম তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২২ জুন বিকাল ৫ টা ১০ মিনিটে মো. হাফেজকে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত হাফিজ জানায় যে, নিহত বিমলের স্ত্রী পারুল আর হাফিজের স্ত্রী একই পোশাক তৈরির কারখানায় চাকরি করেন। একই কারখানায় চাকরি করার সুবাদে এবং একই এলাকায় পাশাপাশি বসবাস করতেন। হাফেজ মাঝে মধ্যেই বিমলের বাসায় যাতায়াত করতেন। ঘটনার দিন ১৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে সাতটার সময় হাফেজ বিমলের বাসায় যান। ওই বাসার লোকজন সকলে কাজে চলে যাওয়ায় বাসা ফাঁকা ছিলো। তখন হাফেজ ও বিমল এক সাথে টিভি দেখে এবং খাওয়া-দাওয়া করেন। পরে হাফেজ ভুক্তভোগী বিমলকে দিয়ে ডার্বি সিগারেট নিয়ে আসার জন্য বাসার নিচে দোকানে পাঠান। ওই সময়ে আসামি হাফেজ বিমলের স্ত্রীর বউয়ের অলংকার ও টাকা পয়সা খোঁজাখুজি করতে থাকে। ইতোমধ্যে বিমল সিগারেট নিয়ে বাসায় চলে আসেন। তখন তিনি দেখেন যে, হাফেজ ঘর অগোছালো করে কি যেন খোঁজাখুজি করছে। চুরির বিষয়টি বিমল দেখে ফেলায় হাফেজ টেবিলে থাকা কাপড় কাটার কেঁচি দিয়ে প্রথমে বিমলের গলায় ডান পাশে পোঁচ দেয় এবং পরে কেঁচি তার মুখে ঢুকিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর বাসা থেকে একজোড়া স্বর্ণের বাঁধানো শাখা, দুই জোড়া কানের দুল এবং দুই জোড়া চুড়িসহ আলমারীতে থাকা নগদ ৯ হাজার ৫২০ টাকা নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। মূলত হাফেজ বিদেশে যাওয়ার টাকা জোগাড় করতেই বিমলকে হত্যা করে। গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে তিনি আদালতে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।

আরও পড়ুন: মানিকগঞ্জে বেশি দামে মসলা বেচায় চার দোকানে জরিমানা

গ্রেপ্তারকৃত মো. হাফেজ টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানার দড়িসাড়া গ্রামের মৃত আব্দুন ছাত্তার মন্ডলের ছেলে। তিনি ঢাকার আশুলিয়া থানার জামগড়া মনির মার্কেট এলাকায় ভাড়া থাকতেন।

(ঢাকাটাইমস/২৫জুন/এএ/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :