অবশেষে মুক্তি পেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহা

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ০৩ জুলাই ২০২৩, ০৮:৩৭
অ- অ+

দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহা অবশেষে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ফাঁসির দণ্ড রহিত হওয়ার পর তিনি যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করেন। পাঁচ বছর ৭ মাস সাজা রেয়াত পাওয়ায় দীর্ঘ ২৪ বছরের কারা জীবনের অবসান হলো এ মুক্তিযোদ্ধার। রবিবার দুপুরে কুমিল্লা কারাগার থেকে তিনি মুক্তি লাভ করেন।

জানা যায়, উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে ১৯৯৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী দীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগে রাখাল চন্দ্র নাহা ও তার ভাই নেপাল চন্দ্র নাহার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহতের ছেলে নিখিল চন্দ্র। হত্যা মামলা দায়ের করার পর ওইদিনই সন্ধ্যায় দেবিদ্বার থানা পুলিশ স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাখাল চন্দ্র নাহাকে গ্রেপ্তার করে। নেপাল চন্দ্র নাহা পলাতক অবস্থায় মারা যান। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ রাখাল চন্দ্র ও তার ভাই নেপাল চন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলে ২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম আদালত) খান আবদুল মান্নান বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্রকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এর পর ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাখাল চন্দ্র নাহার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে ৩ এপ্রিল কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পায় পরিবার। পরের দিন ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংগঠনের পক্ষ থেকে দেবিদ্বারে এবং ৫ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ফাঁসির দণ্ড রহিত করার জন্য দাবি জানানো হয়। এ আন্দোলনে যোগ দেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও। পরের দিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ‘মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি কাল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি রাষ্ট্রপতিকে এ বীর মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসির দণ্ড মওকুফ করার জন্য অনুরোধ করেন। ফাঁসি সম্পন্ন হওয়ার কয়েক ঘণ্ট আগে রাষ্ট্রপতি তা রহিত করেন। ২৫ জুন রাষ্ট্রপতি তার মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করেন।

গতকাল কুমিল্লা কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় অভ্যর্থনা জানান ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির, কুমিল্লা জেলা সভাপতি এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তরিকুর রহমান জুয়েল, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নয়ন, প্রচার সম্পাদক শাহ পরান সিদ্দিকী তারেক প্রমুখ।

এ সময় মুক্তিপ্রাপ্ত রাখাল চন্দ্র নাহা তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ডে তিনি বলেন, ‘ফাঁসি নিশ্চিত জেনে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। সাংবাদিক সমাজ, আমরা মুক্তযোদ্ধার সন্তান এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর চেষ্টায় আমার ফাঁসি মাফ হয়, আমি নবজীবন লাভ করি। একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য মানুষের ভালবাসা দেখে আমি এটাই বুঝেছি যে, ৭১ এ যুদ্ধে গিয়ে ভুল করিনি।’

আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’র কেন্দ্রীয় সভাপতি হুমায়ূন কবির বলেন, ‘স্বাধীন দেশে একজন নিরপরাধ মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি মেনে নিতে পারিনি বলেই আমরা আন্দোলনে নেমেছিলাম। আজ সেই আন্দোলন পূর্ণতা পেল। আমারা এখন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহার সুচিকিৎসা এবং পুনর্বাসন চাই।’

(ঢাকাটাইমস/০৩জুলাই/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ওপারে কারফিউ, সুনামগঞ্জের ১২ কিলোমিটার সীমান্তে বিজিবির সতর্ক অবস্থান
খালিশপুরে শহীদ মিনারের জমি দখলের ভিডিও করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণায় শাহবাগে ছাত্র-জনতার উল্লাস
৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা