গোয়েন্দা পুলিশ মহিলা দলের নেত্রীদের মামলা করার পরামর্শ দেয় কিনা দেখব: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১৯:৪৯

বিএনপির নারী নেত্রীদের নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ‘কুরুচিপূর্ণ ও বিতর্কিত’ বক্তব্যের বিষয় উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এখন দেখি, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মহিলা দলের নেত্রীদেরকে মানহানি মামলা করার পরামর্শ দেয় কিনা হাছান মাহমুদের বিরুদ্ধে।’

রবিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এসব বলেন। বিএনপির নারী নেত্রীদের নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কুরুচিপূর্ণ ও বিতর্কিত বক্তব্যের প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি।

রিজভী বলেছেন, কোনো মামলা করতে চাইলে থানায় অথবা কোর্ট যেতে হয়। কিন্তু কয়েকদিন আগে দেখলাম, গাড়ি বহর নিয়ে অভিযোগ দিতে গেল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বললেন, এটা দিতেই পারে আমাদের কাছে। পরে দেখলাম মানহানি মামলা। এখন আমি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে বলতে চাই, মহিলা দলের নেত্রীদেরকে নিয়ে এত বড় মানহানিকর অশ্লীল বক্তব্য দিয়েছেন হাছান মাহমুদ। এখন দেখি, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মহিলা দলের নেত্রীদেরকে আহ্বান করে কি না! মানহানি মামলা করার পরামর্শ দেয় কিনা!

রিজভী বলেন, দেশটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে, মা বোন স্ত্রী কন্যাদেরকে নিয়ে বসবাস করার মতো আর অবস্থা নেই। এই দেশে যারা নিজেদের মন্ত্রী বলে দাবি করে, তারা লাগামহীন। তারা জানে, তাদেরকে ভোট করতে হবে না। সুষ্ঠু ভোটের দরকার নেই। জনগণের কাছে যেতে হবে না। তাই যা ইচ্ছা তাই তারা করছে, যা ইচ্ছা তাই তারা বলছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ওরা (আওয়ামী লীগ) ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে, চৌধুরী আলমকে গুম করেছে, হুমায়ুন পারভেজ, সুমন, জাকিরকে গুম করেছে। গুম করতে করতে ওরা এখন নারী সমাজের ইজ্জতকে গুম করা শুরু করেছে। আজ নারী সমাজ বাংলাদেশে নিরাপদ নয়।

তথ্যমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘হাছান মাহমুদ প্রতিনিয়ত মিথ্যা কথা বলছেন। তারপরও ভেবেছি নামের আগে ডক্টরেট লেখা আছে। তাই নারীদের নিয়ে অশ্লীল কথা বলবে না। কিন্তু না, যাদের সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য নারীকে অপমান করার তাদের মধ্য থেকে যে নেতাই হোক না কেন, আর যতই ডক্টরেট ডিগ্রি থাকুক না কেন তারা ওই একই সংস্কৃতির। আওয়ামী ইতর সংস্কৃতির এরা পৃষ্ঠপোষক। এই জন্য তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। যা ইচ্ছা তাই বলতে পারে। ছিঃ হাছান মাহমুদ ছিঃ’

রিজভী বলেন, আপনি (হাছান মাহমুদ) চরিত্রহনের কথা যে বলতে পারেন, এটাই স্বাভাবিক। আপনার দলের সাংস্কৃতি তো তাই। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীকে যখন হত্যা করা হলো তখন সাংবাদিকরা স্বোচ্চার, রাজনৈতিক দলগুলো যখন স্বোচ্চার, নাগরিকরা যখন স্বোচ্চার তখন প্রধানমন্ত্রী রেগে গিয়ে বলেছিলেন, আমি কি তাদের বেডরুমে পাহারা দিব? এই অশ্লীলতা আপনার একার নয়। আপনার মন্ত্রী নেতাকর্মী সবারই একই রুচি। একই রুচির বিকৃতি আপনাদের। এর চেয়ে অন্য কিছু আপনাদের কাছে আশা করা যায় না।

রিজভী বলেন, হাছান মাহমুদকে নিয়ে আমার দলের মহিলা দলের নেত্রীরা অনেক মন্তব্য করলেও অশ্লীল মন্তব্য কেউ কখনো করে না। কিন্তু আপনার দলের সিনিয়র একজন নেত্রী সাজেদা চৌধুরী আপনাকে কি বলেছিল? এটা কি আপনার মনে আছে? হাছান মাহমুদ এর উদ্দেশ্য করে তিনি বেয়াদব শব্দটা উচ্চারণ করেছিলেন। সুতরাং আপনার কাছ থেকে সভ্যতা শৃঙ্খলা জনগণ আশা করতে পারে না। আওয়ামী লীগের কাছ থেকেও জনগণ কখনো সভ্যতা শৃঙ্খলা আশা করা না।

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, আপনাদের (আওয়ামী লীগ) অনেক সভা সমাবেশ থেকে নেতাকর্মীদের অশ্লীল বক্তব্য শুনেছি। আপনারা কাউকে পরোয়া করেন না। কারণ আপনারা মনে করেন রাষ্ট্র আমাদের, ক্ষমতা আমাদের। আমরা যা বলব, যা করব জনগণ বিশ্বাস করবে। আর জনগণ বিশ্বাস না করলেও কিছু যায় আসে না। আমরা কাউকে পরোয়া করি না। কিসের বিরোধী দল, কিসের বিএনপি, কিসের মহিলা দল, মহিলা নেত্রী। আমরা যা ইচ্ছা তাই করব। এই ধরনের অহংকার আপনাদের পেয়ে বসেছে। সুতরাং যাদের অহংকার হয় তাদের পতন অত্যন্ত তাড়াতাড়ি হয়। যে কোনো মুহূর্তে আমরা আপনাদের পতনের আওয়াজ শুনতে পাবো। পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী থেকে ইতিমধ্যে আওয়াজ উঠা শুরু করেছে আপনাদের পতনের।

তথ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, আপনি (হাছান মাহমুদ) যে অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন মহিলা নেত্রীদেরকে নিয়ে, এটা চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ। এখানে অনেক মহিলা নেত্রীরা তার পদত্যাগ ত্যাগ দাবি করেছে। তার পদত্যাগের কি আছে? আগামীতে দেখবেন শেখ হাসিনা তার প্রমোশন দিয়েছে। আওয়ামী লীগের কোন নেতা যদি বিএনপিকে নিয়ে অশ্লীল কঠোর সমালোচনা করে তাকে প্রমোশন দেওয়া হয়। এটা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য, ইতিহাস।

মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কুরুচিপূর্ণ ও বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে একটি ঝাড়ু মিছিল পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে ফের নয়াপল্টনের সামনে এসে মন্ত্রীর কুশপুত্তুলিকা দাহ’র মাধ্যমে শেষ হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/জেবি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :