পাহাড়ে আমের বাম্পার ফলন, চাষির মুখে হাসি
টসটসে রসালো। দেখতে যেমন আকর্ষণীয়। ঠিক তেমনি খেতেও মজাদার। এমন আমের বাম্পার ফলন হয়েছে পাহাড়ে। এবারও বান্দরবানের পাহাড়ে পাহাড়ে নানা প্রজাতির আমের ব্যাপক ফলন হয়েছে। পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার চলতি মৌসুমেও পাহাড়ের নানাস্থানে আম্রপালি, রাংগৈ এবং স্থানীয় জাতের আমের বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে।
এবার বান্দরবান জেলা সদর, রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলার নানাস্থানে চলতি মৌসুমেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাগানে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে।
জেলার আমচাষিরা জানান, জেলায় উৎপাদিত কাঁচা ও পাকা আমের চাহিদা রয়েছে সারা দেশেই। বিষমুক্ত এ সব আম পাইকারি ব্যবসায়ীরা আগাম অর্থ দিয়েই কিনে নিচ্ছেন। এখন আম সংগ্রহ ও বিক্রির ভরা মৌসুম। কেবল জেলা সদরের ফারুকমুনপাড়া, কেৎসিমানি পাড়া, সারণপাড়া, লাইমীপাড়া ও চিম্বুক এলাকা থেকে প্রতিদিনই ২০ থেকে ২৫ ট্রাক আম সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
বান্দরবান-রুমা ও থানচি সড়কের দুইপাশে এবং পাহাড়ের পাদদেশে শত শত একর পাহাড়ি জমিতে সৃজিত বাগান থেকে আম সংগ্রহ করার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বম, মারমা, ম্রো ও তনচংগ্যা চাষিরা। তারা প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ আম জেলার বাইরে সরবরাহ করা ছাড়াও স্থানীয়ভাবে তা সংরক্ষণ করছেন। সুবিধামতো সময়ে সংরক্ষণ করা আম জেলার বাইরে সরবরাহ করা হচ্ছে নিয়মিত।
গেৎসিমানি পাড়ার আমচাষি ও ইউপি সদস্য লাল হাই বম জানান, এবার বাগানে বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে রাংগৈ ও আম্রপালি আমের। জেলা সদর থেকে ১২ মাইল দীর্ঘ প্রধান সড়কজুড়েই দুইপাশের শত শত বাগানে এবার বিপুল পরিমাণ আমের ফলন হয়েছে। বাগান থেকে আমসংগ্রহের কাজে এ সব এলাকায় প্রায় ১ হাজার একর পাহাড়ি জমিতে হাজারও চাষি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
রুমা উপজেলার মিরজিরির আমচাষি চিংপ্রু মারমা জানান, তার বাগানেও এবার আমের বিপুল ফলন হয়েছে। পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের কাছ থেকে তারা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন।
থানচি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং আদর্শ আমচাষি খামলাই ম্রো জানান, তার নিজের আম বাগানে বিপুল পরিমাণ রাংগৈ এবং আম্রপালি আমের ফলন হয়েছে। কাঁচা আম প্রতিমণ ১২০০ টাকা এবং পাকা আম প্রতিমণ ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার তিনি বাগান থেকে উৎপাদিত আম বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা আয় করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নিজেদের উদ্যোগ ছাড়াও পার্বত্য জেলা পরিষদের সহায়তায় সাতটি উপজেলায় চার হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে আম্রপালি ও রাংগৈ আম, সাত হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে নানাপ্রজাতির কলা, ছয় হাজার ৫ হেক্টর জমিতে পেঁপে, চার হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে আনারস, তিন হাজার হেক্টর জমিতে কাঁঠাল, দুই হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে কমলা, এক হাজার ১০ হেক্টর জমিতে লিচু, ১৪ হাজার ৬৪১ হেক্টর জমিতে অন্যান্য মৌসুমি ফলের চাষ হয়েছে।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন জানান, জেলায় মারমা, ম্রো ও বম আদিবাসীদের মিশ্র ফলচাষ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে তাদের জীবনমানও উন্নতি হচ্ছে। জেলার পাহাড়ি মাটি আমসহ ফলদ উৎপাদনে খুবই উপযোগী এবং পরিবেশবান্ধব। অধিকতর লাভজনক হওয়ায় জুমচাষ ছেড়ে অনেকেই আমচাষে ঝুঁকছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে আমচাষিসহ ফলদ চাষিদের টেকসই আবাদসহ কৃষি-খামার গড়ে তোলার বিষয়ে সাধ্যমতো সাধারণ ও বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে।
(ঢাকা টাইমস/১৯মে/এসএ)
মন্তব্য করুন