ত্রিশালে হাজারো মাছ শিকারির 'হাইত' উৎসব

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৮ | প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৭

সকাল হতে না হতেই আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে জড়ো হতে থাকে কেচুরি বিলে। কারো হাতে পলো আবার কারো হাতে বিভিন্ন ধরনের জাল। শিশির ভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে গ্রামের মেঠোপথ বেয়ে তারা কয়েক কিলোমিটার দূরের পথ পায়ে হেঁটে দলবেঁধে পৌঁছাতে থাকে বিলে। এসময় শৌখিন মাছ শিকারিরা মাছ ধরতে ঝাঁপিয়ে পড়েন বিলের পানিতে।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের খাগাটি গ্রামের ঐতিহ্যবাহী 'কেচুরি বিলে' বৃহস্পতিবার 'হাইত উৎসব' উৎসব হয়। এতে কয়েক হাজার শৌখিন মাছ শিকারি অংশগ্রহণ করে।

অনেক বছর আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়ে বর্ষা শেষে যখন পানি কমতে থাকে, তখন থেকেই শুরু হয় 'মাছ ধরার' উৎসব। তবে দখল-দূষণে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ কমে যাওয়ায় এ উৎসব এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। বহু বছর পর এই কেচুরি বিলে এই আয়োজনটি ঘোষণা দিয়ে পালন করা হয়। মাছ ধরার উৎসব হবে এই খবর আগেই মাইকিং করা হয় বিভিন্ন এলাকায়। বিষয়টি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেনে ও মাইকিং শুনে মানুষ আসেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোক জড়ো হন মাছ ধরতে। গ্রামীণ মাছ ধরার উৎসব দিনদিন কমে আসায় এ উৎসব দেখতে ও মাছ ধরতে ভিড় করেন বিভিন্ন উপজেলার উৎসুক মানুষও। মাছ ধরা দেখে আনন্দ পান অনেকে। থেমে থেমে হইহুল্লোড়ে মেতে ওঠেন উৎসবে মাছধরা মানুষ।

স্থানীয়রা বলছেন, বিলটিতে অন্তত কোটি টাকার মাছ ছিলো। বোয়াল, রুই, কাতলা, পাঙাশ, শোলসহ বিভিন্ন দেশি প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে বিল থেকে। বিলে প্রায় ৫০ টি নির্দিষ্ট মালিকানাধীন মান্দা (মাছের ঘের) ছিল। এগুলোতে তারা বিভিন্ন গাছের গুড়ি, বাঁশ ও ঝোপঝাড় ফেলে মাছের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে তৈরি করে রেখেছিল। পানে কমে এলেই পাড় আটকিয়ে তারা এখান থেকে মাছ ধরতো। চোখের সামনে সেই সম্ভাবনা ধুলিস্যাত হতে দেখেও তাদের কিছুই করার ছিল না। তবে তারা বারবার মাছ শিকারিদের অনুনয়, বিনয় করছিল যেন তাদের মান্দাগুলো থেকে মাছ শিকার না করা হয়। তবে হাজারো মাছ শিকারির মধ্যে কে শুনে কার কথা।

মান্দার মালিক শাহাবুদ্দিন, কবির ও আরও কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, 'এই বিলটি প্রায় তিনশত একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত। এখানে প্রায় ৫০টি মালিকানাধীন মান্দা রয়েছে। আমরা প্রতিবছর এগুলো থেকে কিছু মাছ মেরে ছেলেমেয়ে ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে নিয়ে খাই। এবার আমাদের ধানক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এগুলোই আমাদের চলার মতো সম্পদ ছিল। কেউ শুনলো না কথা।'

ছমেদ মিয়া নামে আরেক মান্দার মালিক বলেন, 'আর কোনদিন এমন হয়নি। এবার আমাদের সাথে শত্রুতা করে কয়েকজন এ কাজ করেছে। তারা মাছ ধরার উৎসবের কথা জানিয়ে প্রচার চালিয়েছে। আমি ১০ হাজার টাকার বাশ কিনে মান্দাতে দিয়েছিলাম। আমার সব শেষ। আল্লাহই বিচার করবো।'

রাইমনি গ্রামের বাসিন্দা রুবেল মিয়া বলেন, 'এবার অতিবৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন ফিসারি থেকে শতশত কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ায় প্রচুর মাছ পাওয়ার আশায় হাজার হাজার মাছ শিকারির আগমন ঘটেছে। আশেপাশের উপজেলা ফুলবাড়িয়া, ভালুকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লোকজন এই মহামিলন মেলায় আনন্দ উৎসবে মেতে থাকে।'

কলেজছাত্র রফিক বলেন, 'এই বিলে এত মানুষকে একসঙ্গে মাছ ধরতে আগে কখনো দেখিনি। তবে কিছু মাছ ধরা পড়লেও তা আশানুরূপ হয়নি।'

পার্শ্ববর্তী উপজেলা ফুলবাড়িয়া থেকে আসা নয়ন মন্ডল বলেন, 'কোথাও মাছ ধরার কথা শুনলে স্থির থাকতে পারিনা। একটি বোয়াল ও সিলবার মাছ পেয়েছি। তবে মাছ বেশি না পেলেও অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি। হাজার হাজার লোকের সাথে মাছ ধরার আনন্দটাই অন্যরকম।'

(ঢাকা টাইমস/১০নভেম্বর/প্রতিনিধি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :