ইন্ডিয়া না ভারত : কোথা থেকে এল

শাব্বির আহম্মদ
| আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ | প্রকাশিত : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইন্দোনেশিয়া সফরের সরকারি কাগজপত্রে লিখেছেন- "Prime Minister of Bharat" প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত। আবার রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মুর জি-টুয়েন্টি সম্মেলনের অতিথিদের দেয়া নৈশভোজের আমন্ত্রণে লেখা-"President of Bharat" প্রেসিডেন্ট অফ ভারত। ভারতের ইংরেজি নাম India। তাহলে ভারত লেখা হলো কেন? এটা কি ক্ষমতাসীন বিজেপি’র জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ধারায় চলা নাম বদলের পালার অংশ?

বিজেপি নেতারা ইন্ডিয়া নামটি উপনিবেশিক এ মর্মে তার পরিবর্তে ভারত নামকরণের দাবি জানিয়েছেন। আর আইন অনুযায়ী তাদের এ দাবীকে অযৌক্তিকও বলা যায় না। কারণ ভারতের সংবিধানে ভারত ও ইন্ডিয়া দুটি নামই উল্লেখ আছে। সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ”India,that is Bharat, shall be a union of states".

ইতিহাসের নানা কাল পর্বে ভারতের বিভিন্ন রকম নামকরণ হয়েছে। মহাভারতের আদি পর্বের বর্ণনা অনুযায়ী রাজা দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার ছেলে ভরত। যার বিষয়ে ঋষি কম্ব আশীর্বাদ করেছিলেন সে হবে চক্রবর্তী সম্রাট। অর্থাৎ চতুর্দিকের সম্রাট। আর তার ভূখণ্ডের নাম হবে ভারত। পুরান গ্রন্থগুলোতে ভারতের সীমানা বা অবস্থানও বলা আছে আসমুদ্রহিমাচল ব্যাপী যে ভূখণ্ড তাই ভারত। বিষ্ণুপুরাণে বলা হয়েছে “উত্তরং সৎ সমুদ্রস্য হিমাদ্রে শ্চৈব দক্ষিণম্ বর্ষং তদভারতং নাম ভারতীযত্র সন্ততি”।অর্থাৎ সমুদ্রের উত্তরে এবং হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত অঞ্চলের নাম হল ভারত, যেখানে ভারতের সন্ততিরা বসবাস করে।বর্ষ শব্দের অর্থ অঞ্চল। এজন্য মহাভারতে ভরত রাজাকে দেওয়া অঞ্চলকে ভারতবর্ষ বলা হয়েছে। যাহোক এ থেকে বোঝা যায় যে দক্ষিণের ভারত মহাসাগর আর উত্তরের হিমালয় পর্বতমালার মাঝের অঞ্চল সমূহই ভারতবর্ষ। ভারতকে প্রাচীনকালে নানা নামে ডাকা হয়েছে হিমবর্ষ, আর্যাবর্ত,মেলুহা,জম্বুদীপ হিন্দ্ ইন্দাস কত কী।

হাজার হাজার বছর পূর্বেই পারস্য ও মিশরীয় সভ্যতার লোকদের সাথে ভারতীয়দের ব্যবসায়িক সংযোগ ঘটেছিল। পার্শিয়ানদের উচ্চারণের সীমাবদ্ধতার কারণে সিন্ধুর নাম হয়ে যায় হিন্দ বা হিন্দু। পারস্যবাসীর কাছে সিন্ধু নদীর অববাহিকায় যে দেশ তার নাম ছিল হিন্দ আর এর অধিবাসীরা সবাই তাদের কাছে হিন্দু নামেই পরিচিত। এ থেকেই সনাতন ধর্মের নাম হিন্দু ধর্ম বলা হয়। যদিও সিন্ধু তীরবাসীর আরো অনেক ধর্ম ছিল। পারস্যবাসী অর্থাৎ ইরান দেশের মানুষ জায়গার নামের সাথে স্তান শব্দটির ব্যবহার করত । আর তা থেকে মুঘলরা ভারতকে ডাকতো হিন্দুস্তান।

ব্রিটিশরা প্রভাবিত হতো গ্রীক ও ল্যাটিনদের অনুসরণে।সে সময়ে তাদের জানাশুনা ও লেখাপড়ার প্রধান উৎস ছিল হয় গ্রীক ভাষা নয় তো ল্যাটিন ভাষা। গ্রীকরা যখন পারস্য জয় শেষে সিন্ধুতীরের ভারতভূমি জয় করল তারা পারস্যদের বলা হিন্দ’কে তাদের ভাষায় বদলে নিলো। উচ্চারণগত সীমাবদ্ধতার কারণে ইংরেজি অক্ষর H উচ্চারণ করতে পারত না বলে তারা হিন্দ্ থেকে এ এলাকার নাম বলতে শুরু করে Indus। অর্থাৎ পারস্যদের বলা হিন্দ্ গ্রীকদের কাছে হয়ে গেল Indus। সিন্ধু নদী গ্রীকদের কাছে হল Indus river।

উল্লেখ্য, গ্রিক প্রতিবেশী লাতিনরা আবার নামের সাথে সাধারণত ia ব্যবহার করত। যেমন Arab কে তারা বলতো Arabia। ল্যাটিনদের হাত ধরেও Indus শব্দটি পরবর্তীতে India হয়ে থাকতে পারে। কিংবা উচ্চারণের সুবিধার্থে ব্রিটিশরা এ দেশে এসে গ্রীক আর ল্যাটিনদের বলা Indus কে বলা শুরু করে India। মধ্যযুগের ইংরেজিতে Inde ইন্দে, প্রাক আধুনিক যুগের ইংরেজিতে Indie ইন্দিয়ে এবং ১৭ শতক থেকে ইংরেজি পুস্তক ও ম্যাপে India শব্দটি দেখা যায়। ভারত নামটির উৎস ভারতের প্রাচীনকালের গ্রন্থসমূহ আর ইন্ডিয়া নামটির উৎস হলো পারস্যদের বলা হিন্দ থেকে গ্রীকদের বলা Indus ইংরেজদের মুখে তা India.

(ঢাকাটাইমস/০৩ ডিসেম্বর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :