আড়াই বছর দুশ্চিন্তার জীবন, চাকরি ফেরত চেয়ে আবারো দুদকে আবেদন শরীফের
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাকরিচ্যুত উপ সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন তার চাকরি ফিরে পেতে আবারো আবেদন করেছেন। গত ৭ আগস্ট কমিশন সচিব বরাবর তিনি এ আবেদন করেন। শরীফ উদ্দিন নিজেই ঢাকা টাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে অপসারণের আগে পর্যন্ত কি কি করেছি তা তুলে ধরেছি আবেদনে। সেগুলি বিবেচনায় নিয়ে আমাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখার সুযোগ দানের জন্য আবেদন করেছি।’
২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করে দুদক। ২০০৮ সালের দুদক (কর্মচারী) বিধিমালার ৫৪ (২) বিধি অনুযায়ী তাকে অপসারণ করা হয় বলে সেসময় দুদক থেকে জানানো হয়েছিল।
দুদকের ওই আদেশের পর থেকে বিভিন্ন মহলে এ ঘটনা আলোচনার জন্ম দেয়। এমনকি শরীফকে অপসারণের আদেশ প্রত্যাহার ও ৫৪(২) বিধি বাতিলের দাবিতে তার সহকর্মীরাও দুদকের প্রধান কার্যালয়সহ সংস্থার অন্যান্য দপ্তরে মানববন্ধনও করেন।
শরীফ বলছেন, তাকে চাকরি থেকে অপসারণের পর আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে তিনি নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বেশ কয়েকটি দুর্নীতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তার প্রাণনাশের হুমকি তৈরি হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
চাকরি ফেরত চেয়ে করা আবেদনে শরীফ এ বিষয়গুলো বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘উপসহকারী পরিচালক হিসেবে ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭ বছর ৪ মাস দুদকে কাজ করেছি। কর্মকালীন এসময়ে দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অনেক দুর্নীতির বিষয় তদন্ত করেছি।’
‘যেমন কক্সবাজার এলএ শাখার সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার দুর্নীতিতে ১৫৫ জনকে অভিযোগপত্রভুক্ত করে আসামি করার সুপারিশ করেছিলাম।... এই দুর্নীতির তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে ওই এলাকার অন্যতম কুশীলব সাবেক সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ আমাকে চাকরি থেকে অপসারণে কমিশনকে বাধ্য করেছিল।’
আবেদনে শরীফ আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা এনআইডি ও পাসপোর্ট সিরিজের ২০টি মামলায় আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনায়, তাদের সংঘবদ্ধ চক্রের নিকট হয়রানির শিকার হচ্ছি। কেজিডিসিএলের সাবেক এমডি, শেখ রেহানা ও নসরুল হামিদ বিপুর অর্থের জোগানদাতা আইয়ুব খান চৌধুরীর গংদের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতি, পদোন্নতি, গ্যাস পুনসংযোগের বিভিন্ন মামলায় রিপোর্ট করায় নিজ বাসায় এসে হুমকির শিকার হয়েছি। থানায় জিডি করলেও কোনও প্রতিকার পাইনি।’
‘গ্যাস সংযোগ দুর্নীতিতে সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদককে আইনের আওতায় আনায় তার মালিকানাধীন মিডিয়া ও বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। চট্টগ্রাম বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ও স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৫টি মামলার রুজুর সুপারিশ করায় ব্যাপক হুমকির সম্মুখীন হয়েছি।’
শরীফ বলেন, ‘উক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনায় না এনে দুদক বর্ণিত অভিযুক্তগণের মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কূটকৌশলের আশ্রয়ে কোনও কারণ দর্শানো ছাড়াই আমাকে অমানবিকভাবে চাকরিচ্যুত করে। এমনকি কোর্ট হতেও যাতে ন্যায়বিচার না পাই সেজন্য উক্ত অভিযুক্তগণ সব ধরনের স্বার্থ বাস্তবায়ন করেছেন।’
আবেদনে দুদকের এই অপসারিত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, চাকরি হারিয়ে ভাইয়ের কনফেকশনারী দোকানে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। তবে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে চাকরিকালীন তার করা বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন জেলার কোর্টে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
দুদকে তার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, নারীঘটিত কেলেঙ্কারী কিংবা মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকার মতো কোনো অভিযোগ ছিল না জানিয়ে শরীফ নবীন কর্মকর্তা হিসেবে প্রায় ৫০ এর অধিক মামলা ও ২০টির অধিক সিএস দাখিল করার তথ্যও উল্লেখ করেন আবেদনে।
শরীফ দাবি করেন, দুদকে কর্মকালীন সময় ও এর পরেও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা শারীরিক আক্রমনের শিকার হলেও অর্পিত দায়িত্ব পালনে পিছপা হননি। এমনকি তৎকালে আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আমলা ও দলটির নেতাকর্মীদের রোষানল ও অন্যায়ের শিকার হলেও মাথানত করেননি।
শরীফ ঢাকা টাইমসকে বলেন, দুদকে চাকরিরত অবস্থায় আমার সকল কর্মকান্ডকে বিবেচনায় নিয়ে পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানসহ তার চাকরি ফেরত চেয়ে আবেদন করেছি। কমিশন আমার আবেদন বিবেচনায় নেবে বলে আশা করছি।’
(ঢাকাটাইমস/২১আগস্ট/ডিএম)